এপ্রিলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ‘নাই’ ৬৩ লাখ ২০ হাজার হিসাব

0
490

খবর৭১ঃ মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে বিকাশ, রকেট, নগদ মতো মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ফলে বেড়েছিল এমএফএসে হিসাব খোলা ও লেনদেনের পরিমাণও। কিন্তু গত মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিলে এ খাতে ৬৩ লাখ ২০ হাজার গ্রাহক কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। মাসভিত্তিক এ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে অনুমোদিত ১৫টি প্রতিষ্ঠান এমএফএস সেবা দিচ্ছে। এপ্রিলে মাস শেষে এমএফএস সেবার আওতায় নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৯ কোটি ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার। এর আগের মাস মার্চে যা ছিল ১০ কোটি ২৭ লাখ ৯৬ হাজার। এ হিসেবে এক মাসের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা কমেছে ৬৩ লাখ ২০ হাজার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, শিওরক্যাশের সেবা বন্ধ হওয়ার কারণে কয়েকটি ব্যাংকের গ্রাহক কমেছে। এছাড়া ইউক্যাশ বন্ধ করে নতুন সেবা ‘উপায়’ চালু করা হয়েছে। ইউক্যাশের যেসব গ্রাহক উপায়-এ স্থানান্তর করা হয়েছে তাদের তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। এসব কারণে নিবন্ধিত গ্রাহক কমতে পারে। তবে বিপুল পরিমাণ নিবন্ধিত গ্রাহক কমে যাওয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিক। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য তথ্য সংগ্রহ করছি।

প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, দেশে করোনাভাইরাস ধরা পড়ার পর গেল বছরের মার্চে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে গ্রাহকরা ব্যাংকগুলোতে লেনেদেনের চেয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দিকে বেশি ঝুঁকেছে। এর ফলে করোনাকালে প্রতিমাসেই এমএফএস সেবার আওতায় গ্রাহক সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের মার্চে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ কোটি ২৫ লাখ ৭৫ হাজার ৭৫০ জন। এরপরের মাসে অর্থাৎ এপ্রিলে বেড়ে ৮ কোটি ৫১ লাখ ২৯ হাজার ৬৭ জন, মে মাসে ৮ কোটি ৭৯ লাখ ৩৯ হাজার ৩৩৪ জন, জুন মাসের ৮ কোটি ৮৭ লাখ ৯৭স হাজার ৭৫ জন, জুলাইয়ে ৯ কোটি ২৫ লাখ ৮০ হাজার ২৬৮ জন, আগস্টে ৯ কোটি ৩৮ লাখ ৯২ হাজার ৬৪৩ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ৯ কোটি ৪৭ লাখ ৮৬ হাজার ৯৯১ জন, অক্টোবর ৯ কোটি ৬৪ লাখ ১৩ হাজার ৩৪৬ জন, নভেম্বর মাসে ৯ কোটি ৭৮ লাখ ৩৭ হাজার ৩৫৫ জন, ডিসেম্বর মাসে ৯ কোটি ৯৩ লাখ ৩৬ হাজার ১৯৮ জন।

চলতি বছরে জানুয়ারি শেষে গ্রাহক সংখ্যা ১০ কোটি ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৮৩১ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১০ কোটি ২৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৫১ জন এবং মার্চ মাসে ১০ কোটি ২৭ লাখ ৯৬৫ হাজার ১৭৪ জন। ক্রমান্বয়ে প্রতিমাসে গ্রাহক সংখ্যা বাড়লেও হঠাৎ এপ্রিল মাসে গ্রাহক সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার।

আলোচ্য সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৬১ হাজার ৭৮০। যা আগের মাস অর্থাৎ মার্চ শেষে ছিল ১০ লাখ ৬৯ হাজার ২৫৭ জন। তবে চলতি বছরের মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে লেনদেন বেড়েছে। এপ্রিল শেষে এখাতে লেনদেন হয়েছে ৬৩ হাজার ৪৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। মার্চ মাস শেষে লেনদেন হয়েছে ৫৯ হাজার ৬৪২ কোটি ৪০ লাখ।

তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব হিসাবে ডাক বিভাগের মোবাইলে আর্থিক সেবা ‘নগদ’ এর তথ্য নেই। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংকের এমএফএস সেবা ‘ইউক্যাশ’ বন্ধ করে ‘উপায়’ নামে নতুন সেবা চালু করেছে। ‘ইউক্যাশ’ থেকে ‘উপায়’ এ যে গ্রাহক তারা নিয়েছে ওই ডাটাগুলো সংযুক্ত করেনি। তাই গ্রাহক কম দেখাচ্ছে। এটি যুক্ত করা হলে আবার গ্রাহক বাড়বে।

উল্লেখ্য, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হয়েছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। যেমন, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংক থেকে মোবাইলে ও মোবাইল থেকে ব্যাংকেও লেনদেন করার সুবিধা পাচ্ছেন গ্রাহক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here