দেশের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থতায় ভুগছেন তিনি। চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থানরত অবস্থায় তার দেশে ফেরার প্রক্রিয়ায় বিমানের বিশেষ রুট পরিবর্তনের প্রস্তাব দেওয়া হলেও, খালেদা জিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। এমন মানবিক সিদ্ধান্তে উঠে এসেছে তার সহযাত্রীদের প্রতি দায়িত্বশীলতার উদাহরণ।
গত ২ মে (শুক্রবার), বাংলাদেশ বিমানের কর্তৃপক্ষ ও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, যেন বিমানের লন্ডন-সিলেট-ঢাকা রুটটি পরিবর্তন করে লন্ডন-ঢাকা-সিলেট করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল অসুস্থ খালেদা জিয়াকে ঢাকায় সরাসরি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে সুবিধা দেওয়া। তবে প্রস্তাবটি বেগম জিয়ার কাছে পৌঁছালে তিনি তা নাকচ করে দেন। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, তার জন্য অন্যান্য যাত্রীর দুর্ভোগ সৃষ্টি করা তিনি সমর্থন করেন না। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং সদস্য শামসুদ্দিন দিদার।
বেগম জিয়া জানিয়েছেন, তিনি বাংলাদেশ বিমানের একটি নিয়মিত ফ্লাইটে দেশে ফিরবেন এবং অন্য কোনো যাত্রীর জন্য যেন অতিরিক্ত কষ্ট না হয়, সেটিই তার মূল বিবেচনা। আগামী ৪ মে সন্ধ্যা ৬টায় (লন্ডন সময়) হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে তার ফ্লাইটটি উড্ডয়ন করবে। বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে তার আগমন ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার দুই পুত্রবধূও দেশে ফিরতে পারেন। উল্লেখ্য, গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমির শেখ তামিমের সহায়তায় একটি বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডনে যান তিনি। বর্তমানে তার বয়স ৭৯ বছর এবং তিনি লিভার সিরোসিস, হার্ট, ফুসফুস, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস ও কিডনি সমস্যাসহ একাধিক জটিল রোগে আক্রান্ত।
দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন এবং কারাবাসের অভিজ্ঞতা নিয়ে বেগম জিয়া এখন এক গুরুত্বপূর্ণ পুনরাবর্তনের পথে। গণআন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি নির্বাহী আদেশে মুক্তি পান। এরপর থেকেই তার উন্নত চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয় বিএনপি। আজও তার নেতৃত্বকে ঘিরে দেশের একটি বড় রাজনৈতিক শক্তি আশা দেখছে। খালেদা জিয়ার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সহমর্মিতা তার রাজনৈতিক দৃঢ়তা এবং সামাজিক মূল্যবোধেরই প্রতিফলন।