মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর :
নারী উদ্যোক্তাদের তৈরী পণ্যসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্যের সমারোহে সৈয়দপুরে চলছে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পণ্য মেলা।
গত ১ জুন শুরু হওয়া এ মেলা চলছে পক্ষকাল ব্যাপী। অনেক বাঁধা বিপত্তি পেরিয়ে উদ্বোধনের দিন থেকে নারী ও শিশুসহ সববয়সী মানুষের সমাগমে জমে উঠেছে ওই মেলা। সৈয়দপুর নারী উন্নয়ন ফোরামের উদ্যোগে নারীদের তৈরী পণ্যসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য নিয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে ফাইভস্টার মাঠে বসেছে এ মেলা। এর পাশাপাশি শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে বর্ণীল ঝর্ণা, নাগরদোলা, নৌকা, ডরিমন ট্রেন,ওয়াটার বোর্ট, শ্লীপার রাইডে চড়ার আনন্দ। রয়েছে কৃত্রিম ভুতের বাড়ি। বুধবার (৭ জুন) সন্ধ্যায় মেলা ঘুরে দেখা যায়,
শহরের রেলওয়ে অফিসার্স কলোনী এলাকার রেলওয়ে ফাইভস্টার মাঠ জুড়ে বর্ণীল আলোয় ৫৫ টি স্টল বসেছে। নারী উদ্যোক্তারা নিজেদের তৈরী হরেকরকম পণ্য দিয়ে স্টল সাজিয়েছেন। পণ্যের মধ্যে রয়েছে হাতের কারুকাজ করা থ্রী পিস,পর্দা,চাদর বেডশীট,শিশুদের পোশাক, পাটজাত গৃহস্থালি পণ্য, ঘর সাজানো কারুপণ্য, নকশীকাঁথা মাটির জিনিষপত্র, ও গৃহস্থালি কাজের দরকারি সব পণ্যের সমাহার। এছাড়া দৃষ্টিনন্দন গহনা, ভেষজ ও প্রসাধনসহ বিভিন্ন কোম্পানীর তৈজসপত্র। মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে শিশুদের বিনোদনের জন্য বিভিন্ন রাইডস্।
মেলার বিভিন্ন স্টলে দেখা গেল ভীড় করে নানাবয়সী নারী ও পুরুষ তাদের পছন্দের পণ্য কিনছেন। তবে হাতে তৈরী পণ্যের স্টলগুলো ছিলো ক্রেতা দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রে। মেলায় হাতে তৈরী কারু পণ্যের স্টলে পছন্দের পণ্য কিনছিলেন হাতিখানা এলাকার বাসিন্দা গৃহিণী বেলী বেগম। তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের আয়োজনে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মেলা শুরু হয়েছে জেনে মেলা ঘুরতে ও পছন্দের পণ্য কিনতে সন্তানকে নিয়ে এসেছি। সব পণ্যের স্টল ঘুরে ঘুরে ঘর সাজানোর বেশকিছু শো-পিস কিনেছি। শিশুদের বিনোদনে ডরিমন ট্রেন, নাগরদোলা,নৌকা,ওয়াটার বোর্ট, শ্লীপার রাইডস্ ও ভুতের বাড়ির আয়োজন দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এসব রাইডস্ এ শিশুরা মজা করে আনন্দ করছে। তিনি বলেন, মেলার পরিবেশ ও নিরাপত্তা দেখে ভালই লেগেছে। তবে মেলাটি মাসব্যাপী করলে আরও ভাল হতো। ইচ্ছে আছে আরেকবার মেলায় আসার। জানান ওই গৃহিণী। স্বামী সন্তান নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসা গৃহিণী রুপার সঙ্গে কথা হয় জুঁই মিম বস্ত্রমেলা স্টলে। তিনি জানান,শহরে বন্ধু বান্ধব নিয়ে সময় কাটানোর তেমন জায়গা নেই। সৈয়দপুরের এ মেলা কিছুটা হলেও সে অভাব পূরণ করছে। সেই সঙ্গে নারীদের