খানজাহান আলী (রহ) এর মাজার সংলগ্ন দিঘীর অসুস্থ কুমিরের চিকিৎসা শুরু

0
310

স্টাফ রিপোটার,বাগেরহাট: বাগেরহাটে ঐতিহাসিক খান জাহান আলী (রহ) এর মাজার সংলগ্ন দিঘীর অসুস্থ কুমির মাদ্রাজের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। বুধবার দুপুরে বাগেরহাট জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ লুৎফর রহমানের তত্ত্বাবধায়নে দিঘীর শানবান্ধা ঘাটে (পূর্ব পাশের ঘাট) এই চিকিৎসা কাযর্ক্রম শুরু হয়। এর আগে সুন্দরবন পূর্ববন বিভাগের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবিরের পরামর্শে স্থানীয়দের সহায়তায় দিঘী থেকে কুমিরটিকে উপরে ওঠানো হয়। জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ লুৎফর রহমান এবং করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবীর কুমিরটিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেন। কুমিরটিকে সুস্থ করতে তাৎক্ষনিক ভাবে বেশ কিছু ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। পর্যবেক্ষণের জন্য কুমিরটিকে আগামী দশ দিন দিঘী সংলগ্ন একটি বাড়িতে রাখা হবে।
কুমিরকে উপরে ওঠানোর কাজে সাহসী ভূমিকা পালনকারী স্থানীয় বাসিন্দা জামাল ফকির বলেন, কুমিরটি বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। ডিসি সাহেবের নির্দেশনায় আমরা কয়েকজন মিলে খুব সতর্ক ভাবে কুমিরটিকে দড়ি দিয়ে বেধে উপরে উঠিয়েছি। এসময় করমজলের কুমির বিশেষজ্ঞ আজাদ ভাই আমাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করেছেন।
সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবীর বলেন, কুমিরটিকে উপরে উঠানোর পরে আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি। কুমিরটির চোয়ালের মাঝে যে ক্ষত ছিলো সেটি এখন নেই। তবে কুমিরটি একটি চোখে মোটেও দেখতে পাচ্ছে না। অন্য চোখটিতেও ঝাপসা দেখছে। তাই জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তার সাথে পরামর্শক্রমে দশ দিন পর্যবেক্ষণে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, কুমিরটি দেখে আমাদের কাছে মনে হয়েছে এটির বয়স অন্তত ৪০ থেকে ৫০ বছর। যার ফলে এটির ওজন অনেক বেড়ে গেছে। যা ৮০০ থেকে ৯০০ কেজির মত হবে। অপ্রয়োজনীয় চর্বি কমানোর জন্য কুমিরটিকে পরিমিত খাবার দেওয়া প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
বাগেরহাট জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ লুৎফর রহমান বলেন, কুমিরটিকে উপরে উঠানোর পরে আমরা তাৎক্ষনিক কিছু ওষুধ প্রয়োগ করেছি। কুমিরটি এখন মোটামুটি সুস্থ রয়েছে। তবে কুমিরটির চোখ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবো। এবং তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে।
খানজাহান আলী রহঃ এর মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী বলেন, মিঠা পানির কুমির খানজাহান আলীর মাজার সংলগ্ন দিঘী সহ বাগেরহাটের একটি ঐতিহ্য। বেশ কিছুদিন ধরে কুমিরটি অসুস্থ ছিলো। আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। আজকে কুমিরটির চিকিৎসা শুরু হয়েছে। আশা করি কুমিরটি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, স্থানীয় কিছু লোভী প্রকৃতির মানুষ কুমির তাদের ঘাটে রাখতে চায়। দর্শনার্থীদের কুমির দেখিয়ে অর্থ উপার্জন-ই তাদের উদ্দেশ্য। এর জন্য তারা কুমিরকে বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর খাবার দিয়ে থাকেন। বিষয়টি নজরে এনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এর আগে ১২ জুন কুমিরটি অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে প্রানি সম্পদ কর্মকর্তা কুমিরটিকে দেখতে আসলেও পানিতে থাকার কারণে চিকিৎসা দিতে পারেননি। সকলের চেষ্টায় উপরে ওঠানোর পরে কুমিরের চিকিৎসা শুরু করেছেন প্রাণিসম্পদ দপ্তর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here