ইউজিসির নির্দেশনা মানছে না বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়

0
390
ইউজিসির নির্দেশনা মানছে না বেসরকারি অনেক বিশ্ববিদ্যালয়

খবর৭১ঃ
অনলাইনে ক্লাস গ্রহণ, ভর্তি ও পরীক্ষা সংক্রান্ত ইউজিসির নির্দেশনা মানছে না বেশকিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। করোনা পরিস্থিতির কারণে যেসব শিক্ষার্থী সেমিস্টার ফি পরিশোধ করতে পারেননি তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বকেয়া অর্থ পরিশোধ করতে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে এসব প্রতিষ্ঠান।

আর যারা টাকা দিতে পারেননি তাদের পরীক্ষার ফল আটকে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আটকে দেয়া হয়েছে শিক্ষার্থীর পরবর্তী সেমিস্টারে ভর্তি। আবার টাকা ছাড়া পরের সেমিস্টারে ভর্তিও নেয়া হচ্ছে না। এখানেই শেষ নয়, বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করছে না। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক বেতন দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) ভুক্তভোগীদের দায়ের করা আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক অভিযোগ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্নভাবে আমরা শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অন্য জনবলের কাছ থেকে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে অভিযোগ পাচ্ছি। এসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী ভর্তি, পরীক্ষা গ্রহণ এবং শিক্ষক-কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বেতনভাতা দেয়ার ক্ষেত্রেও নানা কৌশল অবলম্বন করছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান বেতনভাতা দিচ্ছে না। কথা ছিল যে, জুলাই মাসে সেমিস্টার শুরু করবে তারা।

কিন্তু কেউ কেউ তিন সেমিস্টার ধরে কার্যক্রম চালাচ্ছে। শিক্ষার্থীদেরও নানা কষ্টের কথা শুনছি। অথচ অনলাইন কার্যক্রমের অনুমতি সম্পর্কিত সার্কুলারে সুস্পষ্টভাবে করণীয় উল্লেখ আছে। তারা নির্দেশনা প্রতিপালনের অঙ্গীকারও করেছিল। তিনি বলেন, আমরা ভুক্তভোগীদের কাছে লিখিত অভিযোগ চেয়েছি। এর আলোকে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

ইউজিসি সূত্র জানায়, নির্দেশনা অমান্য করে নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পর্যন্ত টিউশন ফি আদায়ে শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এর মধ্যে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অফ হেলথ সায়েন্স অন্যতম। টিউশন ফি জমা না দিলে আগামী মাস থেকে ক্লাস করতে দেয়া হবে না বলে এসব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে।

অথচ নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি ও পরবর্তী সেমিস্টার শুরু সংক্রান্ত ৭ মে জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়, চলমান সেমিস্টারে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী সেমিস্টারে কোর্স রেজিস্ট্রেশন ও ক্লাস করার সুযোগ দিতে হবে। হাতেগোনা ৭-৮টি বাদে বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ পেয়েছে ইউজিসি। এছাড়া বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে এপ্রিল থেকে শিক্ষক ও জনবলকে বেতনভাতা না দেয়া এবং আংশিক দেয়ার অভিযোগ আছে। জানতে চাইলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের আয়ে পরিচালিত হয়। আর সেই উৎস হচ্ছে শিক্ষার্থী ফি।

শিক্ষার্থীরা যদি একেবারে টিউশন ফি দেয়া বন্ধ করে দেয় তবে তো প্রতিষ্ঠান চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। কেননা এ অর্থে বাড়িভাড়া, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষার্থী ও প্রতিষ্ঠান উভয়কে সহনীয় হতে হবে। যতটা মানবিক হওয়া যায় সেই আহ্বান থাকবে। এরপরও যদি কেউ তার ব্যতিক্রম করে, তাদের চিহ্নিত করে ইউজিসি ব্যবস্থা নেবে। আমাদের কাছে এ ধরনের অভিযোগ এলে সতর্ক ছাড়া আর কিছু করার থাকে না।’

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ইউজিসি পরিচালক ড. ফখরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- ‘সাধারণ নির্দেশনাবলীর অনুচ্ছেদ ৪, ৫, ৬ ও ৭ এর ব্যত্যয় ঘটিয়ে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা অথবা পরিচালনার নিমিত্ত অন্য কোনো নির্দেশনা প্রদান করে থাকলে প্রমাণক/ডকুমেন্টসহ তা private.ugc-gmail.com এ প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হল।’

উল্লেখ্য, ইউজিসি মোট ২৩টি নিদের্শনা দেয় ৭ মে। এর ৪ নম্বর নির্দেশনায় অস্বচ্ছলতায় নিপতিত শিক্ষার্থীকে বিদ্যমান সেশনসহ অন্যান্য ফি মওকুফ, হ্রাস বা কিস্তিতে দেয়ার সুযোগ দেয়ার কথা বলা আছে। ৫ নম্বরে ফি আদায়ে মানসিক চাপ না দেয়া, ৬ নম্বরে বিনাবেতনে পড়ার সুযোগ নিশ্চিত এবং ৭ নম্বরে কোনো যৌক্তিক কারণে শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে না পারলে অসমাপ্ত কোর্স পরে সম্পন্ন করার কথা বলা আছে। অথবা কোনো শিক্ষার্থী পরে গ্রেড উন্নয়ন করতে চাইলে পরবর্তী সেমিস্টারে বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে সুযোগ দিতে হবে। এই উভয় ক্ষেত্রে কোনো অতিরিক্ত ফি আরোপ করা যাবে না।

ইউজিসির সদস্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, সমীক্ষায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইনের সক্ষমতা ইউজিসি জেনেছে। এরপরও শিক্ষার্থীদের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে বেশ কিছু গাইডলাইন দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শর্তগুলো ভঙ্গ করবে না বলে অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু শিক্ষকদের বেতন কর্তন, ছাঁটাই কিংবা শিক্ষার্থীদের চাপ প্রয়োগ করে টিউশন ফি আদায় করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here