কর্মসংস্থান ও বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা দ্বিতীয় তিস্তা সেতুতে খুলেছে উন্নয়নের নতুন দ্বার

0
498

আসাদুল ইসলাম সবুজ, লালমনিরহাট; উত্তরা লের পিছিয়ে পড়া জেলা লালমনিরহাটের যোগাযোগ ব্যবস্থা তথা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তিস্তা নদী উপর নবনির্মিত কাকিনা-মহিপুর সেতুটি খুলে দিয়েছে পিছিয়ে পড়া এ অ লের সম্ভাবনার নতুন দ্বার। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সাথে সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ পুরো অ লের কয়েক লাথ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও জীবনযাত্রার মানে প্রভাব ফেলছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পাশাপশি অবস্থান হলেও লালমনিরহাট ও বিভাগীয শহর রংপুরের মধ্যকার যোগাযোগের অন্তরায় তিস্তা নদী। সেই বাঁধা কাটাতে ২০১২ সালে ১২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ১২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা নদীর উপর ৮৫০ মিটার দীর্ঘ লালমনিরহাটের কাকিনা ও রংপুরের মহিপুরে দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতুর নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর ফলক উদ্বোধন করেন। এবছরের শুরুতে সেতুটির কাজ শেষ হবার পর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষা না করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জনগণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে গত এপ্রিল মাসে তা চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। যোগাযোগ ব্যবস্থায় অধিকতর উন্নয়ন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক রুট বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও বিভাগীয় শহর রংপুরের দূরত্ব কমিয়ে আনার জন্যই লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের রুদ্রেশ্বর ও রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়নের মহিপুর এলাকায় তিস্তা নদীর উপর দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণ করে সরকার।
দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, সেতুটি খুলে দেয়ার পর খুব অল্প সময়ের মধ্যেই রংপুর শহরের সঙ্গে লালমনিরহাটের আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলার লোকজন যোগাযোগ করতে পারছে। এর সুফল পাচ্ছে রংপুরের পিছিয়ে থাকা গঙ্গাচড়া উপজেলার মানুষও।
ব্যবসায়ী অভিমত, সেতুটি এ অ লের ব্যবসা-বাণিজ্য ও উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতে দারুণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরের সঙ্গে সড়কপথে বিভাগীয় শহর রংপুর ও ঢাকার দূরত্ব কমেছে প্রায় ৬০ কিলোমিটার। এতে তারা কম সময়ে কাঁচামালসহ কৃষিজাত পণ্য পরিবহনে সক্ষম হচ্ছেন। তাছাড়া বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যও দ্বিগুণ বৃদ্ধির পাশাপাশি বন্দরের গুরুত্ব অনেকগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে দাবি করছেন তারা। বুড়িমারী স্থলবন্দর ব্যবহারকারী মেসার্স সায়েদ এন্টারপ্রাইজ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও আমদানিকারক ব্যবসায়ী সায়েদুজ্জামান সাঈদ বলেন, ‘কাকিনা-মহিপুর দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু চালুর ফলে বুড়িমারী-লালমনিরহাট-বড়বাড়ী হয়ে ঘুরে আর রংপুর যেতে হচ্ছে না। এতে অল্প সময়ে পণ্য গন্তব্যে পাঠানো যাচ্ছে। কমেছে পরিবহন খরচও।’
কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনার কলেজছাত্র মেহেরাজ ফাহিম বলেন, সেতুটি চালুর ফলে রংপুরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়েছে। লালমনিরহাটের ৪টি উপজেলার শিক্ষার্থীরা বাড়িতে থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিংসহ রংপুরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার সুযোগ সহজ হয়েছে।
হাতিবান্ধার ওয়াহিদ মুরাদ বলেন, অসুস্থ রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অতিরিক্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার পথ ঘুরে রংপুরে নিতে হতো। অনেক সময় দীর্ঘ পথ হওয়ায় অসুস্থ রোগী রংপুর পৌছানোর আগেই মৃত্যুবরণ করত। সেতুটি খুলে দেয়ায় সময় ও য়াতায়াত খরচ দু’টোই কমে এসেছে, এতে উন্নত চিকিৎসা সেবা গ্রহন সম্ভব হচ্ছে। মূলত সেতুটির দ্বার খুলে যাওয়ায় রংপুর ও লালমনিরহাট দু’জেলার উন্নয়নের দুয়ার খুলে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দিনরাত মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার ছোট-বড় যানবাহন এই রুট দিয়ে চলাচল করছে।
কালীগঞ্জ উপজেলার চাপারহাট এলাকার বাবলু মিয়া, সফিকুল ইসলামসহ অনেক অটোরিক্সা চালক জানান, কালীগঞ্জ থেকে রংপুর যেতে আগে লালমনিরহাট শহর হয়ে যেতে হত। তাতে সময় ও খরচ দুইই বেশী লাগতো। কিন্তু বর্তমানে সেতুটির কারনে সে পথ এখন অনেক সহজ এবং সময় ও খরচ সাশ্রয়ী। ফলে এই রুট দিয়ে প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার অটোরিক্সা যাওয়া আসা করছে।
লালমনিরহাটের চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও বিশিষ্ট শিল্পপতি শেখ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘সেতুুটি পিছিয়ে থাকা রংপুর অ লের ইতিবাচক আর্থসামাজিক পরিবর্তনের সুযোগ এনেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থান ও বাণিজ্য সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।’
লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন বলেন, ‘তিস্তা নদী লালমনিরহাট ও রংপুরবাসীর উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্তরায় ছিল। এঅ লের দারিদ্র্যপীড়িত মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে কাকিনা-মহিপুরে দ্বিতীয় তিস্তা সড়ক সেতু নির্মাণ করেছে সরকার।’
খবর৭১/এসঃ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here