চার মাসে বজ্রপাতে নিহত ১৭৭

0
318

খবর৭১ঃ বাংলাদেশে প্রতিবছর বর্ষার আগে মার্চ থেকে শুরু হয়ে আগস্ট মাস পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে মারা যায় বহু মানুষ। গত কয়েক বছর ধরে প্রাণহানি বেড়ে চলেছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত আছে চলতি বছরেরও। ইতোমধ্যে গত মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত চার মাসে সারাদেশে বজ্রপাতে ১৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে আহত হয়েছেন অন্তত ৪৭ জন।

সামাজিক সংগঠন ‘সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম-এসএসটিএএফ’ শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরে। রাজধানীর পুরানা পল্টনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে এসএসটিএএফ জানায়, চলতি বছরের মার্চ থেকে জুন মাসে বজ্রপাতে মারা গেছেন ১৪৯ জন পুরুষ ও ২৮ জন নারী। এদের মধ্যে শিশু ১৩ জন, কিশোর ছয়জন ও কিশোরী তিনজন। মৃত্যুর পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে বজ্রপাতে আহত হয়েছেন অন্তত ৪৭ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৪০ ও নারী ৭ জন।

চলতি বছর জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বজ্রপাতে হতাহতের কোনো ঘটনা না থাকলেও মার্চ মাসের শেষদিক প্রাণহানির ঘটনা শুরু হয়। চলতি জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে মারা গেছেন ৬৫ জন।

সংগঠনটি জানায়, চলতি বছর বজ্রপাতের নতুন হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সিরাজগঞ্জ। এ জেলায় চলতি বছরের মে এবং জুন মাসেই মারা গেছেন অন্তত ১৮ জন। এছাড়া চলতি বছরের চার মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৬ জন, জামালপুরে ১৪ জন, নেত্রকোণায় ১৩ ও চট্টগ্রামে ১০ জন মারা গেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৪ মাসে শুধু কৃষিকাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতের আঘাতে প্রাণহানি হয়েছে ১২২ জনের। আম কুড়াতে গিয়ে বজ্রাঘাতে মারা গেছে ১৫ জন। ঘরে অবস্থানকালেও বজ্রপাতে ১০ জন মারা গেছেন। এছাড়া নৌকায় মাছ ধরার সময় ৬ জন, মাঠে গরু আনতে গিয়ে ৫ জন, মাঠে খেলার সময় ৩ জন, বাড়ির আঙিনায় বা উঠানে ৬ জন, ভ্যান/রিকশা চালানোর সময় ২ জন এবং গাড়ির ভেতরে অবস্থানের সময় ১ জনের মৃত্যু হয়।

বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ ও টেলিভিশনের স্ক্রল পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এ পরিসংখ্যান করা হয়েছে বলে সংগঠনটি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০১৫ সালে দেশে পাঁচ হাজার ৭৭২টি বজ্রপাত হয়। আর সাত বছরে মারা গেছে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ। যেহেতু খোলা স্থানে উঁচু জায়গায় বজ্রপাত হয়, তাই এর পরের বছর ২০১৬ সালে তালগাছ লাগানোর পাশাপাশি সব ভবনে আর্থইনের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের উদ্যোগ কার্যকর হয়েছে এবং এই ধরনের মৃত্যু কমে এসেছে বহুলাংশে। সে অনুযায়ী দেশে ১০ লাখ তালগাছ রোপন কর্মসূচি শুরু করেছে সরকার।

সংবাদ সম্মেলনে বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা কমাতে নির্দিষ্ট এলাকার মানুষদের মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে সতর্ক করা, বাড়ি বাড়ি বজ্র নিরোধক স্থাপন ও এসব যন্ত্রের আমদানি শুল্ক মওকুফের দাবি জানিয়ে সরকারকে কিছু গুরুত্বর্পূণ পরামর্শ দেয় সংগঠনটি। সেগুলো হলো-

> যেহেতু বজ্রপাতের ১৫ মিনিট আগেই আবহাওয়া অধিদপ্তর জানতে পারে কোন কোন এলাকায় বজ্রপাত হবে। তাই সংশ্লিষ্ট এলাকার মোবাইল ব্যবহারকারীদের এসএমএস করে সতর্ক করে বার্তা দেয়ার পরামর্শ তাদের।

> মাঠ, হাওর-বাওরে বা ফাঁকা কৃষিকাজের এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। যার ওপরে বজ্র নিরোধক স্থাপন করতে হবে। যেন বজ্রপাতের সময় কৃষক ও শ্রমিকরা সেখানে অবস্থান বা আশ্রয় নিতে পারেন।

> বিদেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে থান্ডার প্রোটেকশন সিস্টেমের সব পণ্যে শুল্ক মওকুফ করতে হবে।

> সরকারিভাবে প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি বজ্র নিরোধক স্থাপনের ঘোষণা দিতে হবে।

> বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা/থান্ডার প্রোটেকশন সিস্টেম যুক্ত না থাকলে নতুন কোনো ভবনের নকশা অনুমোদন করা যাবে না।

এসএসটিএএফ-এর সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার।

এসময় অন্যদের মধ্যে বজ্রপাত বিশেষজ্ঞ ড. মুনির আহমেদ, আইডিইবি রিসার্চ ও টেকনোলজিক্যাল ইনস্টিটিউট-এর রিসার্চ ফেলো মো. মনির হোসেন, এসএসটিএএফ-এর সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা, নির্বাহী প্রধান (গবেষণা সেল) আব্দুল আলীম, ভাইস প্রেসিডেন্ট এমদাদ হোসাইন মিয়া, নির্বাহী পরিচালক রানা ভূঁইয়া, নূরে আলম জিকু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here