কৃষি খাতে বেড়েছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ

0
469

খবর৭১:কৃষি খাতে বেড়েছে কৃষিঋণ বিতরণ। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণও। এ খাতে খেলাপি বা মন্দ ঋণের পরিমাণ এখন ৫ হাজার ২৭২ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যার প্রায় ৯০ শতাংশ রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংকগুলোর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ কৃষি ঋণ বিষয়ক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের জোর তত্পরতা এবং ব্যাংকগুলোর উদ্যোগের কারণে কৃষিঋণ বিতরণ বাড়ছে। তবে কৃষিঋণ খেলাপি হয়ে যাওয়ার বিষয়টি মোটেই ইতিবাচকভাবে দেখছেন না সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষিঋণে খেলাপির পরিমাণ ৫ হাজার ২২২ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে ৫০ কোটি টাকা বেড়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। যার মধ্যে প্রায় ৫ হাজার ৯৪ কোটি টাকা রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংকগুলোর। কৃষি খাতে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ২৬৯ কোটি খেলাপি ঋণ; সোনালী ব্যাংকে ১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা; রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে ৮০৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে।

কৃষিঋণে খেলাপির বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, কৃষকদের নানা ধরনের সমস্যার কারণে অনেক কৃষিঋণ খেলাপি হয়ে পড়ছে। তবে আমাদের খেলাপি ঋণ আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। কৃষিঋণে আমরা অনেক ভালো করছি। কৃষিঋণের মধ্যে শস্য খাতে ঋণ বিতরণে সব সময় প্রথম হয়।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে (জুলাই- জানুয়ারি) কৃষি খাতে ১২ হাজার ৭০২ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। আগের অর্থবছরের একই সময়ে এ পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ১৫৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের সাত মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় কৃষি খাতে ৫৪৩ কোটি টাকা বেশি বিতরণ হয়েছে। গেল সাত মাসে যে পরিমাণ বিতরণ হয়েছে তা চলতি অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬২ দশমিক ২৭ শতাংশ। একই সময়ে আদায় হয়েছে ১১ হাজার ৮৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের ২ দশমিক ৫ শতাংশ ঋণ পল্লী অঞ্চলে বিতরণ করতে হবে। পল্লী অঞ্চলে অর্থ সরবারহের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙা করা ও খাদ্য নিরাপত্তা সৃষ্টিতে সরকারের লক্ষ্যের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক এ নির্দেশনা জারি করে। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যবহার চালু করে এর সফলতাও পায়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিতরণ হয় প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। এ বছর বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ২০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় ৮টি ব্যাংকের জন্য নির্ধারিত ৯ হাজার ৫৯০ কোটি টাকা। আলোচ্য সাত মাসে এ খাতের ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে ৫ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। এদিকে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের জন্য এবার ১০ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। জানুয়ারি পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ৭ হাজার ৪০২ কোটি টাকা।

সাত মাসে কয়েকটি ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম, আবার কিছু ব্যাংক কোন ঋণ বিতরণই করতে পারেনি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচিত সময়ে বিদেশি খাতের ব্যাংক আল ফালাহ, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও নতুন সীমান্ত ব্যাংক কোনো ঋণ বিতরণ করেনি। এছাড়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম বিতরণ করেছে মধুমতি ব্যাংক ৮ দশমিক ২১ শতাংশ এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক করেছে ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ।

তবে এ সময়ে কিছু কিছু ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন লক্ষ্যমাত্রার ১৯২ শতাংশ, স্টেট অব ব্যাংক ইন্ডিয়া ১৮৭ শতাংশ, কমার্স ব্যাংক ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক শতভাগ, ব্র্যাক ব্যাংক ১১১ শতাংশ, ইস্টার্ন ব্যাংক ১৫৫ শতাংশ, মিডল্যান্ড ব্যাংক ১৫৭ শতাংশ, এনআরবি ১০৩ শতাংশ, প্রাইম ব্যাংক ১২৮ শতাংশ, শাহজালাল ইসলামি ব্যাংক ১২১ শতাংশ এবং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ১২৪ শতাংশ বিতরণ করেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিতরণ বিভাগ বলছে, কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জোর তত্পরতা এবং ব্যাংক গুলোর উদ্যোগের কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। অগ্রাধিকার খাত হিসেবে এ খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। আর ব্যাংকগুলোর দেয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ না হলে জরিমানারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব কারণেই কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক
খবর৭১/জি:

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here