করোনা নিম্নমুখী: আসতে পারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা

0
309

খবর৭১ঃ মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গত কয়েক মাস ধরে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার। তবে কয়েক দিন ধরে সব সূচকেই করোনাভাইরাসের প্রকোপ নিম্নগামী রয়েছে। এই অবস্থায় আগামী রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা ডেকেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেই সভা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা আসতে পারে বলে সূত্রে জানা গেছে।

গত কয়েক দিন ধরে দেশে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের হার কমতির দিকে। ২৬৪ জনে পৌঁছে যাওয়া দৈনিক মৃত্যু নেমে এসেছে আশির নিচে। দৈনিক শনাক্ত যেখানে চলে গিয়েছিল ১৫ হাজারের উপরে তা কমে এখন তিন হাজারের আশপাশে অবস্থান করছে। শনাক্তের হার পৌঁছে গিয়েছিল ৩২ শতাংশে। তা এখন ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে সুস্থতার হারও দিন দিন বাড়ছে। ইতিবাচক এই ধারা অব্যাহত থাকলে আশা করা যায়, আগামী এক দুই সপ্তাহের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বুধবার গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে থেকে খোলা হবে তা আগামী ৫ সেপ্টেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। স্কুল-কলেজ খোলার পর করণীয় কী কী হবে সেসব বিষয়েও বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সবশেষ ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এরপর কী হবে ৫ সেপ্টেম্বরের সভায় সেটা নির্ধারণের কথা। করোনা বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশ পেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে বলে জানিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কমিটি এখনও তাদের সুপারিশ দেয়নি। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার আগেই কমিটির সুপারিশ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে কমিটি আগে ইঙ্গিত দিয়েছিল, করোনা সংক্রমণের হার ৫ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ভাবা যেতে পারে। সে হিসেবে গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার) করোনা সংক্রমণের হার ১০.১১ শতাংশ। ক্রমান্বয়ে কমতে থাকা এই হার আগামী দুই চার দিনের মধ্যে আরও কমে ১০ শতাংশের কিছুটা নিচে নামবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত ২৬ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ বৈঠকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভাতেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে পাঁচ দফা সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা। এর মধ্যে একটি দফা ছিল- আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী করোনার সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া যায়। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেখানে শিক্ষার্থীরা পারিবারিক পরিমণ্ডলে কোলাহলের মধ্যে থাকে, এই বিষয় বিবেচনায় নিয়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে কোনো একটি সংখ্যা বিবেচনা করা যায় কি না- সে বিষয়ে জাতীয় কারিগরি কমিটির পরামর্শ চাওয়া হবে। ইতিমধ্যে কারিগরি কমিটির কাছে পরামর্শ চাওয়া হয়েছে।

গত ১৮ আগস্ট সচিবদের সভায় করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ও টিকা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণ করে। ইতিমধ্যে অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। গত বছরের শেষ দিকে করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর খোলা হয়নি। সরকারের বিশেষ বিবেচনায় মাঝে শুধু কওমি মাদ্রাসা কয়েক মাস খোলা ছিল। তবে গত এপ্রিল থেকে দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে বন্ধ হয়ে যায় সবধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here