পি কে হালদারের নামে দুদকের আরও ছয় মামলা

0
356

খবর৭১ঃ
প্রায় সাড়ে চারশ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে কানাডায় পলাতক প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) বিরুদ্ধে আরও ছয়টি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। মামলাগুলোতে পি কে হালদারসহ ৩৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঋণের বিপরীতে মর্টগেজ না রেখে নামসর্বস্ব ১০টি কাগুজে প্রতিষ্ঠানকে এই টাকা পাইয়ে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।

রবিবার দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ সংস্থাটির উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাগুলো করেন।

এর আগে গত ৯ মার্চ দুদক প্রধান কার্যালয়ে অবৈধভাবে ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৩৭ জনের বিরুদ্ধে ১০ মামলার অনুমোদন করে কমিশন। ওই সময় বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। কমিশন অনুমোদিত ওই ১০ মামলা থেকে আজ ছয়টি মামলা দায়ের করা হয়।

পি কে হালদার ছাড়াও মামলাগুলোতে আসামি করা হয়েছে তার অন্যতম সহযোগী ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, এমডি মো. রাশেদুল হক, ভারপ্রাপ্ত এমডি মো. আবেদ হাসান এবং প্রতিষ্ঠানটির অন্য বোর্ড সদস্যদের।

এই মামলার অন্য আসামিরা হলেন- দৃনান অ্যাপারেলসের চেয়ারম্যান কাজী মমরেজ মাহমুদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবু রাজীব মারুফ, ইমেক্সোর প্রোপ্রাইটর ইমাম হোসেন, লিপরো ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম কুমার মিস্ত্রি, উইন্টেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের দুই পরিচালক সুকুমার সাহা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা সাহা, আর্থস্কোপ লিমিটেডের চেয়ারম্যান প্রশান্ত দেউরী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরা দেউরী, ওকায়ামা লিমিটেডের চেয়ারম্যান সুব্রত দাস, আরবি এন্টারপ্রাইজের মালিক রতন কুমার বিশ্বাস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক পাপিয়া ব্যানার্জী ও তার স্বামী পরিচালক বাসুদেব ব্যানার্জী।

৩৭ আসামির মধ্যে আরও রয়েছেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিচালক এম নুরুল আলম, পরিচালক মো. নওশের-উল ইসলাম, পরিচালক নাসিম আনোয়ার, পরিচালক মো. নুরুজ্জামান, পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম ও পরিচালক জহিরুল আলম।

মামলাগুলোতে কাগুজে প্রতিষ্ঠান লিপারো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের নামে ১৭৪ কোটি টাকা, আর বি এন্টারপ্রাইজের নামে ৫৫ কোটি টাকা, ওকায়ামা লিমিটেডের নামে ৮৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ইমেক্সোর নামে ৫৮ কোটি টাকা এবং কনিকা এন্টারপ্রাইজের নামে ৬০ কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য দেয়া হয়েছে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা অসৎ উদ্দেশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই ছাড়াই কোনো মর্টগেজ না নিয়ে দশটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মালিককে ঋণ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেন। এই প্রক্রিয়ায় বেনিফিশিয়ারিরা ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে প্রায় ৪৩৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা ভুয়া ঋণের নামে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়, বিপুল পরিমাণ এই অর্থ পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ভুয়া কোম্পানি ও বিভিন্ন ব্যক্তির হিসাবে স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপনপূর্বক পাচার করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ করেছেন।

গত বছরের ৮ জানুয়ারি প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করে দুদক। মামলার এজাহারে এক হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা পাচারেরও অভিযোগ আনা হয়।

গত ২৪ ও ২৫ জানুয়ারি পাঁচটি ভুয়া ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকার ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে পি কে হালদারসহ ৩৩ জনকে আসামি করে পাঁচটি মামলা করে দুদক।

পি কে হালদার ছাড়াও এসব মামলায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, সাবেক এমডি মো. রাশেদুল হক, নয়জন বোর্ড সদস্য, পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীসহ ৩৩ জনকে আসামি করা হয়।

দুদক সূত্রে জানা যায়, পি কে হালদারের আরও ৩৩ জন সহযোগীর সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ জারির অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। শিগগির এদের বিরুদ্ধে এই নোটিশ জারি করা হবে।

গত ১৬ মার্চ পি কে হালদারের বান্ধবী ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদা রুনাই, একই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ আবেদ হাসান ও সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরীকে মতিঝিল এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে দুদক। পি কে হালদারের সহযোগী ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেমসহ ৪৫ জনের ইমিগ্রেশন বন্ধ চেয়ে ইমিগ্রেশন অথরিটির কাছে পত্র দেয় সংস্থাটি।

২০১৯ সালের শেষ দিকে দুদক অবৈধ ক্যাসিনো মালিকদের সম্পদের তদন্ত শুরু করলে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পি কে হালদারের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে আসে। গত বছরের ৮ জানুয়ারি প্রায় ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ টাকার সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটি।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকেই এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। গত বছরের অক্টোবরে পি কে হালদার ভারত হয়ে কানাডায় পালিয়ে যান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here