কয়লার দাম বৃদ্ধিতে ইটভাটা বন্ধ

0
325

মিজানুর রহমান মিলন, সৈয়দপুর থেকে: আমদানি করা কয়লার অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব পড়েছে স্থানীয় ইটভাটাগুলোতে। ইট তৈরীর মওসুম শুরু হলেও ইট তৈরীর কাজ শুরু করেনি ভাটা মালিকরা। ফলে ইট সংকটের মুখে সব শ্রেণীর ইটের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে স্থানীয় আবাসন খাতসহ উন্নয়ন প্রকল্প কাজের ঠিকাদাররা বিপাকে পড়েছেন। ভাটা মালিকদের অভিযোগ কয়লার বাজার সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে দফায় দফায় দাম বাড়ছে কয়লার। এতে বিনিয়োগ ঝুঁকির আশংকায় ইটভাটা চালু করছে না ভাটা মালিকরা। ভাটা মালিকদের সূত্র জানায়, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও রাশিয়া থেকে আমদানি করা কয়লার দাম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হচ্ছে। তাদের কারণে গত বছর যে কয়লা টন প্রতি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, তা বাড়তে বাড়তে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত টন প্রতি ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠে। অক্টোবর মাসে তা ১৮ হাজার টাকা টনে বিক্রি হলেও ওই সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বর্তমানে ২৩ হাজার থেকে সাড়ে ২৬ হাজার টাকা প্রতি টন বিক্রি হচ্ছে। এ কারণে মওসুম শুরু হলেও ঝুঁকির আশংকায় ইট উৎপাদনে যাচ্ছে না ভাটা মালিকরা। ভাটাগুলোতে উৎপাদন বন্ধ থাকায় চরম ইট সংকট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে ইটের চাহিদা বেশী হওয়ায় প্রতি হাজারে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা বেশী দরে বিক্রি হচ্ছে ইট। সৈয়দপুরের বিভিন্ন ভাটায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত অক্টোবর মাসে ১নং ইটের দাম হাজার প্রতি ৮ হাজার টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে সাড়ে ৯ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে ২নং ইট ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা, ৩নং ইট সাড়ে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকা এবং পিকেট ইটের দাম ৮ হাজার থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের আশংকা চলতি মওসুমে কয়লার দাম না কমলে ইটের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির প্রভাবে দাম আকাশচুম্বি হতে পারে। এ ব্যাপারে কথা হয় সিএন ব্রিকস এর প্রতিনিধি মো. ওয়াসিমের সাথে। তিনি বলেন, বর্তমানে কয়লার দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে নতুন ইট প্রতি হাজারে ১২/১৩ হাজার টাকায় ইট বিক্রি করতে হবে। ফলে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে যাবে ইটের বাজার। এতে ব্যাহত হতে পারে স্থানীয় আবাসন খাতসহ সকল উন্নয়ন কার্যক্রম। সূত্র মতে, বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী সমিতি নীলফামারী জেলা শাখার আওতায় সৈয়দপুরে ৩১টি ইটভাটা রয়েছে। এসব ভাটায় গত বছরের উৎপাদিত যেসব ইট মজুদ ছিল, বর্তমানে তা বিক্রির শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ফলে চাহিদার তুলনায় ইটের সংকট দেখা দেয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারি ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদাররা। ফলে বাড়তি দামে ইট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। সূত্রটি জানায়, সাধারণত শীত মওসুমে ইট উৎপাদনে যায় ভাটা মালিকেরা। এজন্য সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ইট তৈরীর প্রক্রিয়া শুরু হয়। অক্টোবর মাসের শেষে ইট পোড়ানোর কাজ শুরুর কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কিছুই করতে পরেননি তারা। ফলে ভাটা শ্রমিকরা বর্তমানে বেকার অবস্থায় বসে রয়েছেন। কয়লার দাম কমবে এ আশায় ভাটা মালিকরা কালক্ষেপণ করছেন। জানতে চাইলে, বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারক সমিতি নীলফামারী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও এমজেএইচ ব্রিকসের মালিক হারুন-উর-রশিদ বলেন, কয়লার মূল্য বৃদ্ধির কারণে ভাটায় ইট উৎপাদনের প্রস্তুতি নিতে পারছি না আমরা। শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে, ভাটা মালিকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তিনি বলেন, কয়লার দাম সহনীয় পর্যায়ে না আসলে ইট তৈরীর খরচ বাড়বে। এতে ইটের দাম মানুষজনের নাগালের বাইরে চলে যাবে। তিনি আরও বলেন, কয়লার লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধির কারণে সংগঠনের কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে ১৫ ডিসেম্বরের আগে ভাটা মালিকদের ইট উৎপাদনে না যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এজন্য আমরা সংগঠনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি, হয়তো একটা সমাধান হবে। তবে পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত কিছু বলা যাচ্ছে না ইটের বাজার পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here