সূর্যদ্বয় ও সূর্যাস্তসহ অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি তারুয়া সমুদ্র সৈকত

0
1471

মিজানুর রহমান- খবর ৭১ ভোলা :
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে নদী বেষ্টিত একমাত্র দ্বীপ জেলা ভোলা। পূর্বে মেঘনা, উত্তরে ইলিশা, পশ্চিমে তেঁতুলিয়া আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এর মাঝে ৩ হাজার ৪শ ৩ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ব-দ্বীপ জেলা ভোলা। রূপালী ইলিশ, ধান আর সুপারির জন্য বিখ্যাত এ জেলা। এই জেলার উপ শাখা হিসেবে রয়েছে চর মানিক, চর জব্বার, চর নিউটন, চর নিজাম, চর জংলী, চর মনপুরা, চর ফয়েজ উদ্দিন, চর জহিরউদ্দিন, চর কচুয়া, চর সৈয়দ, ভাসান চর, চর পাতিলা, চর কুকরী মুকরী ও ঢালচর সহ ছোট বড় অসংখ্য চর। এসকল চরের মাঝে লুকিয়ে আছে সূর্যদ্বয় ও সূর্যাস্তসহ অপরূপ সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি। এখানে না আসলে অনুভব করা যাবে না এর সৌর্ন্দয্য।
জেলা শহর থেকে দেড়’শ কিলোমিটার দক্ষিনে এই তারুয়া সমুদ্র সৈকতের অবস্থান। একশত পয়ত্রিশ কিলোমিটার পাকা সড়কের পর পনের কিলোমিটার নৌ-পথ পেরিয়ে সেখানে যেতে হয়। তারুয়া সমুদ্র সৈকতে পর্যটকরা একই সঙ্গে উপভোগ করতে পারেন বিশাল সমুদ্রের বিস্তীর্ণ জলরাশি। নানা জাতের পাখিদের কল-কাকলি, বালুকাময় মরুপথ আর ম্যানগ্রোভ বনা লের ছায়াঘন মনকাড়া নিবিঢ় পরিবেশে সময় কাটানোর সুযোগ। বৈচিত্রময় প্রাণী আর সাগরের উত্তাল গর্জন সব মিলিয়ে মায়াবী হাতছানী। প্রকৃতি যেন নিজ হাতে তারুয়া দ্বীপটিকে সাজিয়ে তুলেছেন। তবে সেখানে এখনো গড়ে উঠেনি মানুষের বসবাস। দ্বীপটিতে হরিণ ও ভাল্লুকসহ নানা প্রাণী ও দৃষ্টিনন্দন মাটি রয়েছে। তাড়–য়ার সৈকতে দেখা মিলবে চকচকে সাদাবালি আর লাল কাঁকড়ার লুকোচুরি। পাশাপাশি দেখা মিলবে সূর্যদ্বয় ও সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য। সবুজ বৃক্ষের সমারোহ আর পাখিদের কলরবে মুখরিত তারুয়া দ্বীপ পর্যটন এলাকা হিসেবে গুরুত্বের দাবী রাখে। কিন্তু তারুয়া সমুদ্র সৈকতের এই প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য্যরে কথা দেশবাসী তো দুরের কথা ভোলার বহু মানুষের কাছে এখনও অজানা। কর্ম চা ল্য জীবনের মাঝে কিছুটা সময় অবকাশ যাপনের জন্য প্রকৃতি প্রেমিরা ইচ্ছে করলেই এ চরে এসে ঘুরে যেতে পারেন।
তাড়ুয়া ম্যানগ্রোভ বনা লঃ
এই ঢালচরের ৩১.৩১ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ২৮.২০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে সুবিশাল বনা ল রয়েছে। এর মধ্যে তাড়ুয়ার বন অন্যতম। এই তাড়–য়া বনে রয়েছে গেওয়া, গড়ান, কেওড়া, বাইন, রেইনট্রিসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ। শীত এলেই এখানে দেখা মিলবে বিভিন্ন প্রজাতির হাজার হাজার পাখির। এখানে পরিকল্পিতভাবে বনা ল শুরু হয় ৭৬ সালে। কোন সিংহ পশুর ভয় না থাকলেও বনে রয়েছে শিয়াল, বন বিড়াল, হরিণ, সাপসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণি। এই বাগানের মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া সরু রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে একটু ভেতরে প্রবেশ করলেই মনে হবে এ যেন আরেক ভুবন। সেখানে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট বিশাল এক খন্ড শীতল ছাঁয়া বিশিষ্ট মাঠ। স্থানীয়দের কাছে জায়গাটা বরই তলা নামে পরিচিত।
তাড়–য়া সমুদ্র সৈকত ঃ
বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের শেষ প্রান্তে বঙ্গোপসাগরের অবস্থান। তাড়–য়ার সাদা বালির বিশাল সমুদ্র সৈকতে দেখা মিলবে নোনা পানির ঢেউ। সেখানে সাদা বালি আর নোনা পানিতে স্বাদ মিলবে কক্সবাজার অথবা কুয়াকাটা সৈকতের। পাশাপাশি সৈকতে দেখা মিলবে লাল কাকড়ার। বালির উপরে ছোট ছোট পা দিয়ে দৌঁড়ে চলে এসব লাল কাঁকড়ার দল। মানুষে অবস্থান টের পেলে এরা চোখের নিমিষেই লুকিয়ে পড়ে বালির গর্তে।
সূর্যদ্বয় ও সূর্যাস্ত
দিনের প্রথম প্রহরে তাড়–য়া সৈকতে দাঁড়ালে দেখা যাবে সমুদ্র থেকে ভেসে ওঠা লাল টকটকে সূর্য। সিঁড়ি বেয়ে একপা দু’পা করে আকাশের পথে যাচ্ছে। আবার সন্ধ্যায় দেখা মিলবে সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে সূর্যের মিসে যাওয়া দৃশ্য।
বিনোদন কেন্দ্র ঃ
এই সমুদ্র সৈকতের পাশে রয়েছে বিশাল তাড়–য়া বন। বনের ভেতরেই প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা শীতল ছাঁয়া বেষ্টিত মাঠ। সেখানে একাধিক বাংলা ছায়াছবির দৃশ্য শুটিং হয়েছে। এই চরেই বাংলা ছায়াছবি “অনেক সাধের ময়না” এর বাসর ঘর ও কয়েকটি গানের দৃশ্যের চিত্রায়ন হয়।
এলাকাটির নামকরণ প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ বছর আগে চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচরের সাগরের বুকে জেগে উঠে সবুজের এই এলাকা। জেগে ওঠা ওই এলাকায় মাছ শিকার করতেন স্থানীয় জেলেরা। জেলেরা যখন নদীতে জাল ফেলতেন, তখন শত শত তারুয়া নামের এক প্রকার মাছ উঠে আসতো তাদের জালে। হয়ত সে কারণেই এ এলাকাটির নামকরণ করা হয়েছে তারুয়া। যা এখন সবার কাছে তারুয়া সমুদ্র সৈকত নামে পরিচিত।
নবাগত ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক জানান, ভোলায় পর্যটনের সম্ভাবনা প্রচুর। কারণ এখানকার ছোট ছোট দ্বীপগুলোতে একটি প্রাকৃতিক পরিবেশ আছে, যাকে বলে ইকোটুরিজম। আমরা সেটা উৎসাহিত করার চেষ্টা করবো। এখানে সরকারি বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো গেলে আরো অবকাঠামো তৈরী হবে। পাশাপাশি আরো বেশি বেশি পর্যটক আসবে বলেও জানান তিনি।
খবর৭১/এস;

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here