বিপদে পড়ে ১৬ বছর আগের ‘শপথ’ ভাঙল ভারত

0
309

খবর৭১ঃ করোনা মহামারিতে বিদেশি ‘ত্রাণ না নেওয়ার’ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসল ভারত। করোনা সামাল দিতে দেশটিকে এখন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়ার মতো দেশ থেকে সাহায্য নিতে হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, চীনের কাছ থেকেও সাহায্য নেওয়ায় আর আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে দিল্লি।

শুক্রবার আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দরিদ্র দেশের তকমা কাটিয়ে উঠতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে ত্রাণ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মহামারির প্রকোপে ১৬ বছর আগে নেওয়া সেই পণ থেকে সরে আসতে হচ্ছে ভারতকে।

করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়ার মতো দেশ তো বটেই, সীমান্ত সংঘাত ঘিরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকা চীনের কাছ থেকেও সাহায্য নেওয়ায় আর আপত্তি নেই দিল্লির।

প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানও ইতোমধ্যেই সাহায্যের প্রস্তাব দিয়েছে। যদিও পাকিস্তানের কাছ থেকে সাহায্য নেওয়ার ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে সাউথ ব্লকে।

ভারতের ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতে ভারতের সাহায্যে যেসব দেশ এগিয়ে এসেছে, তার মধ্যে রয়েছে- আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, রোমানিয়া, লাক্সেমবার্গ, পর্তুগাল, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরব, হংকং, তাইল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, সুইৎজারল্যান্ড, নরওয়ে, ইতালি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।

এর মধ্যে অক্সিজেনের জোগান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ভুটান। রেমডেসিভির এবং অন্যান্য ওষুধের পাশাপাশি মে মাসে অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি প্রতিষেধক ভারতের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার কথা জানিয়েছে আমেরিকা।

বিগত কয়েক বছরে চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও, সেখান থেকেও ২৫ হাজার অক্সিজেন কনসেনট্রেটর এসে পৌঁছনোর কথা। ভারতে চীনের রাষ্ট্রদূত সান উইদং সে কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘চীনের চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহকারীরা অতিরিক্ত পরিশ্রম করছেন যাতে ভারতের কাছ থেকে পাওয়া কমপক্ষে ২৫ হাজার অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের বরাত সময় মতো দেওয়া যায়। তার জন্য সরঞ্জাম সরবরাহকারী বিমানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দেশের শুল্ক দফতরের আধিকারিকরা এই সংক্রান্ত প্রক্রিয়া সারছেন’।

চীন থেকে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আমদানি কথা স্বীকার করেছে দিল্লিও। যদিও এই আমদানিকে সাহায্য বলে মানতে নারাজ তারা। বরং কেউ যদি নিজে থেকে সাহায্য করে, তা ফেরানোর প্রশ্ন নেই বলে জানিয়েছে।

এ ব্যাপারে দিল্লির এক কর্মকর্তার যুক্তি, ‘ভারত কারও কাছে সাহায্য চায়নি। এ গুলো সব টাকা দিয়ে কেনা হচ্ছে। তবে কোনো কোনো দেশের সরকার বা সেখানকার বেসরকারি সংস্থা যদি উপহার হিসেবে কিছু সাহায্য বা অনুদান দিতে চান, তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গেই গ্রহণ করব আমরা।’

দিল্লি সূত্রের বরাতে খবরে বলা হয়, এখনও পর্যন্ত যে যে দেশ থেকে সাহায্যের প্রস্তাব এসেছে, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান রেড ক্রস সোসাইটি’-র হাতে তা তুলে দিতে বলা হয়েছে। পরে বিশেষ কমিটি গড়ে সেগুলো বিভিন্ন রাজ্যের চাহিদা অনুযায়ী পাঠানো হবে। চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন রাজ্যকেও অন্য দেশ থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী আমদানি করার ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।

আনন্দবাজারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৪ সালের সুনামির পর তৎকালীন মনমোহন সিংহের সরকার বিদেশ থেকে ত্রাণ নিতে অস্বীকার করে। ২০০৫ সালে কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখাসংলগ্ন এলাকায় ভূমিকম্পে যখন ১ হাজার ৫০০ মানুষ মারা যান, তখনও বিদেশি সাহায্যের প্রস্তাব নাকচ করে দেয় ভারত।

ওই সময় পাক অধিকৃত কাশ্মীরে মৃতের সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ায় পাকিস্তানের হাতে ২ কোটি ৫০ লক্ষ ডলারের চেক তুলে দেওয়া হয়। পাকিস্তান যদিও সেই চেক ভাঙায়নি।

এর পর থেকে ২০০৫ সালে ঘূর্ণিঝড় ক্যাটরিনার সময় আমেরিকা, ২০০৮ সালে সিচুয়ান ভূমিকম্পের সময় চীনসহ নেপাল, মিয়ানমার, ফিলিপাইনের মতো একাধিক সময় প্রতিবেশী দেশগুলোতে ত্রাণ পাঠালেও কারো কাছ থেকে তা গ্রহণ করেনি ভারত।

শুধুমাত্র ২০১৩ সালে উত্তরাখণ্ডে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বন্যার সময় এবং ২০১৪ সালে ওড়িশায় ঘূর্ণিঝড় হুদহুদের সময় সাময়িক ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই ত্রাণ না নেওয়াকে ঘিরে ২০১৮ সালে কেরালা সরকারের সঙ্গে সংঘাত দেখা দেয় কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদির সরকারের। সে বছর বন্যায় বিধ্বস্ত কেরলকে ৭০০ কোটি টাকার ত্রাণ দিতে চেয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু কেন্দ্রের আপত্তিতে তা কেরালা সরকারের হাতে এসে পৌঁছায়নি।

তবে এ বার ১৬ বছর আগের সেই অবস্থানই বদল করছে ভারত। এর ইঙ্গিত যদিও পাওয়া গিয়েছিল গত বছরই। করোনার প্রকোপ সামাল দিতে যখন পিএম-কেয়ার্স তহবিল গড়ে তোলা হয়, তখনই দিল্লির তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, যে কোনো দেশের, যে কোনো সংস্থা এবং ব্যক্তি, তাতে অনুদান দিতে পারবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here