প্রবীণদের এক-চতুর্থাংশই অপুষ্টির শিকার

0
105

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর এক-চতুর্থাংশই অপুষ্টিতে ভুগছেন। ফলে তাদের মধ্যে বাড়ছে নিরাময় অযোগ্য ব্যাধি। দেশের প্রবীণরা কী কী কারণে অপুষ্টিতে ভোগেন তা খুঁজতেই এই গবেষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ ও ইনফরমেটিক্স বিভাগ। গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে পুষ্টিহীন লোকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তবে এর মধ্যে প্রবীণদের সংখ্যাই বেশি। দেশে প্রতি ১০০ জন প্রবীণের মধ্যে পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন ২৫ জন। আর পুষ্টিহীনতার ঝুঁকিতে রয়েছেন ৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবীণ। পুরুষের তুলনায় অপুষ্টিতে ভোগা নারী প্রবীণের সংখ্যা বেশি। এই পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

গবেষণায় দেখা গেছে, বিষণ্নতায় ভোগা প্রায় ৪০ শতাংশ প্রবীণ অপুষ্টিতে ভুগছেন। স্বাভাবিকের তুলনায় বিষন্নতায় ভোগা প্রবীণদের অপুষ্টিতে ভোগার আশঙ্কা ১৫ দশমিক ৬ গুণ বেশি। জীবনসঙ্গীবিহীন (বিধবা, বিপত্নীক, অবিবাহিত) প্রবীণদের মাঝে অপুষ্টির হার ২৮ দশমিক ৬ শতাংশ ও পুষ্টিহীনতার ঝুঁকি ৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

শীর্ষক অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫২ শতাংশ প্রবীণ বাত-ব্যথায় ভুগছেন, যাদের অর্ধেকের বেশি মাঝারি মাত্রায় শারীরিকভাবে অক্ষম। পুরুষদের মধ্যে এই হার ৪৩ দশমিক ৪ এবং নারীদের মধ্যে ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

জেরিয়াট্রিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সামনুন এফ তাহা ইত্তেফাককে বলেন, প্রত্যেক দেশে প্রবীণদের জন্যে দুইটি টিকা বাধ্যতামূলক। এগুলো হলো—ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন ও নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন আমাদের দেশে প্রতি বছর অক্টোবর-নভেম্বর মাসে একবার করে দিতে হবে। তিনি বলেন, প্রতি বছর ফ্লুর ভ্যাকসিন নিতে হয়, কারণ প্রতি বছর ফ্লুর ধরন বদলে যায়। বয়স্কদের আরেকটা সমস্যা বেশি হয়, তা হচ্ছে নিউমোনিয়া। নিউমোনিয়া থেকে বাঁচতে নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন নিতে হয়।

এই ভ্যাকসিন জীবনে একবার নিলেও চলে, আবার কিছু আছে পাঁচ বছরে একবার নিতে হয়। প্রবীণদের এই চিকিৎসক বলেন, আমাদের দেশে বাচ্চাদের যেভাবে রোগপ্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে কাজ হয়, বয়স্কদের ক্ষেত্রে তা ঠিকমতো হয় না। ফলে বয়স্কদের সমস্যা বেশি হয়। প্রবীণদের এই দুই ভ্যাকসিন না নেওয়ার কারণে সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া এ ধরনের শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যাগুলো বেশি দেখা দেয়। আমাদের দেশে এই দুই টিকা অতিদ্রুত পঞ্চাশোর্ধ্বদের জন্য বাধ্যতামূলক করে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

অধ্যাপক সামনুন বলেন, শীতের সময় বয়স্কদের অস্টিয় আর্থ্রাইটিস, হাড়ের সমস্যার কারণে সারা শরীরে ব্যথা বেড়ে যায়। বয়স্কদের আরও সমস্যা রয়েছে। গ্রামে সব বাসায় টয়লেট দূরে থাকে, বয়স্কদের রাতে কয়েকবার উঠতে হয় টয়লেটে যাওয়ার জন্য, এটা একটা বিশাল সমস্যা। টয়লেট যাওয়ার সময় তারা অনেক ক্ষেত্রে পড়ে গিয়ে গুরুতর জখম হন। আমাদের এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। অনেকের প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র জোগাড় করার সামর্থ্য নেই। তাদের জন্য শীত নিবারণ বেশ কঠিন। রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে প্রবীণদের জন্য বড় সমস্যা বায়ুদূষণ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here