উপদেষ্টাদের বক্তব্য শেখ হাসিনার সেই প্রতিধ্বনি: রিজভী

0
28

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে কিংস পার্টি করা হবে। আমরা এটাও শুনতে পাচ্ছি যে, বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলকে উপদেষ্টাদের পক্ষ থেকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এই জন্য কি রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে না?

শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর দশম তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, মানুষের ধারণা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। কিন্তু অনন্তকাল ধরে তারা সংস্কার করবে; এটা হতে পারে না।

রিভজী বলেন, আজ থেকে ১০ বছর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনকে গুলশানের কার্যালয়ে বালির ট্রাক দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এমন নিমর্মতার খবর শুনে মালয়েশিয়ায় অসুস্থ আরাফাত রহমান মৃত্যুবরণ করেন। এসব নির্যাতন ত্যাগ উপেক্ষা করে গত ৫ই আগস্ট আমরা একটা বাংলাদেশ কাঁপানো -পৃথিবী কাঁপানো বিজয় দেখেছি। এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সব রাজনৈতিক দল এই সরকারকে সমর্থন দিয়েছে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, জন প্রত্যাশা এই সরকার নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার জন্য কালক্ষেপণ না করে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিন্তু যখন শুনি আগে সংস্কার পরে নির্বাচন। তখন মনে হয়, শেখ হাসিনার সেই বক্তব্যের প্রতিধ্বনি; আগে উন্নয়ন-পরে গণতন্ত্র। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোন লোক, কোন উপদেষ্টা তাদের কাছ থেকে তো এটা শোভা পায় না।

রিজভী বলেন, যে গণতন্ত্রের জন্য ১৬ বছর ধরে এদেশের মানুষ অপেক্ষা করেছে-লড়াই করেছে-রক্ত ঝড়িয়েছে-নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে। এই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে এত দ্বিধা কেন? এত গড়িমসি কেন? এটা আজকে জনগণের জিজ্ঞাসা, এটা কি অন্যায়? গণতন্ত্র মানে আলোচনা হবে জিজ্ঞাসা হবে।

তিনি বলেন, বাজারে যে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে, এটার জন্য কি সমালোচনা করা যাবে না? সরকারের প্রশাসন যদি নিরপেক্ষ কাজ না করে, তার জন্য কি সমালোচনা করা যাবে না।

রিজভী বলেন, ভয় দেখান, ১/১১ এর পুরাবৃত্তি হবে। সব কিছু উপেক্ষা করে বছরের বছর বুক চিতিয়ে লড়াই করেছি-আন্দোলন করেছি। কোন বিষয়ে কথা বলতে হবে-আর বলতে হবে না দেশের প্রাগ্য রাজনীতিবিদদেরকে কি উপদেষ্টারা শেখাবে? আমাদের সকল আস্থা তো আপনাদের ওপর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমাদের কথা হল এত ঘড়িমসি কেন? কেন নির্বাচনের ডেট লাইন নেই? কেন হাসিনার কথার পুনরাবৃত্তি হবে?…আগে উন্নয়ন-পরে গণতন্ত্র। আরে আমরা তো এই কথা শুনতে চাই না, আগে সংস্কার-পরে নির্বাচন।

রিজভী বলেন, সংস্কার তো যুগের পর যুগ চলতে পারে। নানা কারণে নতুন নতুন সংস্কার হতে পারে। গণতন্ত্রের প্রবাহ তা আপনি আটকে রাখবেন কেন? এখন যে প্রশাসনে ৭০% আওয়ামী লীগের দোসর, ফ্যাসিস্টদের দোসর। তারাই তো দেশ চালাচ্ছেন। যারা বঞ্চিত হয়েছে, তাদের হয়তো প্রমোশন দিয়েছেন। তাদের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে দেন নি। অধিকাংশ সচিব ফ্যাসিস্টদের দোসর তাদের দিয়ে দেশ চালাচ্ছেন। জিনিসপত্রের দাম কমবে কি করে, কি করে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করবেন তাদের দিয়ে। তারাই তো বিভিন্ন জায়গায় ঘাপটি মেরে আছে, তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, আজকে চুরি, ডাকাতি বেড়ে গেছে, খুন-জখম বেড়ে গেছে। কেন বেড়েছে? ওই দোসররা রন্ধে রন্ধে আছে। কাকে দিয়ে জরিপ করাবেন? ব্যুরো অফিস সরকারী সংস্থা তাদেরকে দিয়ে নাকি জরিপ করাচ্ছে। তারা নাকি বলে আগে ইউপি নির্বাচন তারপর জাতীয় সংসদ নির্বাচন। যাদের দিয়ে জরিপ করাচ্ছেন তারা তো সরকারের পক্ষে কথা বলবে। জনসাধারণের সাথে কথা বলেন, দেখেন জনগণ কি বলে? আজকে ১৬ বছর ধরে তাদের তারা ভোট দিতে পারে না। তাদের ভোট দিয়ে তাদের সরকার গঠন করতে পারে না। বড় অফিস দিয়ে জরিপ করাচ্ছেন; বলাচ্ছেন যে, আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন; পরে পার্লামেন্ট নির্বাচন। এগুলো নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে কেউ কেউ রাজনৈতিক দল করার কথা বলছেন, মানুষ তো প্রশ্ন তুলতেই পারে। বিভিন্ন ধরনের কথা যদি আসে, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলো তো মনে করতেই পারে যে, অন্তবর্তী সরকারের কোন মাস্টার প্ল্যান রয়েছে।

তিনি বলেন, কোনো কোনো উপদেষ্টারা বিএনপিকে নিয়ে বিরূপ কথা বলছেন, এই যদি হয় অবস্থা। ১৬ বছর ধরে নিরবিচ্ছিন্ন আন্দোলন করে ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরো, সুমনের মত নেতা নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। যে দলের নেতাকর্মীরা এমন পথ পাড়ি দিয়েছে, তাদের বিরূপ মন্তব্য করছেন?

গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, বিএনপির নাম করে কেউ কেউ দুষকর্ম করতে পারে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, বহিস্কার করা হচ্ছে। লিখেন না ফলাও করে। পত্রিকায় বিএনপি কোন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলেই তার বিরুদ্ধে সাথে সাথে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্রে আরাফাত রহমান কোকোকে হত্যা করা হয়েছে। আজকে আমরা তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি- আল্লাহ যেন তাকে বেহেশত নসিব করেন। এ সময় তিনি লন্ডনে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া কামনা করেন।

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, সাবেক আহ্বায়ক সাইফুল আলম নীরব প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here