ক্যাম্পাসে মাদক ঠেকাতে তৎপর ঢাবি প্রশাসন, নিয়মিত অভিযান

0
247

খবর৭১ঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনার মাদকের সংশ্লিষ্টতা উঠে আসার পর ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় প্রায় অভিযান চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

ঢাবি ক্যাম্পাস ও আশেপাশের এলাকাকে মাদকের ছোবল থেকে মুক্ত রাখার চেষ্টার অংশ হিসেবে প্রক্টরিয়াল টিম ও পুলিশের সমন্বয়ে এসব অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী।

গত ১৫ মে নিখোঁজ থাকা হাফিজুরের লাশ আটদিন পর পুলিশের সহায়তায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে শনাক্ত করেন তার ভাই। এরপর পুলিশ জানায়, ১৫ মে রাত পৌনে আটটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ডাব বিক্রেতার কাছ থেকে দা নিয়ে হাফিজুর নিজের গলায় নিজেই ছুরিকাঘাত করেন। পুলিশ গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর হাফিজুর মারা যান। সেসময় বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ হাসপাতালের মর্গে রেখে দেওয়া হয়।

ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে, মৃত্যুর আগে হাফিজুর বন্ধুদের সঙ্গে মাদক সেবন করেছিলেন। তদন্তে দেশে প্রথমবারের মতো ভয়ংকর মাদক এলএসডির সন্ধান পায় গোয়েন্দা পুলিশ। অভিযান চালিয়ে এলএসডি বিক্রেতা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হাফিজুরের মৃত্যুতে মাদকের সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ্যে আসার পর ঢাবি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। করোনায় বন্ধ থাকা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন এলাকা মাদকসেবিদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ তোলেন তারা।

এরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়। এরই অংশ হিসেবে বিশেষ কিছু এলাকাকে ক্রাইম জোন চিহ্নিত করে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

প্রক্টর ড. গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘অভিযানে আটককৃতদের মধ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, পথচারী, বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষকে আটক করেছি। ভাসমান মানুষদের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাদক গ্রহণ ও বিপণন হয়।’

প্রক্টর জানান, মাদকবিরোধী অভিযানে মাদক গ্রহণ ও বিপণনের সাথে জড়িত ব্যক্তিকে তৎক্ষণাৎ আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। আর শিক্ষার্থীদের কাউকে পাওয়া গেলে ক্ষেত্রে অভিভাবকদের জিম্মায় দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ঢাবি এলাকায় মাদকের বিরুদ্ধে আগেও অভিযান চালিয়েছে জানিয়ে ড. গোলাম রাব্বানী বলেন, এবার সরকারের পক্ষ থেকে চিঠি পেয়ে ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে কঠোর অভিযান পরিচালনা করছি। এর ফলে বর্তমানে ক্যাম্পাস এলাকায় মাদকসেবিদের আনাগোনা কিছুটা হলেও কমে এসেছে।

হাফিজের মৃত্যুর বিষয়টি ঢাবি প্রশাসনকে মাদকের বিরুদ্ধে দায়িত্বশীল করেছে মন্তব্য করে প্রক্টর আরও বলেন, এখন আমরা প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করছি। বর্তমানে মাদকগ্রহণে মেয়েদের অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে। এটি অপ্রত্যাশিত, অগ্রহণযোগ্য দুঃখজনক বিষয়।’

ঢাবি এলাকায় প্রক্টরিয়াল টিমকে নিয়ে প্রতিদিনই অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শাহবাগ থানার ওসি মওদুত হাওলাদার। তিনি বলেন, ‘নিয়মিত অভিযান চালালে ক্যাম্পাস এলাকায় এসে অপরাধ করার প্রবণতা অনেকাংশেই কমে যাবে।’

ওসি মওদুত হাওলাদার জানান, ক্যাম্পাসের পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেই নেশা গ্রহণে নিরাপদ স্থান মনে করে মাদকসেবিরা। সন্ধ্যা আটটা থেকে রাত ১২ পর্যন্ত এদের আনাগোনা বাড়ে এখানে।

এদের চাহিদা ঘিরে বিভিন্ন প্রকারের মাদকের সরবরাহ আসে উল্লেখ করে শাহবাগ থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) শেখ মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘মাদকের সরবরাহের একটি উৎস আমরা পেয়েছি। কারওয়ান বাজার থেকে মাদকের বড় একটি সরবরাহ আসে। সম্প্রতি মাদক সরবরাহকারী স্বপ্না নামের এক নারীকে গ্রেপ্তার করি আমরা। তার স্বামী কারওয়ান বাজার থেকে বিভিন্ন প্রকার মাদক সরবরাহ করে।’

এদিকে ঢাবি ক্যাম্পাস এলাকায় অপরাধপ্রবণতা কমানোর জন্য শাহবাগ থানার তত্ত্বাবধানে ৪৯টি সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলেও তিনটি বাদে বাকিগুলো অচল। মূলত অপরাধীরা এগুলো তার কেটে নষ্ট করে দিয়েছে বলে ভাষ্য পুলিশের। মেরামতের বরাদ্দ পেলে অতি দ্রুত সিসিটিভিগুলো ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন শাহবাগের ওসি মওদুত হাওলাদার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here