বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে: প্রধান বিচারপতি

0
21

বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

শনিবার (২৫ জানুয়ারি) এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রধান বিচারপতি বলেন, এই আদালতগুলো বাণিজ্যিক বিরোধ দ্রুত নিষ্পত্তিতে সহায়ক হবে। ফলে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা সময়োপযোগী ও কার্যকর আইনগত প্রতিকার লাভে সক্ষম হবেন, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করবে ও অধিক পরিমাণে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে। এ উদ্যোগ বিচারব্যবস্থাকে পরিবর্তনশীল অর্থনীতির চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে এবং দেশকে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও বিনিয়োগবান্ধব গন্তব্য হিসেবে উপযোগী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি তার বক্তব্যে তরুণ প্রজন্মের জন্য শিক্ষাক্রমে সাংবিধানিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেন। তিনি আরও বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সংঘটিত বিপ্লব সাংবিধানিকতা ও আইনের শাসনের প্রতি এ দেশের তরুণ প্রজন্মের ক্রমবর্ধমান প্রতিশ্রুতি ও সচেতনতার বিষয়টি আমাদের সামনে নতুন করে তুলে ধরেছে। একই সঙ্গে এর মাধ্যমে নতুন একটি প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে প্রচেষ্টা বর্তমানে চলমান রয়েছে, এর অংশ হিসেবে শিক্ষার প্রাথমিক পর্যায়েই তরুণদের কীভাবে সাংবিধানিকতার মৌলিক দিকগুলোর সঙ্গে পরিচিত করানো যায়, তার প্রয়োজনীয়তা স্বীকৃত হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সংবিধানে উল্লিখিত নাগরিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কে তরুণদের জ্ঞান অর্জনের সুযোগ করে দেওয়া হলে সেই অর্জিত শিক্ষা একটি ন্যায়সংগত ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে এ দেশের তরুণদের অবদান রাখার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি।

তিনি সেমিনারে বিচার বিভাগীয় সংস্কারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন নতুন পদ্ধতি চালু করার পাশাপাশি সংবিধানের বিদ্যমান বিধানের কার্যকর প্রয়োগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, সংবিধানের ষষ্ঠ অংশের প্রথম অধ্যায়ের বেশ কিছু বিধান, যা কখনো সেভাবে প্রয়োগ করা হয়নি, তা বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে নতুন করে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল কমিটি ফর জুডিশিয়াল রিফর্মের সভাপতি আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামকে সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদের আওতায় অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ এবং ১০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজধানীর বাইরে হাইকোর্ট বিভাগের অধিবেশন আয়োজনের সম্ভাবনা অনুসন্ধানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন তিনি। সংবিধানের ১০৭ অনুচ্ছেদের ৩ ও ৪ দফার সম্মিলিত পাঠের আওতায় প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের দ্বিকক্ষবিশিষ্ট কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি।

তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। অধস্তন আদালতের বিচারকদের বদলি ও পদোন্নতিতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নসহ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রধান বিচারপতি ফেলোশিপ চালুর বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট কাজ করে যাচ্ছে। বিচার বিভাগ ডিজিটালাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের কোম্পানি বেঞ্চে কাগজমুক্ত কার্যক্রম পরিচালনা ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে এবং ভবিষ্যতে দেশের জেলা আদালতগুলোয় এই প্রক্রিয়া চালু করা হবে। বিচারসেবা সহজীকরণ সুপ্রিম কোর্টে যে হেল্পলাইন সেবা চালু করা হয়েছে, তার মাধ্যমে বিচারসেবা প্রার্থীরা উপকৃত হচ্ছেন এবং বিচারসেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধান বিচারপতি।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় মৌলভীবাজারের দুসাই রিসোর্টে ‘জুডিশিয়াল ইনডিপেনডেন্টস অ্যান্ড ইফিসিয়েন্সি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক রিজিওনাল সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন প্রধান বিচারপতি।

সভাপতিত্ব করেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম। সেমিনারে সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারা অংশ নেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here