নীলফামারীতে হেলমেট বাহিনীর তান্ডব: খোলা আকাশের নীচে দুটি পরিবার

0
133

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর :
নীলফামারীর সৈয়দপুরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিপক্ষের ভাড়াটিয়া হেলমেট বাহিনী দুটি পরিবারের ওপর নারকীয় তান্ডব চালিয়েছে। তারা পরিবার দুটির বসতঘর গুড়িয়ে দিয়েছে। তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি সত্তরোর্ধ এক নারীসহ পরিবারের শিশু সদস্যরা। হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালালে ন্যাক্কারজনক এ ঘটনা দেখে সাথে সাথে গ্রামবাসীরা জোটবদ্ধ হয়ে এগিয়ে এলে হামলাকারীরা দেশীয় অস্ত্র উঁচিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে সটকে পড়ে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে নীলফামারী সদর উপজেলার সংগলশী ইউনিয়নের কিসামত কাদিখোল সরকার পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে নীলফামারী আদালতে একটি মামলা হয়েছে। তারপরও প্রতিপক্ষের হুমকি ধামকির কারণে পরিবার দুটি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছ। গতকাল শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে সেদিনের ঘটনার ভয়াবহ চিত্র চোখে পড়ে। হেলমেট বাহিনীর তান্ডবে গুঁড়িয়ে দেয়া পরিবার ‍দুটির বসতঘর, রান্নাঘর ও গোয়ালঘর মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। এখনও বাড়ির আসবাবপত্র, শিশুদের বইপত্র, তৈজসপত্রগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে পায়ে গুরুতর জখম নিয়ে ঘরের ভিটেতে শুয়ে অসহ্য যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে বৃদ্ধা মতিফুল বেগম (৭০)। মামলার সূত্র মতে, সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের সরকারপাড়ার সহোদর বাবুল হোসেন ও আব্দুস সামাদের সাথে জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল প্রতিবেশি হাজী আশরাফ আলীর পরিবারের মধ্যে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে উভয়ের মধ্যে আদালতে একাধিক মামলাও চলমান রয়েছে। ঘটনার দিন ২৯ সেপ্টেম্বর প্রতিপক্ষের করা একটি মামলায় নীলফামারী আদালতে হাজিরা দিতে যান ভুক্তভোগি পরিবার দুটির সদস্যরা। আর এ সুযোগে প্রতিপক্ষ আশরাফ আলীর ছেলে গোলাম কিবরিয়া ভাড়াটিয়া হেলমেট বাহিনী সাথে নিয়ে ওই পরিবার দুটির বাড়ি-ঘরে অতর্কিত হামলা চালায়।

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশি মোকছেদুল ইসলাম ও আছিয়া বেগম জানান, ঘটনার দিন প্রায় ২০-২৫ জনের একটি দল আকষ্মিক ওই বাড়ি দুটিতে হামলা করে। মাথায় হেলমেট ও মুখোশ পরা হামলাকারীদের হাতে ছিল দেশীয় বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র। প্রকাশ্য দিবালোকে মোটরসাইকেলে এসে এমন হামলা ফিল্মি স্টাইলকেও হার মানিয়েছে। পরে ওই দুটি পরিবারের নারী ও শিশুদের আর্তচিৎকারে গ্রামবাসী জোটবদ্ধ হয়ে এগিয়ে এলে হামলাকারীরা দ্রুত সটকে পড়ে। কিন্তু তার আগেই মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় পরিবার দুটির বসত-বাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রধান বাবুল হোসেন জানান, ঘটনার রাতে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও পুলিশের নিরব ভূমিকা আমাদেরকে হতাশ করেছে। পরে পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে নিরুপায় হয়ে গত ১২ অক্টোবর নীলফামারী আদালতের শরণাপন্ন হই। ঘটনার পর থেকে প্রতিপক্ষের হুমকিতে বর্তমানে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীণতায় ভুগছি। এ সময় সাংবাদিককে কাছে পেয়ে বাবুল হোসেনের স্ত্রী জাহানারা বেগম তাদের ওপর সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এবিষয়ে জানতে অভিযুক্ত গোলাম কিবরিয়ার সাথে যোগাযোগের চেস্টা করেও কোন মন্তব্য জানা যায়নি।

এ ব্যাপারে সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান জুন জানান, প্রকাশ্য দিবালোকে এমন ঘটনা ন্যাক্কারজনক। হেলমেট বাহিনীর তান্ডবে পরিবার দুটির ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে তাঁরা খোলা আকাশের নীচে অবস্থান করছে। এদিকে হেলমেট বাহিনীর তৎপরতায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তে প্রকৃত দোষীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় নেয়ার দাবি জানান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here