ধার করা শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে খালেদা জিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

0
608
ধার করা শিক্ষার্থী দিয়ে চলছে খালেদা জিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ধার করা শিক্ষার্থী আর চরম অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার কেয়ারিগাঁও গ্রামের একটি স্কুলকে ১৯৯৪ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নামে নামকরণ করা হয়। এর আট বছর পর ২০০২ সালে স্কুলটি এমপিওভূক্ত হয়। তবে অভিযোগ উঠেছে, বিদ্যালয়টি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করে জানান, বর্তমানে মাত্র ২৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এখানে পাঠদান চলছে। বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেন থেকে ধার করে শিক্ষার্থী এনে এখানে কাগজ-কলমে হিসেব ঠিক রাখা হয়। তবে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীর সংখ্যা ২২১ জন। তবে বাস্তবে আছে ১৪১ জন। যদিও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার রয়েছে মাত্র ১২ শতাংশ। ১০ম শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থীর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। এছাড়া শিক্ষক, লাইব্রেরিয়ান ও করণীকসহ আছেন ১৬ জন। এই কর্মচারীদের পিছনে প্রতিবছর সরকারের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ব্যয় হয় ৩২ লাখ ৮৪ হাজার ১৬ টাকা। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তিও দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, প্রধান শিক্ষক আজমা খাতুনের উদাসীনতার কারণে লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ছে এই বিদ্যালয়টি। অনেকে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভর্তি হচ্ছে। ফলে বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী সংকটে পড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, ‘বিদ্যালয়টি প্রধান শিক্ষকের পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তার বাবা আব্দুর রহমান এই স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, ছোট ভাই সহিদুল ইসলাম সহকারী শিক্ষক সঙ্গে শিক্ষক প্রতিনিধি, ছোট ভাইয়ের বউ সহকারী শিক্ষক এবং চাচাতো ভাইয়ের বউ লাইব্রেরিয়ান।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, স্কুলটির ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী সদর উপজেলার বিভিন্ন কিন্ডার গার্টেন থেকে ধার করা। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইডিয়াল কিন্ডার গার্টেন অ্যান্ড হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম ও হাসমত উল্লা মেমোরিয়াল রেজিডিয়ানশল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক আব্দুল হাই।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মেরিট কেজি অ্যান্ড হাই স্কুলের শিক্ষক রাজকুমার রায় দুঃখ করে বলেন, ‘আমাদের মতো প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের ধার নিয়ে এমপিওভূক্ত কিছু প্রতিষ্ঠান টিকে আছে। তারা সরকারের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে, অথচ আমরা যারা প্রকৃত শিক্ষা দিচ্ছি তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’

তবে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আজমা খাতুন এ সব অভিযোগ স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘শুধু আমাদের স্কুল নিয়ে লিখলে হবে না। এ ধরনের সমস্যা অনেক স্কুলেই আছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়াতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

আউলিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান নজরুল বলেন, ‘বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ছলচাতুরি করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক তার পছন্দের লোকদের নিয়ে কমিটি গঠন করছেন। তিনি স্কুলটিকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। যে কারণে বিদ্যালয়ে সংকট দেখা দিয়েছে।’

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে ওই শিক্ষককে সতর্ক করা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here