ভাড়া বাড়লেও গণপরিবহনে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

0
215
ফাইল ফটো

খবর৭১ঃ দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণে সরকার পরিবহন খাতের জন্য যে নির্দেশনা দিয়েছে, তা প্রতিপালনে দেখা যাচ্ছে শৈথিল্য। অথচ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করা হবে এমন শর্তে বাস ও লঞ্চের ভাড়া ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

গত ২৯ মার্চ সরকারের জারি করা ১৮ নির্দেশনার মধ্যে পরিবহন খাতে পালনীয় হিসেবে বলা হয়েছে, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণক্ষমতার অর্ধেকের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা, সদরঘাট, কমলাপুর, গাবতলী বাসটার্মিনাল, মহাখালী বাসটার্মিনালসহ নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের করুণ চিত্র দেখা গেছে।

গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিতে বলা হলেও সকালে ও বিকেলে পরিবহন শ্রমিকরা অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করেছেন। ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৬০ ভাগ বেশি। শতভাগ মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত হয়নি এখনো।

এর কারণে জানতে চাইলে ঘাটারচর থেকে চিটাগাং রোড রুটে চলাচলকারী রজনীগন্ধা পরিবহনের একজন চালকের সহকারী বলেন, ‘অনেকেই কয় মাস্ক পইরা গেছে। নামাইয়া দিতে চাইলেও নামতে চায় না। সিট খালি নাই, উঠাইতে চাই না, ধাক্কা মাইরা উইঠা যায়।’

পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যেও মাস্ক ব্যবহারের প্রবণতা কম দেখা যায়। এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার রুটে চলাচলকারী স্বাধীন পরিবহনের একজন চালকের সহকারী বলেন, ‘যাত্রী ডাকতে হয়, দৌড়াদৌড়ি করতে হয়, মাস্ক পইরা পারি না। খুব কষ্ট হয়।’

সরকারি নির্দেশনা প্রতিপালনে পরিবহন মালিকরাও শ্রমিকদের মৌখিকভাবে বলেই দায় সারেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শ্রমিকরা যেন অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করতে না পারে, সেদিকে আমাদের দৃষ্টি আছে। তারা যেন স্বাস্থ্যবিধি নেমে চলে সে বিষয়েও নির্দেশনা দেয়া আছে। অফিস টাইমে অনেক যাত্রী জোর করে গাড়িতে উঠে যায়, তখন বাড়তি যাত্রী নিতে হচ্ছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার গাড়িতে থাকে। কিন্তু যাত্রী ওঠানামার কারণে সব সময় যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া সম্ভব হয় না।’

এদিকে যাত্রী পরিবহনে অনিয়ম বা স্বাস্থ্যবিধির প্রতিপালন হচ্ছে কি না তা মনিটরিংয়ে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষকেও মাঠে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে সরকারি নির্দেশনার পর ৩১ তারিখ থেকে আমরা কাজ করছি। ঢাকায় ৮টি ও চট্টগ্রামে তিনটি টিম কাজ করছে। কেউ স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’

সড়কের চেয়ে বাজে অবস্থা নৌরুটে। লঞ্চের ডেকের অর্ধেক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচলের নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। ঢাকা সদরঘাট থেকে লঞ্চযোগে ঢাকা ছাড়তে আসা যাত্রীদের মধ্যে সতর্কতার বালাই নেই। যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সোমবার থেকে লকডাউন হচ্ছে এমন খবরের পর ঢাকা ছাড়তে মরিয়া দক্ষিণবঙ্গের মানুষ। শনিবার বিকেলে সদরঘাটের পল্টুন পূর্ণ হয়ে যায় যাত্রীতে। স্বাস্থ্যবিধি যেন উধাও।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে আমাদের সব বন্দর কর্মকর্তা, ট্র্যাফিক কর্মকর্তা ও ইজারাদারদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শুরুতে কিছু কিছু জায়গায় একটু সমস্যা হচ্ছে। মোটামুটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। আজ ও আগামীকালের মধ্যে পুরোটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো যাত্রীরাই মানতে চায় না।’

সদরঘাটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভ্রম্যমাণ আদালত চলমান থাকবে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএর এ কর্মকর্তা।

এদিকে ট্রেনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। কিন্তু কমলাপুর ট্রেন স্টেশনে টিকিট নিতে ভঙ্গ হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। দীর্ঘ লাইনে টিকিট নিতে গিয়ে গা ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে যাত্রীদের।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here