খবর৭১ঃ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার এখন পর্যন্ত দেশের ২ কোটি মানুষের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। কিন্তু দেশের অনেক শিক্ষার্থী ও ছেলেমেয়েদের মধ্যে এমন প্রবণতা রয়েছে, যেনতেনভাবে লেখাপড়া শেষ করেই চাকরির খোঁজে নেমে পড়ে। সবাই চাকরির পেছনে ছুটবে কেন? বরং এদেশের ছেলেমেয়েরা যেন নিজেরাই ব্যবসা-বাণিজ্য করে আত্মকর্মসংস্থান এবং অন্যের কর্মসংস্থান সৃষ্টির ব্যবস্থা করে। নিজেরা উদ্যোক্তা হয়ে অন্যের চাকরির ব্যবস্থা করে। তরুণদের চাকরির পেছনে না ছুটে স্বকর্মসংস্থান সৃষ্টি ও উদ্যোক্তা হিসেবে অন্যদের জন্যও কর্মসংস্থান গড়ে তোলার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।
বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ৩০ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের একাধিক সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
মাদক ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে বাবা-মাসহ অভিভাবক ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছেলেরা তারা কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, ঠিকমতো ক্লাসে যাচ্ছে কি না, মাদক ও জঙ্গিবাদে জড়াচ্ছে কি না—এসব বিষয়ে নজর রাখতে হবে। বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা ও জঙ্গিবাদ সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক—এই তিনটির বিরুদ্ধেই সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে। তার সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ ও অভিযানের কারণে মাদকের বিস্তার অনেকটাই কমে এসেছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সরকারি দলের সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা আরো বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক—এই তিনটির বিরুদ্ধেই সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিশেষ করে মাদক ব্যবসা, পাচার, সেবন ও বিস্তারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের ফলে মাদক অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। মাদক প্রতিরোধের ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোতে সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিলে আইন প্রণয়ন করার দাবি জানিয়ে জাতীয় পার্টির (এ) সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সান্ধ্যকালীন কোর্স বাতিলের বিষয়ে রাষ্ট্রপতি নিজেই কথা বলেছেন। তবে এ নিয়ে কোনো আইন করার প্রয়োজন নেই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনই (ইউজিসি) এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে। এরপরও সরকার দেখবে এ বিষয়ে কী করা যায়।
বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে তার সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে বলেন, ইংরেজি মাধ্যমে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জন্য চাকরিতে আলাদা কোটা কেন রাখতে হবে? এটা রাখার কোনো প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাঠ্যপুস্তকে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস সন্নিবেশিত করা হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় দিবস যেমন- ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর এবং ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৫২-এর মহান ভাষা আন্দোলন ইত্যাদি বিষয়ে শিশু-কিশোরদের অবহিত করার জন্য পাঠ্যপুস্তকে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থিগণ ক্যাম্পাসে নিরাপদে থাকুক এবং মুক্তিচিন্তা ও উদার দৃষ্টিভঙ্গিতে বেড়ে উঠুক সে প্রত্যাশায় বাংলাদেশ রিসার্চ এ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে বহির্বিশ্বের গবেষণা ও শিক্ষা নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা আরো জানান, জঙ্গি/সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যেন কোনোভাবে সম্পৃক্ত থাকতে না পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি গ্রামে আধুনিক শহরের সুবিধা সম্প্রসারণের জন্য সরকার নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এজন্য গ্রামীণ সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। দেশের সকল জেলাকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনাসহ বাংলাদেশ রেলওয়েকে জনগণের কাছে নির্ভরযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ গণপরিবহন মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না, এটা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার।