শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে যা যা খাওয়াবেন

0
175

খবর৭১ঃ শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ বা ব্রেইন ডেভেলপমেন্ট সাধারণত মায়ের গর্ভাবস্থায় হয়ে যায়। মানুষের বিকাশ একটা চলমান প্রক্রিয়া, শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের বিভিন্ন পর্যায়ে মস্তিষ্ক বিকশিত হয়। প্রথম কয়েক বছরে শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ খুব দ্রুত হয়ে যায়। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কের বিকাশ ধীরে ধীরে হতে থাকে। শিশুদের মস্তিষ্কের সুস্থ বিকাশ নিশ্চিত করে সুষম খাদ্যের উপর। শিশুকে অন্তত ছয় মাস বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। কারণ মায়ের দুধ পান করলে শিশুর বুদ্ধিমত্তা বাড়ে।

ছোট থেকেই শিশুদের ডায়েটে এমন কিছু খাবার রাখা দরকার যা শিশুর বুদ্ধি বিকাশে ঘটাতে পারে। এই খাবারগুলো ডায়েটে থাকলে স্কুল থেকেই শিশুর পড়াশুনা, কাজ কর্ম, নতুন কিছু শেখার আগ্রহ দেখার মতো হয়। ডায়েটিশিয়ান পরামর্শ অনুযায়ী, শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশে অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শিশুর মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পটাশিয়ামে ভরপুর কলা খাওয়াতে পারেন। সব শিশুরাই কলা খেতে কম-বেশি পছন্দ করে। পটাশিয়াম ছাড়াও এতে রয়েছে আয়রন, ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম। আপনার শিশুর জন্য কলা দিয়ে এ মিক্সচার বানাতে পারেন- একটা কলা, আগের রাতে ভেজানো কিশমিশ, কাজুবাদাম, আলমন্ড বাদাম আর দুধ একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিন। সঙ্গে স্বাদ বাড়াতে চিনি বা মধু দিন। শিশু মজা করে খাবে।

ব্রেইনের জন্য আয়রন খুবই দরকারি। প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে লালশাক, পালংশাক, ডাটাশাক, সরিষাশাক, হেলেঞ্চাশাক, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা, থানকুনি পাতায়। লাউ বা কুমড়া জাতীয় সবজি, ঝিঙা, চিচিংগাতেও প্রচুর আয়ন থাকে। প্রতিবার নতুন করে খিচুড়ি রান্না করার সময় এক বা দুই ধরনের শাক লতা-পাতা, সবজি দিন সঙ্গে। অথবা স্যুপ করেও খাওয়াতে পারেন।

মাংসে থাকে প্রচুর জিঙ্ক, আয়রন, প্রোটিন যা শিশুর মস্তিষ্কের সুস্থতা নিশ্চিত করে। মাছ আর মাছের তেলে আছে প্রোটিন আর ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, যা শিশুকে মানসিকভাবে চটপটে হতে সাহায্য করে। মাছ বা মাংসের স্যুপ করে খাওয়াতে পারেন চাইলে। নয়তো পাঁচমিশালি খিচুড়ির সঙ্গে মাংস মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। সঙ্গে দিন আলু আর গাজর! সুস্বাদু হবে শিশুর জন্য।

মস্তিষ্কের টিস্যুর সুস্থ বিকাশের জন্য দই খাওয়াতে পারেন। টক দইয়ের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে বা মিষ্টি দই খাওয়ান।

স্ট্রবেরি হোক বা ব্লুবেরি , বেরির মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এছাড়ার বেরির মধ্যে যে সব উপাদান রয়েছে তা মস্তিষ্ককে সচল ও সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। স্মৃতিশক্তি প্রখর হয় বেরি খেলে। ডার্ক চকোলেটে আছে প্রচুর পুষ্টিকর উপাদান। এর মধ্যে আছে ফ্ল্যাভোনয়েড, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা মনকে তরতাজা করে তোলে। এর ফলে পড়াশুনায় বেশি মন দেওয়া যায়। মানসিক ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করতেও অত্যন্ত উপকারী ডার্ক চকোলেটে।

সঠিক খাবার স্মৃতি, ঘনত্ব এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে। মস্তিষ্ক, শরীরের অন্যান্য অংশের মতোই খাবার থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে। ডায়েটিশিয়ান পরামর্শ অনুযায়ী, বাচ্চাদের পক্ষে অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা ব্রেন-বুস্টার। তাদের মতে, শিশুদেরকে ভাত, ডাল, ডিম, বাদামের মতো পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো দরকার।

ডায়াটিশিয়ানরা জানান, ওটমিল এবং ওটস মস্তিষ্কের শক্তির উৎস। ওটস -এ প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা বাচ্চাদের সন্তুষ্ট রাখে এবং জাঙ্ক ফুড খাওয়ার ইচ্ছা থেকে বিরত রাখে। ওটস -এ ভিটামিন ই, বি কমপ্লেক্স এবং জিঙ্কও রয়েছে যা বাচ্চাদের মস্তিষ্ককে কাজ করতে সহায়তা করে। ওটস-কে সুস্বাদু করতে এর উপরে আপেল, কলা, ব্লুবেরি বা বাদাম ব্যবহার করতে পারেন।

তৈলাক্ত মাছে ফ্যাসি অ্যাসিড ওমেগা-৩ বেশি, মস্তিষ্কের বিকাশ এবং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো কোষের বিল্ডিং ব্লকগুলোর প্রয়োজনীয় উপাদান। সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যামন, ম্যাকরেল, ফ্রেস টুনা, টর্ট, সারদিনস এবং হেরিং জাতীয় মাছে ফ্যাটি অ্যাসিড ওমেগা-৩-এর পরিমাণ বেশি এবং সপ্তাহে অন্তত্য একবার খাওয়া উচিত।

শিশুদেরকে সকালের খাবারেই কার্বহাইড্রেট, প্রোটিন এবং একটি স্বল্প পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এর সংমিশ্রণে ভরাট করা খাবার থাকা উচিত যা তাকে সারা দিন জোরদার রাখতে সহায়তা করবে। ডিমে প্রোটিন বেশি থাকে এবং যা মেমরিকে সহায়তা করে। এছাড়া আখরোট, বাদাম এবং চিনাবাদাম জাতীয় বাদাম মস্তিষ্ক-বান্ধব খাবার। এই খাবারগুলোতে উচ্চ মাত্রার ভিটামিন ই জ্ঞানীয় অবক্ষয়কে প্রতিরোধ করে। বাদামে জিঙ্ক থাকে যা শিশুদের স্মৃতিশক্তি এবং মস্তিষ্কের বিকাশকে বাড়িয়ে তোলে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here