কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদীর জন্মদিন আজ

0
240

খবর৭১ঃ
কিংবদন্তি অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদীর ৬৯তম জন্মদিন আজ। ১৯৫২ সালের এই দিনে ঢাকার নারিন্দায় তিনি জন্ম গ্রহণ করেন।

জন্ম ঢাকায় হলেও শৈশব-কৈশোর তার কেটেছে ঢাকায় বাইরে। বাবার চাকরির সুবাদে ঘুরতে হয়েছে মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুরসহ আরও অনেক জেলায়।

যে কারণে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পড়াশোনাও হয়েছে তার বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন স্কুলে।

চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করেন ১৯৭০ সালে। স্বাধীনতার পর অর্থনীতি নিয়ে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে অনার্স সম্পন্ন করেন।

তবে ছেলেবেলা থেকেই অভিনয়ে ঝোঁক ছিল তার। তাই অর্থনীতিতে এতো ভালো ফলাফল করেও পেশা হিসেবে বেছে নেন অভিনয়কে।

এরপর মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র- তিন মাধ্যমেই দাপিয়ে বেড়ান এই গুণী অভিনেতা। তিন দশকের বর্ণিল ক্যারিয়ারে তিনি উপহার দিয়েছেন অনেক জনপ্রিয় নাটক ও চলচ্চিত্র।

হুমায়ুন ফরিদীর অভিনয়ে হাতেখড়ি অবশ্য মাত্র ‪‎১২‬‬‬‬ বছর বয়সে। ১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জের মহল্লার নাটক ‘এক কন্যার জনক’-এ প্রথম অভিনয়ে করেন তিনি। স্কুল জীবনেই নাটকের নির্দেশনা দেওয়া অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তিনি। ‘ভূত’ নামে নাটকের নির্দেশনা দেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে নাট্যজন সেলিম আল দীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে হুমায়ুন ফরিদীর।

১৯৭৬ সালে সেলিম আল দীনের এর উদ্যোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় নাট্যোৎসব। এই উৎসবে ফরিদীর নিজের রচনায় এবং নির্দেশনায় মঞস্থ হয় ‘আত্মস্থ ও হিরন্ময়ীদের বৃত্তান্ত’ নামে একটি নাটক। যা ওই সময় নাটকটি সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল।

এরপর ঢাকা থিয়েটারে ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’, ‘ফণীমনসা’, ‘শকুন্তলা’, ‘কীত্তনখোলা’, ‘কেরামত মঙ্গল’ নাটকগুলোতে অভিনয় করে ভূয়সী প্রশংসিত হন হুমায়ুন ফরিদী। নাট্টজগতে অদ্বিতীয় ব্যক্তি হয়ে ওঠেন।

হুমায়ুন ফরিদী টিভি পর্দায় প্রথম অভিনয় করেন আতিকুল ইসলাম চৌধুরীর ‘নিখোঁজ সংবাদ’ নাটক দিয়ে। তবে ১৯৮৩ সালে সেলিম আল দীনের রচনায় ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’ নাটকে সেরাজ তালুকদারের চরিত্রে অভিনয় করে দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা পান ফরিদী।

সে সময় ওই নাটকে তার একটি সংলাপ ‘আরে আমি তো পানি কিনি, পানি, দুধ দিয়া খাইবা না খালি খাইবা বাজান’ বেশ শ্রোতাপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি ফরিদীকে। ‘সাত আসমানের সিঁড়ি’, ‘একদিন হঠাৎ’, ‘চাঁনমিয়ার নেগেটিভ পজেটিভ’, ‘অযাত্রা’, ‘পাথর সময়’, ‘দুই ভাই’, ‘শীতের পাখি’, ‘সংশপ্তক’, ‘কোথাও কেউ নেই’, ‘নীল আকাশের সন্ধানে’, ‘দূরবীন দিয়ে দেখুন’, ‘ভাঙনের শব্দ শুনি’, ‘বকুলপুর কতদূর’, ‘মহুয়ার মন’, ‘সমুদ্রে গাঙচিল’, ‘তিনি একজন’, ‘চন্দ্রগ্রস্ত’, ‘কাছের মানুষ’, ‘মোহনা’, ‘বিষকাঁটা’, ‘শৃঙ্খল’, ‘ভবের হাট’ এসব নাটকের তার অভিনয় তাকে কিংবদন্তি করে তুলেছে।

প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের সঙ্গেও অনেক নাটকে কাজ করেছেন হুমায়ুন ফরিদী। বিশেষ করে হুমায়ুন আহমেদের ‘সংশপ্তক’ ধারাবাহিক নাটকে হুমায়ুন ফরীদি অভিনীত চরিত্র ‘কানকাটা রমজান’ কে চেনেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।

মঞ্চ, টিভির পর রূপালি পর্দায়ও সমান দাপট দেখিয়েছেন হুমায়ুন ফরিদী। চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে হুমায়ূন ফরিদী মানেই সুপার হিট। তানভীর মোকাম্মেলের ‘হুলিয়া’ দিয়েই এ মাধ্যমে তার যাত্রা শুরু।

‘সন্ত্রাস’, ‘ভণ্ড’, ‘ব্যাচেলর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘শ্যামলছায়া’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘মায়ের র্যোদা’, ‘বিশ্বপ্রেমিক’ ও ‘পালাবি কোথায়’সহ আরও অনেকগুলো ছবি হুমায়ুন ফরিদীকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।

‘মাতৃত্ব’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০০৪ সালে সেরা অভিনেতা শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পান এ অভিনেতা।

ব্যক্তিগত জীবনে প্রথমে ফরিদপুরের মেয়ে মিনুকে বিয়ে করেন ফরিদী। সেই ঘরে দেবযানি নামে মেয়ে রয়েছে তাদের। পরে তিনি বিয়ে করেন প্রখ্যাত অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফাকে। ২০০৮ সালে সেই বিয়েও বিচ্ছেদ হয়ে যায়।

২০১২ সালে ১৩ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এ কিংবদন্তি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here