বাহরাইনে বাংলাদেশিদের ভোগান্তি চরমে

0
448

খবর ৭১:  বাহরাইনের সঙ্গে বাংলাদেশের যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় বিড়ম্বনায় পড়ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। ছুটিতে দেশে গিয়ে ফিরে আসতে পারছেন না। ইতোমধ্যে অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় রয়েছেন চরম উৎকণ্ঠায়। বাংলাদেশ গত ৩ জুন থেকে বাহরাইনসহ কিছু দেশের সঙ্গে যাতায়াতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।

এ নিষেধাজ্ঞার ফলে ছুটিতে দেশে যাওয়া বাহরাইন প্রবাসীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। চাকরি হারানো, ভিসার  মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়াসহ নানান জটিলতার মধ্যে পড়েছেন তারা। প্রবাসী সানু মিয়া খবর ৭১ কে জানান, বাহরাইনে তার ছোট একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। আগামী মাসের ১৩ তারিখ তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে, এর মধ্যে যদি তিনি বাহরাইনে প্রবেশ করতে না পারেন তাহলে অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

ইওয়ান কার্পেন্টারের শ্রমিক আজাদ আহমদ ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে গিয়েছিলেন, কিন্তু যাতায়াত বন্ধ থাকায় কোনো অবস্থায় আর ফেরত আসতে পারছেন না। তিনি এবং মালিক উভয়েই অপেক্ষায় আছেন কবে যাতায়াত স্বাভাবিক হবে।

বাহরাইন প্রবাসী শরীফ দেশটিতে অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে যান। ফ্লাই দুবাইয়ের ফিরতি টিকিট কেটে গেলেও মে মাসে ফেরার সময় জানতে পারেন ফ্লাই দুবাইয়ের ফ্লাইট বন্ধ। এদিকে ভিসার মেয়াদও শেষের পথে। তাই তিনি লোন নিয়ে গালফ এয়ারের টিকিট কাটেন। তারপর জানতে পারেন বাহরাইনে প্রবেশ করলে সেখানকার সরকারের নিয়মানুযায়ী ১০ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে হোটেলে।

সেই টাকারও ব্যবস্থা করে জানতে পারেন বাংলাদেশ বাহরাইনের সঙ্গে আসা যাওয়ার মধ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এরই মধ্যে জুন মাসের ১২ তারিখ তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এমনিতেই ধার-দেনা করে বাংলাদেশে চিকিৎকসা করতে গিয়েছিলেন। দেশেও পাড়া প্রতিবেশীদের কাছে ধার নিয়েছেন। টিকিট কেটে আসার জন্য আবার কিস্তিতে লোন নিয়েছেন।

আশা ছিল বাহরাইনে এসে কাজ করে লোন পরিশোধ করে দেবেন। কিন্তু এখন ভিসা শেষ হয়ে যাওয়াতে চোখে অন্ধকার দেখছেন। প্রতি মাসে কিস্তির ১৫ হাজার টাকা কেমনে পরিশোধ করবেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ার পরিবার কেমনে চলবে? পড়েছেন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে।

বাংলাদেশ সাংবাদিক ফোরাম বাহরাইনের প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি বশির আহমদ জানান, বাংলাদেশ সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি আটকেপড়া প্রবাসীদের কথা বিবেচনা করে যেন বাহরাইন প্রবাসীদের নিজ কর্মস্থলে ফেরত আসতে বাহরাইনের সাথে নিয়মিত ফ্লাইটের অনুমতি দেয়া হয়।

বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আসিফ আহমেদ বলেন, দ্রুত যদি ফ্লাইট চালু না হয় তবে আরো বাংলাদেশি প্রবাসীরা আটকা পড়বেন এবং ভিসা জটিলতায় পড়ে অতীতের মতো বিড়ম্বনার স্বীকার হবেন।

২০২০ সালে করোনার কারণে ফ্লাইট বন্ধ থাকার সময় যে সকল প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তারা এখনো বাহরাইন ফিরতে পারেননি। আসলেই ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়েও রয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। দীর্ঘদিন বাহরাইনে বাংলাদেশিদের নতুন ওয়ার্ক পারমিট ভিসা, ফ্যামিলি ভিসা, ভিজিট ভিসা বন্ধ রয়েছে।

এমতাবস্থায় ফ্লাইট বন্ধের কারণে যদি সময়মতো বাহরাইন ফিরতে না পারেন তাহলে আবারো অনেকের ভিসা শেষ হয়ে যাবে। এতে অনেকেই চাকরি হারিয়ে দেশে বেকার হয়ে যাবেন। অনেক প্রবাসীর বাহরাইনে ব্যবসা বাণিজ্য আছে, ফিরতে না পারলে তারা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। বাহরাইনে কোনো কোম্পানিতে কাজ করলে বাহরাইনের নিয়মানুযায়ী চাকরি ছেড়ে যাওয়ার সময় সার্ভিস মানি পান।

অনেকেই আছেন দীর্ঘদিন কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন। তাদের ভালো অংকের টাকা পাওনা আছে কোম্পানির কাছে। তারা যদি বাহরাইন ফিরতে না পারেন তাহলে সেই টাকাও না পাবার সম্ভাবনা বেশি।

এ ব্যাপারে দূতাবাস সূত্রে জানা যায়, বাহরাইনস্থ দূতাবাস ঢাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে রেসিডেন্ট পারমিটধারী প্রবাসীদের স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসার জন্য চেষ্টা করছে।

যাদের ভিসার মেয়াদ কম কিংবা শেষের পথে এবং যারা বাহরানে ফিরতে ইচ্ছুক তাদের aswelfare@mofa.gov.bd, dgcnw@mofa.gov.bd কাগজপত্র সংগ্রহ করে মেইল করতে বলা হয়েছে।

১) আবেদনপত্র
২) পাসপোর্টের কপি
৩) বৈধ ওয়ার্ক পারমিট/রেসিডেন্স পারমিট/ভিসার কপি
৪) বিমানের টিকিট বুকিংয়ের কপি

এসব কাগজপত্র পাঠিয়ে দিয়ে NOC বা ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ প্রাপ্তির জন্য আবেদন করুন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা থেকে ইস্যুকৃত উক্ত ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ প্রাপ্তি সাপেক্ষে এবং পূর্বের মতো স্বাস্থ্য সার্টিফিকেটসহ হোম কোয়ারেন্টাইনের হোটেল বুকিংসহ যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েই আসতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here