টাকা ছাড়া হয় না ভাতা কার্ড

0
300

ঘাটাইল(টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি:

তার নাম নুরুল ইসলাম। তিনি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার লক্ষিন্দর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য৷ তার বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর অভিযোগের শেষ নেই। তাদের অভিযোগ— বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, গর্ভবতী ভাতা— এমন কোনো ভাতা নেই যেখান থেকে এই ইউপি সদস্য ঘুস নেন না৷

উপকারভোগীরা কার্ড করার জন্য কখনো ভাতার পুরো টাকা, কখনো অগ্রিম টাকা, কখনো বা ভাতারা টাকার একটি অংশ দিতে বাধ্য হন ওই ইউপি সদস্যকে৷

বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দেওয়ার নামে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা৷ টাকা না দিলে কার্ড করে দেন না বলেও অভিযোগ করেছেন তার এলাকার ভোটাররা।

বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, গর্ভকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য কার্ড পাওয়ার আগে ও পরে পাঁচ হাজার টাকা না দিলে এই ইউপি সদস্য কার্ড বাতিল করার হুমকিও দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

টাকা দেওয়ার বিষয়টি কাউকে জানালে তার হেনস্তার শিকার হতে হয় সাধারণ জনগণের।

লক্ষিন্দর ইউনিয়নের বাসাবাইদ এলাকার বাসিন্দা মৃত আফসর আলীর ছেলে মাহমুদ আলী বলেন, ‘আমি গরিব ও বয়স্ক মানুষ কিন্তু, ভাতা পাই না। মেম্বারের কাছে গেলে তিনি বললেন, ভাতা করে দেব, কিন্তু আমাকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। পরে মেম্বারকে টাকা দিয়েছি, কিন্তু এখনো কার্ড করে দেয় নাই।

‘শুধু আমার কাছ থেকেই নয়, আরও বহু মানুষের কাছ থেকেও নিয়েছেন,’।

একই এলাকার আব্দুস সালাম নামে একজন বলেন, ‘আমি মেম্বারের কাছে গিয়েছিলাম বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, টাকা ছাড়া এসব কার্ড করা যায় না। আমার কাছে কোনো টাকা ছিল না। পরে ঋন করে মেম্বারকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছি। এখনও কার্ড করে দেয় নাই। টাকাও ফেরত দেয় নাই।’

আব্দুস সালামের আরো অভিযোগ, ‘ টাকা দিতে দেরি হলে মেম্বার ওই টাকা নেওয়ার জন্য আমার সঙ্গে অনেক খারাপ আচরণ করেছেন। বলেছেন, আর জীবনেও আমার ও আমার পরিবারের কাউকে কার্ড করে দিবেন না।’

আব্দুল আলী নামে একজন অভিযোগ করে বলেন, ‘কার্ড করতে নাকি অনেক টাকা লাগে। উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তাকে নাকি ঘুস দিতে হয়। উপজেলার কর্মকর্তাদের টাকা না দিলে কার্ড করা যায় না- এসব কথা বলে মেম্বার আমার কাছ থেকে কার্ড করার আগে চার হাজার টাকা নেন। আমি ঋণ করে তাকে টাকা দেই। পরে আমাকে অনেক দিন ঘুরিয়ে কার্ড করে দিয়েছে।’

নাম প্রকাশ না করে ওই গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, তারা কার্ড করার আগেই ইউপি সদস্য নরুল ইসলামকে পাঁচ হাজার টাকা করে দিয়েছেন। যারাই টাকা দেন তাদেরই কার্ড হয়েছে। অনেকের কার্ড করে দেবেন বলে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কেউ আগে টাকা না দিলেও পরে ব্যাংক থেকে ভাতা পাওয়ার সময় টাকা তুলে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

পাঁচ হাজার টাকা নেওয়ার পরও তিনি আরও টাকা দাবি করেন উল্লেখ করে গ্রামবাসীরা জানান, যদি কেউ মুখ খোলে তাহলে মেম্বার নুরুল ইসলাম তাদের কার্ড বাতিল করে দেওয়ার হুমকি দেন। তার লোকজন দিয়ে মারধরের হুমকি দেয়। তাই কেউ এই বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না।

লক্ষিন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একাব্বর আলী বলেন, ‘আমাদের কাছে কেউ ওই ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে নাই। বিষয়টা আমার জানা নাই । তবে অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, ‘টাকা নেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কোনো ভাতার কার্ড করার জন্য কারো কাছে টাকা-পয়সা চাইনি।’

ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, ‘এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here