বাসে ভাড়া তিন গুণ: অতিষ্ট জনজীবন

0
258

খবর ৭১: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের সপ্তম দিন ছিল গতকাল। চলমান এই বিধিনিষেধেও রাজধানীতে যানজট দেখা গেছে। রাজধানীতে যানবাহন চলাচল দেখে মনে হয়নি দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে কোনো বিধিনিষেধ চলছে।

গণপরিবহনে প্রতি দুইসিটে একজন করে যাত্রী বহনের নির্দেশনা দিয়ে শতকরা ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো অর্ধেক যাত্রী বহনের নির্দেশনা উপেক্ষা করে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে ২ থেকে ৪ গুণ পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। যাত্রীদের অভিযোগ ভাড়া বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে গণপরিবহনগুলোতে ভাড়া আদায়ের নামে ডাকাতির মহোৎসব চলছে।
গতকাল রোববার যাত্রাবাড়ি, মিরপুর, ফার্মগেট, কাওরান বাজার, শাহবাগ, গুলিস্তান, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজট দেখা গেছে। ট্রাফিক সিগন্যালে কোথাও কোথাও দীর্ঘক্ষণ যানজট লেগে থাকার দৃশ্যও দেখা গেছে। কেউবা কাজের উদ্দেশ্যে ছুটছেন কর্মস্থলে, কেউবা কারণ ছাড়াই রাস্তায় বেরিয়েছেন। কিন্তু বাসগুলোতে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ইচ্ছামাফিক।

মানুষের চলাচলেও দেখা গেছে, সবার মধ্যে গা ছাড়া ভাব, যেন দেশে করোনা বলতে কিছু নেই। সামাজিক দ‚রত্বের বালাই দেখা যায়নি বেশিরভাগ জায়গায়। বাসের ড্রাইভার-কন্টাক্টর-হেলপারদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক নেই। যাত্রীদের অনেকের মাস্ক ছিল থুতনির নিচে। কাজের উদ্দেশে বা কর্মস্থলে যাওয়া ছাড়াও অকারণে গল্প-গুজবে লিপ্ত থাকতে দেখা গেছে অনেককে।

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে বাসগুলোর যাত্রীদের মাস্ক না পরা, সামাজিক দ‚রত্ব না মানার বিষয়টি তো ছিলই; অনেক গণপরিবহনে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতে দেখা গেছে। এ নিয়ে যাত্রীদের বাক-বিতন্ডা করতে দেখা গেছে। রাইড শেয়ারিংয়ে যাত্রী নেয়া নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বিভিন্ন সড়কে, মোড়ে দেখা গেছে রাইডারদের অবস্থান।

শাহবাগ থেকে বাসে উঠেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুস সালাম। তিনি বলেন, অফিস খোলা রেখে লকডাউন হয় নাকি, আজকে অফিসের কাজে তিন জায়গায় যেতে হয়েছে। চাকরি মানব, নাকি লকডাউন মানব।

গুলিস্তানের শহিদুল হক বলেন, রমজান আগামী সপ্তাহে। আজ সপ্তাহের প্রথম দিন। লকডাউনের জন্য মানুষকে প্রস্তুতি নিতে হবে। একটু ভিড় হবেই।

রাজধানীর কাজলা থেকে গুলিস্তান ও কাজলা থেকে মতিঝিল ভাড়া ছিল ১০ টাকা। এক দিলোমিটার দূরের শনিরআখড়া থেকে একই ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে কাজলা থেকে গুলিস্তান ভাড়া ২০ টাকা এবং শনিরআখড়া থেকে গুলিস্তান ভাড়া ৩০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। অথচ কোনো সিট ফাঁকা রাখা হচ্ছে না।

একই বাসে চিটাগাং রোড থেকে গুলিস্তান ভাড়া ৫০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। হিমালয়, শ্রাবণ নামের গণপরিবহনে এই ভাড়া আদায় করা হয়। এ ছাড়াও এই রুটের ঠিকানা, মেঘলা, রজনীগন্ধ্যা, লাভলি, অনাবিল নামের বাসে দ্বিগুণ তিনগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অথচ প্রতিটি বাসেই যাত্রী নিচ্ছেন প্রতিটিটি সিটেই।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মোহিতুল রহমান। প্রতিদিন রায়েরবাগ থেকে গুলিস্তান আসেন শ্রাবণ পরিবহনে। তিনি জানালেন, সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক সিট খালি রাখার শর্তে শতকরা ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করেছেন। অথচ গণপরিবহনগুলো সব সিটে যাত্রী তুলেও দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন।

গুলিস্তান টু মিরপুর, সায়েদাবাদ টু গাজীপুর, আবদুল্লাহপুর টু সদরঘাট, সারুলিয়া টু গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ি টু মিরপুর চিড়িয়াখানা, যাত্রাবাড়ি টু গাবতলী রুটের প্রতিটি বাসে একই ভাবে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটছে। যাত্রীদের অভিযোগ করোনার নাম করে ভাড়া বৃদ্ধির নামে বাসের ড্রাইভার কন্টাকটরা যাত্রীদের কাছে জোর করে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে। এটা ডাকাতির নামান্তর।

গতকাল রোববার দুপুরে বাসের অভাবে অনেক যাত্রীকে শাহবাগ মোড়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তবে শাহবাগ থেকে কাওরান পর্যন্ত ও শাহবাগ থেকে পল্টন মোড় পর্যন্ত পুরো রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এদিকে প্রচন্ড গরমে যানজটে আটকে থাকা মানুষের নাভিশ্বাস উঠে চরমে। মেডিক্যাল শিক্ষার্থী নিঝুম মিরপুরগামী বাসে ওঠার জন্য শাহবাগ মোড় থেকে মৎসভবন পর্যন্ত হেঁটে যান। তিনি বলেন, এখনই এ অবস্থা। রোজা আসলে তো আরও খারাপ হবে পরিস্থিতি।

বিভিন্ন মোড়ের ট্রাফিক পুলিশদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার ও শনিবার দুই দিন ছুটি ছিল। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস হওয়ায় রোববার রাস্তায় গাড়ি বেশি। তারা দ্রæত গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছেন। বিধিনিষেধেও রাজধানীতে তীব্র যানজট। মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। গণপরিবহনগুলোও স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কাই করছে না।

পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী গণপরিবহনের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে ডাকাতের মতো টাকা আদায় করছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

সংস্থাটি বলছে, বাড়তি ভাড়ার কারণে সংকটাপন্ন নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ট হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে গণপরিবহনের অতিরিক্ত ভাড়া প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে তারা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here