খবর৭১ঃ দেশে লাগামহীন হারে বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। প্রথমটির তুলনায় দ্বিতীয় ঢেউ তুলনামূলক ভয়াবহরূপে আবির্ভূত হয়েছে। এ কারণে সরকারকে একে একে বন্ধ করতে হচ্ছে সবকিছু। ইতোমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানের পর্যটন কেন্দ্র। বাতিল করা হচ্ছে হোটেল-মোটেলে আগাম নেয়া বুকিং। পাশাপাশি নতুন বুকিংও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া কোথাও সন্ধ্যার পর জনগণের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। আবার কোথাও ওষুধ এবং কাঁচামালের দোকান ও বাজার বাদে অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এসব নির্দেশনার প্রায় সবই স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে এসেছে। বৃহস্পতিবার থেকে এ নিষেধাজ্ঞা থাকবে মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত। প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও আছে। এর আগে গত বছর ২৬ মার্চ থেকে দেশের পর্যটন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রথমে লকডাউনের আওতায় ছিল। পরে লকডাউন উঠে গেলেও অনেক প্রতিষ্ঠান প্রায় ৫ মাস বন্ধ ছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১৮ দফা সংবলিত পরিপত্র জারি করে। মূলত এরপরই উল্লিখিত সব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। শুক্রবার জাতীয় চিড়িয়াখানা এবং রংপুরে চিড়িয়াখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আগের রাতে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়া বন্ধ করা হয়। অন্যদিকে অনেকটা লকডাউনের পর্যায়ে চলে গেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। শুক্রবার থেকে চট্টগ্রামে সন্ধ্যা ৬টার পর ওষুধের দোকান ও কাঁচা বাজার ছাড়া আর সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশনা জারি করে জেলা প্রশাসন। এদিন সিলেট বিভাগের সব পর্যটন কেন্দ্রে বাইরের পর্যটক নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। একইভাবে বন বিভাগ ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সুন্দরবনে পর্যটক প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।
পরিস্থিতির ভয়াবহতার কারণে বৃহস্পতিবার ইউরোপসহ ১২ দেশের যাত্রীদের দেশে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন বন্ধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই কারণে এর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি একবারে পৌনে ২ মাস বাড়ানো হয়। একইভাবে তিন পার্বত্য অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পর্যটন কেন্দ্র এবং হোটেল-মোটেলও সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণার খবর পাওয়া গেছে। বন্ধের এ আওতা আরও বাড়তে পারে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে করোনার এই পরিস্থিতি শুরু হয়। এরপর সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রথমে ১৬ মার্চ ১২ দফা এবং পরে ২৬ মার্চ ২২ ও ১৮ দফা সুপারিশ পাঠায়। তাতেই হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন কেন্দ্র, মসজিদসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, মার্কেট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সভা-সমাবেশসহ জমায়েতের ব্যাপারে পর্যবেক্ষণ ও করণীয় উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে যেসব জেলায় সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের বেশি সেসব জেলায় উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান বন্ধের নীতি অনুসরণের সুপারিশ করা হয়। আর ১০ শতাংশের নিচে সংক্রমণ এলাকায় কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা হয়। এসব কারণে দেরিতে হলেও বন্ধের এই উদ্যোগ ইতিবাচক বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। শুক্রবারের সর্বশেষ হিসাবে বর্তমানে দেশে গড় সংক্রমণের হার সাড়ে ২৩ শতাংশ। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চট্টগ্রামে সন্ধ্যায়ই সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ : সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে ওষুধের দোকান ও কাঁচাবাজার ছাড়া সব শপিং মল, বিপণিবিতান এবং হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে। শুক্রবার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান এ সিদ্ধান্তের কথা যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সব বিনোদন কেন্দ্র আগামী দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, চট্টগ্রামে উদ্বেগজনক হারে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে সব খাবার হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিং সেন্টার, বিপণি কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হবে। শুধু ওষুধের দোকান ও কাঁচাবাজার খোলা থাকবে। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এতদিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মানতে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। রোববার থেকে কঠোর ভূমিকা পালন করা হবে। মাঠে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ২০টি টিম।