ভারতে ২৪ ঘণ্টা জ্বলছে চিতা, রাস্তায় লাশের সারি

0
278

খবর৭১ঃ
করোনাভাইরাস মহামারিতে বিপর্যস্ত ভারত। দেশটিতে দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। শ্মশানে ২৪ ঘণ্টাই জ্বলছে চিতা। তবুও লাশের সারি শেষ হচ্ছে না। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন বারাণসীতে করোনা সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালাচ্ছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। সেখানে সাধারণ প্যারাসিটামল বা জিংকের মতো ওষুধও মিলছে না। সেখানকার এক ভিডিওতে দেখা গেছে রাস্তায় প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে দুই পাশে লাশের সারি।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, একদিনে ভারতে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৮২ হাজার ৬৯১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৭৮৬ জনের।

করোনায় ভারতে মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ১৬৯ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন ২ কোটি ৬ লাখ ৫৮ হাজার ২৩৪ জন। দেশটিতে এখন সক্রিয় রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩৫ লাখ।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নেয়ায় ঘরের মধ্যেও নাগরিকদের মাস্ক পরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে ভারত সরকার। সেই সঙ্গে এখন বাড়িতে বাইরের কাউকে না ডাকা এবং অযথা বাইরে না বেরনোর পরামর্শও দেয়া হয়েছে।

ভারতে প্রতিদিনই সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা আগের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড অক্সিজেন সংকটে মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। শ্মশানে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় দিল্লিসহ কয়েক রাজ্যে গণচিতা তৈরি করা হয়েছে। খোঁড়া হচ্ছে গণকবর এবং মরদেহ পোড়াতে বানানো হয়েছে অস্থায়ী শ্মশান। জাত-ধর্ম ভুলে মৃতদেহ সৎকারে সহযোগিতা করছে মুসলিমরাও।

স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন, এর আগে এমন অবস্থা কখনো দেখেননি তারা। ভারতে এখন যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তার গতি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক বেশি। ভারতে এমন পরিস্থিতি চলমান থাকলে যুক্তরাষ্ট্রও পেছনে পড়ে যাবে। করোনার প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করায় ভারতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

বিবিসি বলছে, ভারতে এখন কোভিডের যে তাণ্ডব চলছে, তার অন্যতম প্রধান শিকার হিন্দু তীর্থস্থান বারাণসী এবং তার আশপাশের অঞ্চল। শুধু বারণসী শহরে নয়, ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের প্রত্যন্ত গ্রামেও। চিকিৎসা ছাড়াই ঘরে বসে ওই সব গ্রামের বাসিন্দারা মারা যাচ্ছেন।

উত্তর প্রদেশ রাজ্যের এই অঞ্চলের ক্রুদ্ধ বাসিন্দাদের অনেকে এখন খোলাখুলি প্রশ্ন করছেন এই চরম দু:সময়ে তাদের এমপি নরেন্দ্র মোদি (ভারতের প্রধানমন্ত্রী) লাপাত্তা কেন।

কোভিডে সবচেয়ে বিপর্যস্ত এলাকাগুলোর অন্যতম বারাণসীতে হাসপাতাল অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়েছে, রোগীরা হাসপাতালে গিয়ে বেড পাচ্ছেন না, অক্সিজেন নেই, অ্যাম্বুলেন্স নেই। এমনকি কোভিড টেস্টের ফলাফল পেতে এক সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে।

গত দশদিনে, বারাণসী এবং আশপাশের অঞ্চলের ওষুধের দোকানগুলোতে ভিটামিন, জিংক বা প্যারাসিটামলের মত মামুলি ওষুধ পর্যন্ত মিলছে না।

শহরের মনিকার্নিক ঘাটের কাছে বহুদিনের পুরনো এক বাসিন্দা বলেন, গত এক মাস ধরে শ্মশান ঘাটে বিরতিহীনভাবে মরদেহ পোড়ানোর কাজ চলছে। ‘যেদিকে তাকাবেন অ্যাম্বুলেন্সের আওয়াজ এবং মরদেহ’। আগে, বারাণসীর দুটো প্রধান শ্মশান ঘাটে দিনে ৮০ থেকে ৯০টি দাহ হতো। কিন্তু, ওই বাসিন্দার কথায়, গত এক মাস ধরে দিনে ৩০০-৪০০ দাহ হচ্ছে।

সম্প্রতি বারাণসীর একজন বাসিন্দার তোলা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে শ্মশান ঘাটে যাওয়ার একটি সরু রাস্তার দুই ধারে এক কিলোমিটার পর্যন্ত সার ধরে রাখা রয়েছে মরদেহ। গত দশদিনে নগর প্রশাসন নতুন দুটো শ্মশান তৈরি করেছে। সেগুলোও রাতদিন ২৪ ঘণ্টা ব্যস্ত বলে খবর রয়েছে।

এই ট্রাজেডি এখন শুধু বারণসী বা বড় শহরে সীমাবদ্ধ নেই। আশপাশের ছোট ছোট শহর ছাড়িয়ে এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতেও ছড়িয়ে পড়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি মাসে ভারতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর রূপ নেবে। এসময়ে একদিনে মৃত্যুর সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। সংক্রমণও হবে রেকর্ড পরিমাণ।

এরই মধ্যে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল সামগ্রী, ওষুধ, অক্সিজেন দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে ভারতকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here