ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে দেশের ছয় জেলা

0
359

খবর৭১ঃ গত ১০ দিনে সিলেটে ১০ দফা ভূমিকম্প হয়েছে। গত সোমবার দেড় মিনিটের মধ্যে দুই দফা ভূমিকম্পে নগরীর ঐতিহ্যবাহী রাজা জি সি উচ্চবিদ্যালয়ের একটি ভবনে অসংখ্য ফাটল দেখা দিয়েছে। এর আগে গত ২৯ মে সাত বার এবং ৩০ মে এক বার জেলায় ভূমিকম্প অনুভূত হয়।

তখন নগরীর পাঠানটুলা দর্জিবাড়ী এলাকায় ছয়তলার একটি ভবন হেলে পড়ে। এত ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়ায় সিলেটের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সিলেটের ছয়টি মার্কেটসহ ২৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন বন্ধ করে দিয়েছে সিটি করপোরেশন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মিজ—এই তিন গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। এর মধ্যে ইন্ডিয়ান ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত সিলেট, যার উত্তরে ‘ডাউকি ফল্ট’। এই প্লেটগুলো সক্রিয় থাকায় এবং পরস্পর পরস্পরের দিকে ধাবমান হওয়ায় এখানে প্রচুর শক্তি জমা হচ্ছে। আর জমে থাকা এসব শক্তি যে কোনো সময় ভূমিকম্পের মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে। ফলে অতিমাত্রায় ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ।

গবেষকেরা বলছেন, সিলেট, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার, ঢাকা ও চট্টগ্রাম জেলা মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এবং পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সর্বাপেক্ষা কম ঝুঁকিপূর্ণ। ‘ডাউকি ফল্ট’ ও সিলেট থেকে চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে গত ৫০০ থেকে ১ হাজার বছরে বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্পের উৎপত্তি না হওয়ায় সিলেটের সাম্প্রতিক ভূমিকম্প বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস। বাংলাদেশে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার যে মানচিত্র রয়েছে, তাতে সিলেট ও চট্টগ্রাম উচ্চ ঝুঁকিপ্রবণ অঞ্চল। ‘ডাউকি ফল্ট’ লাইনে থাকা সিলেট অঞ্চলে এর আগে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল ১৮৯৭ সালে। রিখটার স্কেলে ৮ মাত্রার ওপরে থাকা সেই ভূমিকম্পে সিলেটে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।

সম্প্রতি নেচার জিওসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের গবেষকদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূ-গাঠনিক অবস্থানে বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে, সেখানে বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। ঐ গবেষণার বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, এখনই বাংলাদেশ বড় ধরনের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠবে এমন কথা বলা না গেলেও দুটি গতিশীল ভূ-গাঠনিক প্লেট পরস্পরের ওপর চেপে বসতে থাকায় সেখানে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হচ্ছে।

গবেষক দলের প্রধান নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ মাইকেল স্টেকলার টমসন বলেন, এ ধরনের ভূমিকম্প কবে ঘটতে পারে, সেই পূর্বাভাস আরো গবেষণা না করে দেওয়া সম্ভব নয়। ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে একটি কম্পিউটার মডেল তৈরির মাধ্যমে তারা দেখিয়েছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্ব অংশের ভূ-গাঠনিক প্লেট উত্তর-পূর্ব দিকে সরে গিয়ে মিয়ানমারের পশ্চিম অঞ্চলের ভূ-গাঠনিক প্লেটে চাপ সৃষ্টি করছে, যাতে সৃষ্টি হচ্ছে অস্থিরতা।

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অবজারভেটরির পরিচালক ও ভূতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলছেন, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায় ১৯ কিলোমিটার গভীর পলি জমে বাংলাদেশের যে ভূখণ্ড তৈরি হয়েছে, তা সেই ভূমিকম্পের প্রভাবে জেলাটিনের মতো কেঁপে উঠতে পারে এবং কিছু কিছু জায়গায় তরলে পরিণত হয়ে গ্রাস করতে পারে ইমারত, রাস্তাঘাট আর মানুষের বসতি। তাদের এই গবেষণায় প্রায় ৬২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাকে এই ভূমিকম্পের ঝুঁকির আওতায় বলা হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here