সমালোচকরা মানুষের জন্য কী করেছেন জানতে চান প্রধানমন্ত্রী

0
335

খবর৭১ঃ করোনাকালীন সরকারের কাজ নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন তারা মানুষের জন্য কী করছেন তা জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সরকার এটা করেনি, সেটা করেনি- এ ধরনের কথা যারা বলছেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন নিজে কয়টা লোককে সহায়তা করেছেন সেই হিসাবটা পত্রিকায় দেন। তাহলে মানুষ আস্থা পাবে, বিশ্বাস পাবে। সেটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

গণভবন থেকে রোববার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র ও অসহায় মানুষকে মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার মাধ্যমে আর্থিক সহায়তার দ্বিতীয় পর্যায়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

ভোলা, জয়পুরহাট ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে স্থানীয় সংসদ, জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও উপকারভোগীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গেও মতবিনিময় করেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস গণভবন থেকে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদার, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।

এই কার্যক্রমের আওতায় প্রধানমন্ত্রী ঈদ উপহার হিসাবে সাড়ে ৩৬ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষ আড়াই হাজার টাকা করে সহায়তা পাবেন। এজন্য ৯১২ দশমিক ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উদ্বোধনের দিনই ২২ হাজার ৮৯৫ জনের কাছে সহায়তার টাকা পৌঁছে গেছে।

বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই শক্তিশালী বিরোধী দল চায়। আমরাও তো বিরোধী দলে ছিলাম। বিরোধী দলে থাকতে যে কোনো দুর্যোগ, দুর্বিপাকে আমরা সবার আগে ছুটে গিয়েছি। এটাই বিরোধী দলের কাজ। কিন্তু আজকে যারা নিজেদের বিরোধী দল বা প্রতিদিন সরকার উৎখাতের জন্য বক্তৃতা-বিবৃতি, আন্দোলনের নামে পোড়াও-জ্বালাও করে যাচ্ছেন, দুর্যোগে মানুষের পাশে কোথায় তারা? কয়টা দুর্গত মানুষের মুখে তারা খাবার তুলে দিয়েছেন? কয়টা মানুষের পাশে তারা দাঁড়িয়েছেন? কয়জন মানুষের কাফনের কাপড় কিনে দিয়েছেন? কেউ নেই।’

যারা সমাজে ‘বুদ্ধিজীবী’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন, তাদের সমালোচনা করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘তাদের বুদ্ধিটা যখন খোলে এবং তারা পরামর্শ দেন, তার আগেই কিন্তু আমাদের সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে নেয়।’
সরকার যখন মানুষের কল্যাণে সব পরিকল্পনা গুছিয়ে আনে বা বাজেটে কোন কোন খাতের ওপর বেশি গুরুত্ব দেবে, তা যখন চূড়ান্ত হয়ে যায়, তখন সেই বুদ্ধিজীবীদের ‘দুই একটা বুদ্ধি খোলে’।

সরকার বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শের জন্য বসে না থেকে মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারণ এই দেশটা আমাদের। রাজনীতি আমাদের জনগণের জন্য, জনগণের কল্যাণের জন্য। এই কথাটা আমরা ভুলি না।’

বিরোধী দলগুলোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা দল বা যারাই আছেন, প্রতিদিন কীভাবে সরকার উৎখাত করবে, সেই চিন্তা ভাবনা করেন, তাদের কিন্তু এটা করতে হলে বা শক্তিশালী বিরোধী দল গড়তে হলে মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। মানুষের বিশ্বাস, আস্থা অর্জন করতে হবে।’

করোনা মোকাবিলায় টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বাইরে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করা, ভিড় এড়িয়ে চলাসহ স্বাস্থ্যবিধিগুলো যথাযথভাবে অনুসরণে জণগণের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ঈদ উৎসব তো আছেই। এটা সবাই উদযাপন করবেন। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। ঈদের আনন্দ করবেন। কিন্তু যারা মারা গেছে, তাদের কথাও ভাবুন। নিজের জীবন বিপন্ন করে উৎসব নয়। মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না। গরম পানির ভাপ নেওয়া, গরম পানি খাওয়ার মতো বিষয়গুলো যত্ন সহকারে মানবেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাইরে থেকে ভাইরাস নিয়ে এসে নিজের পরিবারের ক্ষতি করবেন না। আমরা যে নির্দেশনাগুলো দিচ্ছি, সেগুলো মানতে হবে। কোয়ারেন্টিনের বিষয়গুলো মানতে হবে। আপনারা সচেতন হোন, স্বাস্থ্যবিধি মানুন। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আমরা সচল রাখার চেষ্টা চালাচ্ছি। সরকারপ্রধান এই দুর্দিনে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের বিত্তশালীদের প্রতি আহ্বান জানান।

নগদ সহায়তার দ্বিতীয় পর্বে আগামী তিন দিনের মধ্যে নগদ, বিকাশ, রকেট এবং শিউরক্যাশের মতো মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে বিভিন্ন পেশার ক্ষতিগ্রস্ত ৩৬ লাখ ৫০ হাজার পরিবারের কাছে আড়াই হাজার টাকা করে পৌঁছে যাবে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক পরিবারপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তাও প্রদান করবে সরকার। ক্ষতিগ্রস্ত ১ লাখ কৃষক পরিবারের মোবাইল ফোনে এই সাহায্য পৌঁছে যাবে।

উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল সংঘটিত ঝড়ো হাওয়া, শিলাবৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ে দেশের ৩৬টি জেলার ৩০ লাখ ৯৪ হাজার ২৪৯ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে ১০ হাজার ৩০১ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণ এবং ৫৯,৩২৬ হেক্টর ফসলি জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়। এতে ১ লাখ কৃষক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর করোনা মহামারির কারণে নিুআয়ের যারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এবং কর্মহীন হয়ে পড়েছিল তাদের সহায়তার জন্য ‘নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান’ কর্মসূচি চালু করা হয়েছিল। ২০২০ সালে করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত ৩৫ লাখ পরিবারকে ২ হাজার ৫০০ টাকা করে ৮৮০ কোটি টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি এই অর্থ দেওয়া হয়েছিল।

১০ কোটি টাকা ব্যক্তিগত অনুদান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও গৃহহীনদের সহায়তায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ১০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। এর মধ্যে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য। বাকি ৫ কোটি টাকা গৃহনির্মাণের জন্য।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here