চট্টগ্রামে গণপরিবহণে ভয়াবহ নৈরাজ্য

0
238

খবর৭১ঃ চট্টগ্রামে গণপরিবহণ সংকটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। করোনার সংক্রমণ রোধে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করে অর্ধেক যাত্রী পরিবহণের সিদ্ধান্তে আরও বেকায়দায় পড়েছেন তারা। যানবাহন সংকটের কারণে যাত্রীদের স্টেশনগুলোয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। একদিকে ৬০ শতাংশের স্থলে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে শতভাগ, অপরদিকে চাপ বেশি থাকায় সুযোগে দাঁড় করিয়েও নেওয়া হচ্ছে যাত্রী। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং সরকারি সিদ্ধান্তের বেশি যাত্রী তোলায় বাস-মিনিবাসে যাত্রীদের সঙ্গে চালক-হেলপারদের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেই চলেছে।

সূত্র জানায়, নগরীর ৭০ লাখ মানুষের ভরসা মাত্র ৩০০টি বাস-মিনিবাস। যদিও এক যুগ আগে চট্টগ্রামের ১৭টি রুটে এক হাজার ৫৪৫টি বাস-মিনিবাস চলাচলের প্রস্তাব করা হয়েছিল। পরিবহণ মালিকরা বলছেন, বর্তমানে চাহিদার মাত্র ২৫ শতাংশ বাস-মিনিবাস সড়কে চলাচল করছে।

চট্টগ্রাম ট্রাফিক পুলিশের এক তথ্যে দেখা যায়, কর্ণফুলী ব্রিজ থেকে চকবাজার হয়ে কোতোয়ালি মোড় পর্যন্ত ১ নম্বর রুটে ১০০টি বাস চলাচলের কথা থাকলেও গত কয়েক বছর ধরে এ রুটটি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। কালুরঘাট ব্রিজ থেকে জামালখান হয়ে বিআরটিসি পর্যন্ত ২ নম্বর রুটে ৭৫টি বাস চলাচলের কথা থাকলেও এখন চলে মাত্র ৩-৪টি। ফতেয়াবাদ-মুরাদপুর হয়ে সিনেমা প্যালেস পর্যন্ত ৩ নম্বর রুটে ১০০টি গাড়ির মধ্যে সব কটি চলাচল করে। ভাটিয়ারী থেকে জিইসি হয়ে টাইগারপাস পর্যন্ত ৪ নম্বর রুটে ১৫০টি বাস চলাচলের কথা থাকলেও চলে মাত্র ১৩২টি। বিমানবন্দর থেকে টাইগারপাস হয়ে লালদীঘি পাড় পর্যন্ত ৫ নম্বর রুটে ৭৫ গাড়ির মধ্যে চলে মাত্র ৩০/৩৫টি। সি-বিচ থেকে টাইগারপাস লালদীঘির পাড় পর্যন্ত ৬ নম্বর রুটে ১৫০টির মধ্যে চলে মাত্র ৮০-৯০টি। ভাটিয়ারী থেকে বাদামতলী হয়ে লালদীঘি পাড় পর্যন্ত ৭ নম্বর রুটে ১২৫টির মধ্যে চলে মাত্র ৫৫-৬০টি। অক্সিজেন থেকে বায়েজিদ বোস্তামী হয়ে লালদীঘি পাড় পর্যন্ত ৮ নম্বর রুটে ৭৫টির মধ্যে চলে ১৫-১৬টি। কালুরঘাট থেকে বারিকবিল্ডিং হয়ে সি-বিচ পর্যন্ত ১০ নম্বর রুটে ২০৫টির মধ্যে চলে মাত্র ১১০-১১৫টি। ভাটিয়ারী থেকে ইপিজেড হয়ে সি-বিচ পর্যন্ত ১১ নম্বর রুটে ১১৫টি গাড়ির মধ্যে চলে ৮০-৮৫টি। জিপিও থেকে পটিয়া হয়ে বিচি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি পর্যন্ত ১৩ নম্বর রুটে ৩০ চলাচলের কথা থাকলেও একটিও চলে না। কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে সি-বিচ পর্যন্ত ১৪ নম্বর রুটে এসি বাস প্রিমিয়ার ট্রান্সপোর্ট-এর ২০টি বাস চলাচলের কথা থাকলেও এখন একটিও চলে না। কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে বন্দরটিলা হয়ে সি-বিচ পর্যন্ত ১৫ নম্বর রুটে মেট্রোপ্রভাতি বাস ৫৫টির মধ্যে সব কটিই চলে। কুয়াইশ রুটের মুখ থেকে অক্সিজেন হয়ে লালদিয়ার চর পর্যন্ত ১৬ নম্বর রুটে ৩০টি চলাচলের কথা থাকলেও এখন একটিও চলে না।

নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, ‘৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে চালক-মালিকরা লাভবান হয়েছেন। আগে যেখানে হিউম্যান হলারে চকবাজার থেকে রাস্তার মাথায় ভাড়া ছিল ৮ টাকা, এখন নেওয়া হচ্ছে ১৫-১৬ টাকা। কাজির দেউড়ি থেকে টেম্পোয় চকবাজার পর্যন্ত ভাড়া ছিল ৫ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। অক্সিজেন থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত বাস-টেম্পোয় ভাড়া ছিল ৭ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ১২-১৫ টাকা। মুরাদপুর থেকে কাজির দেউড়ি পর্যন্ত হিউম্যান হলারে ভাড়া ছিল ৬ টাকা। এখন নেওয়া হচ্ছে ১০ টাকা। পাশাপাশি অর্ধেক যাত্রী নেওয়ার নিয়ম মানা হচ্ছে না। কোনো পরিবহণেই নেই হ্যান্ডসেনিটাইজারসহ সুরক্ষাসামগ্রী।’

কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর কন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, গণপরিবহণে যাতায়াত ও ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মালিক-শ্রমিকরা সরকারের ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছে। পাশাপাশি নিচ্ছে অতিরিক্ত যাত্রী। করোনা সংক্রমণের মহাদুর্ভোগের মধ্যে সরকারি ঘোষণা নগরবাসীর জীবনে আর একটি নতুন ভোগান্তি ও মহাযন্ত্রণা যোগ করেছে।’

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহণ মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল বলেন, ‘চট্টগ্রামে এমনিতেই গণপরিবহণ সংকট। তার ওপর করোনায় অর্ধেক যাত্রী পরিবহণের নির্দেশনা যাত্রীদের আরও বেকায়দায় ফেলেছে। চট্টগ্রামে চাহিদার মাত্র ২৫ শতাংশ গণপরিবহণ সড়কে আছে। গণপরিবহণ না-বাড়িয়ে অর্ধেক যাত্রী পরিবহণ ও ভাড়া ভাড়ানোর সিদ্ধান্ত জনগণকে বিপদে ফেলেছে। শপিং মল, হাটবাজারে কোথাও নিয়ন্ত্রণ নেই। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে গণপরিবহণ। করোনা শুধু গণপরিবহণ থেকে ছড়ায় না।’ সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, যানবাহনগুলো অতিরিক্ত যাত্রীর পাশাপাশি দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করলেও দেখার কেউ নেই। সড়কগুলোয় নেই জেলা প্রশাসনের জোরালো অভিযান কিংবা ট্রাফিক পুলিশের তদারকি। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. উমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, যানবাহনে তদারকির জন্য দুই শিফটে ছয়জন ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here