ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে অতিদরিদ্রদের ৪০ দিনের কর্মসূচির নামে কোটি টাকা লুটপাটের পায়তারা!

0
274

রাব্বুল ইসলাম, ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধিঃ

কর্মসূচী (ইজিপিপি) এর আওতায় অতিদরিদ্রদের জন্য সরকার ৪০ দিনের কর্মসংস্থান কর্মসূচী প্রকল্প গ্রহন করেন। যা সারা বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলে এ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন কাজ করে সফল হলেও ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলায় অনিয়মের কারণে নষ্ট হচ্ছে বর্তমান এ সরকারের ভাবমূর্তি। পাশাপাশি এই কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকার অতিদরিদ্র মানুষ গুলো।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১ নং ভায়না ইউনিয়নের কালিশংকরপুর নবীর বাড়ী হয়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় অভিমুখে রাস্তা মাটি দ্বারা পুন: নির্মাণে ৪৮ জন শ্রমিক বরাদ্দ রয়েছে। কিন্ত সেখানে যেয়ে দেখা যায় প্রতিদিন ১৮/২০ জন করে শ্রমিক কাজ করছে। এছাড়া রহিমপুর মুক্তিযোদ্ধা ইছাহকের বাড়ী হতে নদীর ধার পর্যন্ত মাটি দ্বারা পুন: নির্মাণে মাটি শ্রমিক বরাদ্দ রয়েছে ৬৭ জন। সেখানে যেয়ে দেখা যায় ৩০জন শ্রমিক কাজ করছে। এসময় মাটি শ্রমিকের সর্দ্দারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রতিদিন তারা ৩০/৩২জন শ্রমিক দিয়েই কাজ করছেন। প্রতিদিন ওই প্রকল্প থেকে ৩৭ জন শ্রমিকের বিল হাতিয়ে নিচ্ছে। এমনকি বাকচুয়া লিটনের বাড়ী হতে নাসির মেম্বরের বাড়ি অভিমুখে রাস্তা মাটি দ্বারা পুন: নির্মাণে ৪২জন শ্রমিক থাকলেও সেখানে কাজ করছে অর্ধেক। ২নং জোড়াদহ ইউনিয়নের হরিশপুর রাশেদুলের বাড়ির পাশের পাকা রাস্তা হতে মনের বিল অভিমুখে রাস্তা মাটি দ্বারা পুন: নির্মাণ এবং আলতাফ চেয়ারম্যানের বাড়ির পাশে পুকুর পাড়ের রাস্তা পুন: নির্মাণে ২৫ জন শ্রমিক থাকার কথা থাকলেও সেখানে ১০/১২জন করে শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করে। হরিশপুর ’দাসবাড়ীর পাশে পাকা রাস্তা হতে জালাল মোল্যার বাড়ি অভিমুখে রাস্তা নির্মাণে শ্রমিক বরাদ্দ রয়েছে ২৫ জন। সেখানেও একই চিত্র দেখা যায়। এছাড়াও জোড়াদহ মালেক মন্ডলের বাড়ির পাশে পাকা রাস্তা হতে কবরস্থান রাস্তা পুন: নির্মান এবং হরিশপুর গাংনি বিলে খাল পুন: খননে ৪১ জন শ্রমিকের মধ্যে কাজ করছে ১৮ জন। এর মধ্যে সপ্তাহে ৫ দিন কাজ চলার কথা থাকলেও মাঝে মধ্যে দুই একদিন কোনো শ্রমিকই আসেনা। এবিষয়ে জোড়াদাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পলাশ জানান,আমার ইউনিয়নে সারা বাংলাদেশের তুলনায় ভালো কাজ হচ্ছে। আপনারা সাংবাদিকরা খোঁজ নিয়ে দেখেন এতো ভালো কাজ কোনো উপজেলায় হচ্ছে কিনা। এভাবেই হরিণাকুন্ডু উপজেলার তাহেরহুদা, দৌলতপুর, কাপাশাটিয়া, ফলসী ও চাঁদপুর ইউনিয়নে বরাদ্ধের অর্ধেক শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমনকি প্রতিটা প্রকল্পে কতজন শ্রমিক, কত টাকা বরাদ্দ এর একটা বিলবোর্ড টাঙ্গানোর কথা থাকলেও বেশিরভাগ ইউনিয়নে তা চোখে পড়েনি।

স্থানীয়রা জানায়, হরিণাকুনডু উপজেলার দূর্নীতিবাজ কিছু জনপ্রতিনিধিদের পকেট ভারী করতে চলছে এসব অনিয়ম। সংশ্লিষ্ঠ কর্তপক্ষকে ম্যানেজ করেই তারা সরকারের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

গত কয়েক দিন ধরে এ প্রতিবেদক সরেজমিনে গেলে এসব অনিয়মের খবরে অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিদের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়েছে, কেউ কেউ বলছেন ৪০দিনের এই কাজ দেখার সাংবাদিকরা কে?

এবিষয়ে কাজের পিআইসিরা বলেন, ধান কাটা লেগেছে তাই শ্রমিক সংকট। যে কারণে বরাদ্দ অনুযায়ী শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবেই কাজ চলবে তা আপনাদের কি!
এবিষয়ে হরিণাকুন্ডু প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) জামাল উদ্দিন বলেন, প্রতিটা প্রকল্পে যে কয়জন শ্রমিক কাজ করবে সেই কয়জনের বিল দেওয়া হবে। বাকি শ্রমিকের বিল কেটে নেওয়া হবে।

হতদরিদ্র মানুষের কর্মসূচির ‘কাজে দূর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ঠ কর্তপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী। সেই সাথে সচেতন মহল দেখতে চান হরিণাকুন্ডু উপজেলার কত জন শ্রমিকের বিল কেটে নেওয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here