হাসপাতাল ‘পালানো’ ভারতফেরত সেই করোনা রোগীদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে

0
175

খবর৭১ঃ
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল থেকে দশজন করোনা রোগী কর্তৃপক্ষের অনুমতি’ ছাড়াই চলে গেছে। এদের মধ্যে সাতজন ভারতফেরত করোনা পজিটিভ। রোববার তাদের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়। ভারতফেরত সাতজন চার জেলার বাসিন্দা। তাদের সবাইকে আবার ফেরত আনা উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। এদের মধ্যে একজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে।

করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট উদ্বেগ তৈরি করেছে। ফলে ‘পালিয়ে যাওয়া’ রোগীরা যদি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বাহক হন তাহলে তা ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। রোগী ‘পালানোর’ ঘটনায় তোলপাড় চলছে। সোমবার ‘পালিয়ে’ যাওয়া রোগীদের উদ্ধার করে আবারও হাসপাতালে ভর্তির উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যশোর জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের ১০ জন রোগী ছাড়পত্র না নিয়ে চলে গেছে। এদের মধ্যে সাতজন ভারতফেরত করোনা রোগী রয়েছে। ওই সাতজনের মধ্যে খুলনার তিন জন, সাতক্ষীরার দুই ও যশোর ও রাজবাড়ি জেলার একজন করে রয়েছেন।

তিনি বলেন, হাসপাতালের রেজিস্টারে ওই ১০ জনের নাম ঠিকানা ছিল। তাদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনকে অবহিত করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে সেটি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, কয়েকদিনে যশোর জেনারেল হাসপাতালের তৃতীয় তলায় করোনা ওয়ার্ডে ১০জন করোনা পজিটিভ রোগী ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে সাতজন ভারত ফেরত ছিলেন। তাদেরকে বেনাপোল ইমিগ্রেশন থেকে চিকিৎসার জন্য এ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তারা সবাই পালিয়ে গেছে।

পালিয়ে যাওয়া রোগীরা হলেন-যশোর সদর উপজেলার পাঁচপাবাড়িয়া গ্রামের রবিউলের স্ত্রী ফাতেমা (১৯), একই গ্রামের একরামুল কবীরের স্ত্রী রুমা (৩০), যশোর শহরের বারান্দীপাড়া এলাকার বিশ্বনাথের স্ত্রী মনিমালা দত্ত (৪৯), যশোর শহরের ওয়াপদা গ্যারেজ পাড়ার ভদ্র বিশ্বাসের ছেলে প্রদীপ বিশ্বাস (৩৭), সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার প্রতাপপাড়া গ্রামের জামাল হোসেনের ছেলে মিলন হোসেন (৩২), সাতক্ষীরা কালিগঞ্জ উপজেলার সোনতলা গ্রামের মনোতোষ সর্দারের স্ত্রী শেফালী রাণী (৪০), খুলনার পাইকগাছার ভামরাইল গ্রামের আহমদ সানার ছেলে আমিরুল সানা (৫২), খুলনার রূপসা চল এলাকার শের আলীর ছেলে সোহেল সরদার (১৭), খুলনা মহানগরের বিকে পূর্ব লেন এলাকার পুলিন কৃষ্ণ সরকারের ছেলে বিবেকান্দ সরকার ও রাজবাড়ি সদর উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামের আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে নাসিমা আক্তার। এদের মধ্যে মনিমালা, মিলন হোসেন, শেফালি রানী, আমিরুল সানা, সোহেল সরদার, বিবেকানন্দ সরকার ও নাসিমা আক্তার ভারত ফেরত।

করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্বরত একজন সিনিয়র নার্স বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আসা ১০ জন ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন। কিন্তু রোববার সকালের পর থেকে তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের একাধিক ডাক্তার বলেন, করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট উদ্বেগ তৈরি করেছে। ফলে ‘পালিয়ে যাওয়া’ রোগীরা যদি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বাহক হন তাহলে তা ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে।

যশোর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পালিয়ে যাওয়া রোগীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার থানা পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের আবারও যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে।

যশোরের সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, করোনা ওয়ার্ডের ১০ জন রোগী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে চলে গেছে। তাদের মধ্যে সাতজন ভারত ফেরত। বেনাপোল ইমিগ্রেশন থেকে তাদের এ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। তাদের ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু তারা না বলে চলে গেছে। পুলিশ তাদের অবস্থান চিহ্নিত করেছে। পুলিশ সুপার আমাকে জানিয়েছেন তাদেরকে আবারও ভর্তি করা হবে। শয্যা প্রস্তুত রাখার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলেছি।

এক প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, করোনা ওয়ার্ডে নার্স ও চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে নিরাপত্তা কর্মী ছিল না। গেট তালাবদ্ধ করা হয়নি। এজন্য রোগীরা চলে যেতে পেরেছে। এখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলা নেই। তবে তালাবদ্ধ রাখলে এভাবে চলে যেতে পারত না। তবে যারা আক্রান্ত তাদেরকে বেশি সচেতন হওয়া উচিত ছিল।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here