পাহাড় ধস-বন্যার ঝুঁকিতে বসবাস রোহিঙ্গাদের

0
543
পাহাড় ধস-বন্যার ঝুঁকিতে বসবাস রোহিঙ্গাদের
কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গারা

খবর৭১ঃ

গত দু’দিনের টানা বর্ষণে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গারা আবারও দুর্ভোগে পড়েছে। পাশাপাশি চলতি বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধস, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন তারা। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্ষায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালে ২৫ আগস্টের পরে আসা প্রায় ৮ লাখসহ নতুন পুরনো মিলে কক্সবাজারের উখিয়া এবং টেকনাফ বসবাস করছে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গারা এসব এলাকার প্রায় ছয় হাজার একর বনভূমিজুড়ে ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাস করছে। এতো বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য আবাসস্থল বানাতে গিয়ে উঁচু-নিচু পাহাড়, ছড়া, নালা-খাল কিছুই বাদ যায়নি। যে কারণে বিভিন্নস্থানে পানিতে চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা এবং বন্যার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তোলায় ভারি বর্ষণ হলেই পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দেয় ক্যাম্পগুলোতে।

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, অল্প বৃষ্টিতেই আমাদের অবস্থা কাহিল হয়ে গেছে। পুরো বর্ষাকালে বাড়ি-ঘর নিয়ে খুব কষ্টে থাকতে হবে আমাদের। গাছ-বাঁশ পোকায় খেয়ে ফেলেছে। ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়বো। বাতাসে ঘর ফেলে দেবে। খুব আতঙ্কে আছি।

একই এলাকার রশিদ আহম্মদ বলেন, বর্ষাকালে সমস্যায় পড়বো তা এখন থেকে বোঝা যাচ্ছে। ছাউনি দুর্বল, ঘর জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। টয়লেট নিয়ে আমরা খুব কষ্টে আছি। সামান্য বৃষ্টি হওয়ায় নিচু এলাকার অনেক ঘর পানিতে ডুবে গেছে।

পাহাড় ধস-বন্যার ঝুঁকিতে বসবাস রোহিঙ্গাদের

‘উচু পাহাড়ে যারা আছে তাদের পাহাড় ধসের আতঙ্ক, আর আমরা যারা নিচে আছি, তাদের বন্যার ভয়। ঘরগুলো নিচে হওয়াতে খুব কষ্টে আছি। এখন আর ঘরে থাকতে ইচ্ছে করে না। পানি আর টয়লেট অনেক দূরে বললেন বৃদ্ধ মোরশেদ আলম।

সুলতান আহম্মদ বললেন, এখনো বর্ষা শেষ হতে অনেক বাকি। এরই মধ্যে ঘরের খুঁটি পোকায় খেয়ে ফেলেছে। খুব আতঙ্কে আছি। প্রচণ্ড বাতাস হলেই আতঙ্কে থাকি। ত্রিপলের বেড়া, ত্রিপলের ছাউনি কখন বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে যায় যোগ করেন তিনি।

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি আব্দুর রহিম বলেন, টানা বৃষ্টিতে বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় বেশকিছু ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাস্তা-ঘাটা কাঁদাময় হওয়াতে চলাচলে বিশেষ করে প্রাকৃতিক কাজ সারতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে অনেক ঘর সংস্কার করা হয়েছে। অতি ঝুঁকিতে থাকা প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গাকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ক্যাম্পের অভ্যন্তরে থাকা মসজিদ, সাইক্লোন শেল্টার, আশপাশের স্কুলের ভবন প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গারা

কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, দু’দিন ধরে টানা বৃষ্টি হয়েছে। অনেকগুলো বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকেছে বলে সিআইসিরা জানিয়েছেন। এতো বিশাল এলাকাজুড়ে ক্যাম্পে ছোট-খাটো কিছু সমস্যা তো তৈরি হবেই। এখানে আমাদের কারো হাত নেই।পাহাড় ধসসহ বড় ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে বা পাহাড় চূড়ায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে এখনো যারা বসবাস করছে তাদের সরিয়ে নিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো তালিকা তৈরির কাজ করছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here