তাপদাহ-দাবদাহে ‘ফিশফ্রাই’ পৃথিবী

0
283

খবর৭১ঃ
দুই বছর আগে দাবানলে পুড়ে ছাই হয়েছে পৃথিবীর ‘ফুসফুস’- আমাজন। এবার তাপদাহ-দাবদাহে পুড়ে ‘ফিশফ্রাই’ হতে চলেছে পুরো পৃথিবী।

রোববার সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান উষ্ণায়নে রীতিমতো ফিশফ্রাই হয়ে গেছে অর্ধেক পৃথিবী। উত্তর গোলার্ধ।

ছড়িয়ে পড়ছে দক্ষিণ গোলার্ধেও।’ গত মঙ্গলবার এমনই এক ‘ফিশফ্রাই’ হয়েছে কানাডার ছোট্ট শহর লেটন। কানাডার ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলমান তাপপ্রবাহে মারা গেছেন কয়েকশ মানুষ।

ব্রিটিশ কলম্বিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে ২৪০টির বেশি দাবানল। এখনো শেষ হয়নি দাবানলের আগুন। লেটনের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

অথচ এই সময়ে ওই এলাকার স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকার কথা ছিল সর্বোচ্চ ২৫ ডিগ্রি। সপ্তাহখানেক আগে থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে তাপমাত্রা বেড়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হয় সেখানে। আগুনে পুড়ে লেটনের অধিকাংশ এলাকাই ছাই হয়ে গেছে। তাপ থেকে বাঁচতে অনেকেই পালিয়ে গেছেন ওই এলাকা থেকে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা আরও বাড়ার বিষয়ে কয়েক দশক ধরেই সতর্ক করে আসছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেই বাস্তবতার প্রথম শিকার কানাডা। উত্তর গোলার্ধের আরও কয়েকটি অঞ্চলে তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে এবং জনশূন্য হতে চলেছে ওই এলাকাগুলো। বিজ্ঞানীরা বলছেন, চলতি শতকে ধরিত্রীর এই উষ্ণায়ন বাড়তে থাকবে প্রতি বছরই।

চলতি সপ্তাহে তাপের তীব্রতায় আমেরিকার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাস্তাগুলো পর্যন্ত গলে গেছে। অতিদাহ থেকে বাঁচতে ওসব অঞ্চলের বাসিন্দারা এয়ারকন্ডিশনার এবং এয়ারকুলার এমন হারে বাড়িয়েছিলেন যে, শূন্য হওয়ার হুমকিতে পড়েছে ওদের বিদ্যুৎ গ্রিড। রাশিয়ার মস্কোতে ২৩ জুন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৮ ডিগ্রি। সাইবেরিয়ার কৃষকরা চলমান তাপমাত্রা থেকে ফসল বাঁচাতে ছিলেন মরিয়া, পারেননি। ২০ জুন তাদের তাপমাত্রা ছিল সর্বোচ্চ ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আর্কটিক অঞ্চলের তাপমাত্রা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। তাপমাত্রা কাকে বলে? চলতি সপ্তাহেই তা দেখেছে ভারতও। তাপদাহে পুড়েছেন দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় কোটি মানুষ। বুধবার ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী নয়াদিল্লি এবং এর আশপাশের শহরগুলোর তাপমাত্রা স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে ৭ থেকে ১০ ডিগ্রি বেশি ছিল। রাজস্থানে বর্ষার ধীরাগমন স্থানীয় কৃষকদের জীবন করে তুলেছে বিপন্ন।

ইরাকের রাজধানী বাগদাদসহ বেশ কয়েকটি প্রদেশজুড়ে তাপমাত্রার আক্রমণে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল বৃহস্পতিবার। কারণ তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাওয়ায় তাদের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। জলবায়ুবিষয়ক আন্তর্জানিক প্যানেল (আইসিপি) ২০১৯ সালের একটি রিপোর্টে বলেছিল, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বাড়ছে, বরফ গলছে দ্রুতহারে-এসবের প্রভাব পড়ছে পৃথিবীর প্রাণিজগতের ওপর।

ওই রিপোর্টের প্রধান প্রণেতা ড. জ্যঁ পিয়ের বলেছেন, ‘বিজ্ঞানীদের এখন কোনো সন্দেহ নেই যে সাগর-মহাসাগরে উষ্ণতা ১৯৭০ সাল থেকে অব্যাহতভাবে বাড়ছে। মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের ফলে পরিবেশে যে বাড়তি তাপ তৈরি হচ্ছে, তার ৯০ শতাংশই শুষে নিচ্ছে সাগর। ১৯৯৩ সাল থেকে শুষে নেওয়ার এই মাত্রা দ্বিগুণ হয়েছে।

সেই সঙ্গে গলছে গ্রিনল্যান্ড এবং অ্যান্টার্কটিকার বরফ। বাড়ছে সাগর পৃষ্ঠের উচ্চতা। ২০০৭ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত যে হারে অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলেছে তা আগের ১০ বছরের তুলনায় তিনগুণ। অ্যান্দিজ, মধ্য ইউরোপ এবং উত্তর এশিয়ায় যেসব হিমবাহ রয়েছে, সেগুলোর বরফ ২১০০ সাল নাগাদ ৮০ শতাংশ গলে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুধবার বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চরমভাবে ভুগছি আমরা।

অসহনীয় তাপ এবং দীর্ঘমেয়াদি খরা বিপজ্জনকভাবে ধেয়ে আসছে। আরও বন্যআগুনের শিকার হতে চলেছে পৃথিবী।’ আবহাওয়াবিদ ক্রিস্টিদিস একবার বলেছিলেন, ‘আমরা এখন আমেরিকা আর কানাডায় তাপমাত্রার যে স্ফুরণ দেখছি, সামনের দিনগুলোতে তা প্রতি ১৫ বছরে একবার করে দেখা যেতে পারে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here