মার্কিন অবরোধ সত্ত্বেও কেন ইরানের সঙ্গে ভারত?

0
385

খবর৭১: দিল্লিতে চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জরিফের সাথে বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অন্যান্য দেশের চাপের মধ্য তৈরি হয়নি।… আমরা জাতিসংঘ অবরোধকে স্বীকার করি, কোনো বিশেষ দেশের অবরোধকে নয়। আগেও আমরা মার্কিন অবরোধ মানিনি।’

ব্রিকসের দুই দেশ চীন ও রাশিয়ার পর ভারত বিন্দুমাত্র সংশয় রাখেনি। ভারত আরো বেশি এগিয়েছে। তারা ইরানের কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখবে। ইরান হলো ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী। তারা রাষ্ট্রীয় ব্যাংক ইউসিওর মাধ্যমে রুপিতে মূল্য পরিশোধ করতে চায়। আগের মেয়াদের চেয়ে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত ইরানের কাছ থেকে ভারত ১১৪ ভাগ বেশি তেল কিনেছে।

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যের পরিমাণ ১১৫ বিলিয়ন ডলার। আর ভারত-ইরান বাণিজ্যের পরিমাণ মাত্র ১৩ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের হিসাব মতে, ২০১৮ সালে ভারতের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হতে পারে এবং এর জিডিপি উন্নীত হতে পারে ২.৬ ট্রিলিয়ন ডলারে। ফলে তারা ফ্রান্স, ইতালি, ব্রাজিল ও রাশিয়া থেকে এগিয়ে থাকছে। প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য জ্বালানির খুবই প্রয়োজন।

ফলে ইরানি জ্বালানি কেনা ভারতের জন্য জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। ভারত ও ইরানের মধ্যকার ব্যাপকভিত্তিক অংশীদারিত্বের মধ্যে রয়েছে জ্বালানি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ কানেকটিভিটি করিডোর, ব্যাংকিং, বীমা, জাহাজ চলাচল এবং আরো গুরুত্বপূর্ণভাবে ডলারকে এড়িয়ে রুপি ও রিয়ালে সবকিছু ব্যবহার করার সম্ভাবনা।

ভারত-ইরান ইতোমধ্যেই ইউরো দিয়ে বাণিজ্য করছে। ফলে তারা মার্কিন ডলার এড়িয়েই বাণিজ্য চালিয়ে যেতে পারবে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের একতরফাভাবে ইরানি পরমাণু চুক্তি বাতিলের বিষয়টিও ইইউ গ্রহণ করছে না বলেই ধরা যায়। ফলে ভারতের তেল আমদানিও বাধাগ্রস্ত হবে না।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির জ্বালানি কৌশলের মধ্যে সৌর, বায়ু, তেল ও গ্যাস- সবই রয়েছে। ফলে কেবল ইরানই তার কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তা নয়, এখানে মধ্য এশিয়াও প্রবলভাবে রয়েছে। তুর্কমেনিস্তান থেকে তেল ও গ্যাস আমদানি করতে চাচ্ছে ভারত। আর তা হবে ইরান ও কাজাখস্তান হয়ে।

দিল্লি দুনিয়ার বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্র সাউথ পার্স থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করতে চায়। এটি হয় আইপিআই (ইরান-পাকিস্তান-ইন্ডিয়া পাইপলাইন) কিংবা পারস্য উপসাগরীয় সমুদ্র তলদেশ থেকে ভারত মহাসাগরীয় তলদেশ হয়ে যাবে।

ইরানের চাহাবার বন্দরও রয়েছে সমীকরণে। এই বন্দরে ভারত এ পর্যন্ত ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। চাবাহার-জাহেদান রেলওয়ের নির্মাণকাজ চলছে। চাবাহার হলো ভারতীয় সংস্করণের নতুন সিল্ক রোড। এটি পাকিস্তানকে এড়িয়ে আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার সাথে ভারতকে যুক্ত করবে।

ভারতীয় বাণিজ্যের জন্য ইরানগামী সাগর রুট এবং তারপর স্থলপথে মধ্য এশিয়ায় যাওয়া (এর মধ্যে আফগানিস্তানের খনিজসম্পদে প্রবেশাধিকারও রয়েছে) অমূল্য বিষয়। দুই বছর আগে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারকে ২১ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। ৯ বিলিয়ন ডলার দেয়া হবে চাবাহার বন্দর প্রকল্পে, বাকিটা আফগান লোহা খনি উন্নয়নে।

ফলে ভারত-আফগানিস্তান-ইরান কানেকটিভিটি করিডোর নিয়ে নয়া দিল্লির অব্যাহতভাবে উল্লসিত হওয়ার কারণ বোঝা যায়।

এমন প্রেক্ষাপটে ভারতকে কাছে টানতে যুক্তরাষ্ট্র প্যাসিফিক কমান্ডের নাম বদলিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড করেছে। এতে ভারত, চীন, মঙ্গোলিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, এন্টার্কটিকা তথা পুরো প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল রয়েছে। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে গঠিত কোয়াডের আলোকেই ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। আর তা করা হয়েছে চীনকে ঘিরে ফেলার ওবামা প্রশাসনের এশিয়া ভরকেন্দ্র নীতি অনুসরণ করেই।

তেহরানের সাথে বিরতিহীন বাণিজ্য করার জন্য ট্রাম্প প্রশাসন কিভাবে নয়া দিল্লিকে ‘শাস্তি’ দেবে তা অস্পষ্ট। রাশিয়ার ক্ষেত্রে চাপ রয়েছে বিরামহীন। ভারত যাতে রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ না কেনে, সেজন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে ভারত তার সিদ্ধান্ত জানাবে অক্টোবরে।

আগামী ৯ জুন চীনের কিংদাওয়ে অনুষ্ঠেয় সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে রাশিয়া, চীন, ভারত ও পাকিস্তান সেখানে থাকবে। বর্তমানে পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত থাকবে ইরান ও আফগানিস্তান। ভবিষ্যতে তারাও পূর্ণ সদস্য হবে। এটি স্পষ্ট যে ইরানকে নিঃসঙ্গ করতে অস্বীকার করবে এসসিও/ব্রিকস-এর সদস্য চীন, রাশিয়া ও ভারত। আর এ নিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের কিছুই করার নেই।
খবর৭১/এস:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here