পণ্য কেনাসহ বাচ্চাদের আনন্দ বিনোদনের যেসব আয়োজন করেছে মেলা কর্তৃপক্ষ তা সত্যিই খুব ভাল লেগেছে। তবে শরীরে ফোসকা পড়ার মত গরমে রাত ৮টার বদলে রাত ১০ টা পর্যন্ত দাবী জানান ওই গৃহিণী। মেলায় সোমা হস্তশিল্প স্টলের নারী উদ্যোক্তা আরজিনা বেগম ফুলু নারী ক্রেতাদের সমাগমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, দেশীয় উপকরণে তৈরী হস্তশিল্পের রকমারি পণ্য দিয়ে সাজিয়েছেন স্টল। মেলায় দর্শনার্থীরা ঘোরাঘুরি করে পছন্দের পণ্য কিনছেন। কিন্তু মেলার সময় নিয়ে একটু অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, রাত ৮ টা পর্যন্ত সময় বেধে দেওয়ায় বেচাকেনা সন্তোষজনক নয়। তিনি বেচাকেনা বাড়াতে সময়,বৃদ্ধি করার তাগিদ দেন। জুঁই মিম বস্ত্রমেলা স্টলের মালিক এস এম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রচন্ড তাপদাহের কারণে সারদিন মেলার স্টলগুলো ফাঁকা থাকে। বেচাবিক্রি তেমন হয়না। তবে সন্ধ্যার পর মেলায় দর্শনার্থীদের ভীড় বাড়তে থাকলে বেচাকেনা হয়। তিনি বলেন সৈয়দপুরে মেলার পরিবেশ খুবই ভাল। তবে বেচাকেনা বৃদ্ধিতে সময় বাড়ানোর জন্য মেলার আয়োজকদের প্রতি অনুরোধ জানান। মেলায় সন্তানকে নিয়েe এসেছেন চাকুরিজীবি আতিয়ার রহমান। তিনি বলেন একঘেয়েমী পরিবেশে বাসায় ভাল লাগেনা। তাই তিনি সন্তানের সাথে নাগরদোলায় বেসেছেন। তার শিশুকন্যা প্রীতম ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে বলে, আমার খুব ভাল লাগছে। এরপর সে রাইডস্ শ্লীপারে উঠবে। রাইডস্ ওয়াটার বোর্ট থেকে নেমে বাবা আনোয়ার হোসেনের হাত ধরে ফুচকা খেতে এসেছে অনিক। সে হাসিমাখা মুখে বলে মেলায় ঘুরতে খুব ভাল লাগছে। তারমতো সাবিহা, নয়ন, জয়, শ্রাবণও বলে মেলায় ঘোরাফেরা করার আনন্দের কথা।
মেলার আয়োজক সৈয়দপুর নারী উন্নয়ন ফোরামের সভাপতি ও সৈয়দপুর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সানজিদা বেগম লাকি বলেন,করোনাকালের ধাক্কায় নারী উদ্যোক্তারা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে এ মেলা বসানো হয়েছে। এতে উদ্যোক্তারা বেশ খুশী। বেচাকেনাও ভালো হচ্ছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেলার সময় রাত ৮ টা বেধে দেয়ায় সমস্যা হচ্ছে। কারণ মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে রাতে মেলায় আসতে পছন্দ করেন। আমরা প্রশাসনের কাছে সময় বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছি। আশাকরি প্রশাসন এটি বিবেচনায় নিবেন। মেলাটি পরিবার বান্ধব করতে শিশুদের বিনোদনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রয়েছে মুখরোচক বিভিন্ন খাবারের দোকান। সব মিলিয়ে নারীসহ সববয়সী মানুষ মেলায় আসছেন এবং কেনাকাটাও করছেন বেশুমার।
মেলার পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়া সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবকের একটি দলও ওই মেলায় রয়েছে বলে জানান সানজিদা বেগম লাকী।