আদেশ কার্যকরে উদাসিন কর্তৃপক্ষ: সাইনবোর্ডে ইংরেজি প্রীতির আধিক্য

0
462

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকে:
ভাষা আন্দোলনের ৭০ বছর পরও সৈয়দপুর শহরে বাংলায় সাইনবোর্ড লেখার প্রবণতা কমে আসছে, বাড়ছে ইংরেজি ভাষায় সাইনবোর্ডে লেখার সংখ্যা। শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে তাকালে বোঝাই যায় না, এটি বাংলাভাষী কোন মফস্বল শহর। অধিকাংশ সাইনবোর্ড বড় বড় ইংরেজি অক্ষরে লেখা। কিছু সাইনবোর্ডে বাংলার স্থান হলেও তা অবজ্ঞার সঙ্গে লেখা হয়েছে। এসব দেখার দায়িত্ব পৌরসভার ওপর ন্যস্ত থাকলেও বছরের পর বছর তাদের কোন তৎপরতা দেখা যায় না। বলা যায় বাংলা প্রচলন নিয়ে উদাসিন কর্তৃপক্ষ। আবার অনেকে জানেন না বাংলা ভাষা ব্যবহারের সরকারি সিদ্ধান্ত ও উচ্চ আদালতের আদেশের কথা।
শহরের মূল প্রাণকেন্দ্র বঙ্গবন্ধু সড়ক, শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়ক, শহীদ জহুরুল হক সড়ক, শেরে বাংলা সড়ক ও শহীদ তুলশীরাম সড়কের চিত্র এমনই। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্র্যান্ড সপ, শো-রুম, কফি হাউস, রেস্তোঁরা ও ফাস্ট ফুডের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ সাইনবোর্ড ইংরেজিতে লেখা। সেখানে বাংলা অক্ষরের ছিটেফোঁটাও নেই।
সরেজমিনে অভিজাত শপিং মার্কেট চৌধুরী টাওয়ার, সৈয়দপুর প্লাজা ও এসআর প্লাজা মার্কেটের বিভিন্ন ফ্লোর ঘুরে দেখা মেলে ইংরেজি সাইনবোর্ডের আধিক্য। ব্র্যান্ডের সপ-শোরুম, কফি হাউস, পার্লার, রেস্টুরেন্ট ও রেস্তোঁরার নাম ইংরেজিতে লেখা। অধিকাংশ সাইনবোর্ডে বাংলা ভাষার ঠাঁই হয়নি। তবে দু-একটি প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডের নীচে ছোট করে বাংলা লেখা হয়েছে, যা চোখে পড়ার মত না। এছাড়াও অন্যান্য প্রধান সড়কের সাইনবোর্ডেও একই চিত্র বিদ্যমান।
এ ব্যাপারে এসআর প্লাজা মার্কেটের মেন্স ভিউ’র ব্যবসায়ী মো. মানিক বলেন, ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রির কারণে দোকানের নাম ইংরেজিতে লেখা হয়েছে। সাইনবোর্ডে বাংলা লিখতে হবে, এমন আইন আছে তা তিনি জানেন না। এখন জানায় ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা ভাষায় নাম লিখবেন বলে জানান তিনি।
সৈয়দপুর প্লাজা মার্কেটে বিদেশী পণ্যের ব্র্যান্ড সপ লোটো’র স্থানীয় ম্যানেজার মো. শহীদুল ইসলাম জানান, সপের সাইনবোর্ড কোম্পানী থেকে স্থাপন করা হয়। সাইনবোর্ড বাংলা লেখা নিয়ে কিছু শহরে সমস্যা হয়েছে। এ নিয়ে কোম্পানীর কর্তৃপক্ষ ভাবছে। বিষয়টি তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে উল্লেখ করেন।
প্লাজা মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শরিফুল ইসলাম সাজু বলেন, ইংরেজিতে লেখা ব্র্যান্ডের শোরুমের সাইনবোর্ড দেখে দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তবে ইংরেজির সঙ্গে বাংলা লেখা হলেও কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। অথচ বাংলাভাষী সাধারণ এই শহরে ইংরেজির প্রাধান্য দেয়ার প্রয়োজন হয় না। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা চাইলে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি নাম লিখতে পারেন। এটি মালিকদের বাংলার প্রতি অবজ্ঞা মানসিকতার প্রকাশ বলে ক্ষোভ জানান তিনি।
শহরের তরুণ আইনজীবী এসএম রাসেল রানা বলেন, আইন বলছে সব সাইনবোর্ড ও নামফলক বাংলায় লিখতে হবে। তবে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি লেখা যাবে। কেউ আইন অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণসহ জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু অনেকে জানেন না সরকারের এ রকম সিদ্ধান্ত ও উচ্চ আদালতের আদেশের কথা। তবে সাইনবোর্ড ও নামফলকে বাংলা লেখার বিষয়টি নিয়ে সাধারণের মাঝে আরও জোরালো প্রচার প্রচারণার প্রয়োজন রয়েছে।
সৈয়দপুর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক কহিনুর বেগম বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর প্রস্তাব গৃহিত হয়। উচ্চ আদালতেরও এমন আদেশ রয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এখনও আমরা সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি, ভুলভাল বানানেরও ছড়াছড়ি রয়েছে নামফলকে। এটি দেখার দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষেরও রয়েছে সরকারি সিদ্ধান্ত কার্যকরে গাফিলতি। এমন নানামুখী দুর্বলতায় সাইনবোর্ড ও নামফলকে বাংলা লেখা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না বলে অভিমত ব্যক্ত করেন এই শিক্ষাবিদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here