হবিগঞ্জে চাষ হয়েছে স্কোয়াশ কৃষকদের মাঝেও ব্যাপক সাড়া

0
207

মঈনুল হাসান রতন হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ একটা সময় সৌদি আরবের মরুভূমির বুকে চাষ হতো অত্যন্ত সুস্বাধু সবজি স্কোয়াশ। যাকে আবার ‘কোচাও’ বলা হয়ে থাকে। তবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই সবজিটি আবার ‘জুকিনী’ নামে পরিচিতি। অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে এই সবজিটি জনপ্রিয় হলেও বাংলাদেশে ধীরে ধীরে এই সবজিটি এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যেই ফলন দেয়ায় এর প্রতি আগ্রহ বাড়ছে সাধারণ কৃষকদের। স্কোয়াশ মূলত একটি শীতকালীন সবজি। স্কোয়াশ পরিপক্ক হলে স্যুপ ও বেকারিতে ব্যবহৃত হয়, আধপাকা অবস্থায় সবজি হিসেবেও খাওয়া হয়। এর বীজ তেল ও জিংক দিয়ে পরিপূর্ণ। বীজ ভেজে যেমন খাওয়া যায়, গুড়া করে ময়দা হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। উপকারী এ সবজিটির ফুল, কচি কাণ্ড এমনকি এর পাতা খাওয়াও সম্ভব। এই শীতে বাংলাদেশের বাজারে যে সব সবজি পাওয়া যাচ্ছে তার তুলনায় অনেকগুন পুষ্টিসমৃদ্ধ এই স্কোয়াশ। ভিটামিন-এ, ভিটামিন-সি, ভিটামিন বি-৩, ভিটামিন বি-৯, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, লৌহসহ নানান খনিজ পদার্থ দিয়ে সমৃদ্ধ এই সবুজ সবজিটি।তবে মরুর এই সবজিটি এবার চাষ হয়েছে হবিগঞ্জেও। জেলার বাহুবল উপজেলার ভূলকোট গ্রামের সানু মিয়া। তিনি প্রায় ২০ শত জমিতে স্কোয়াশ চাষ করেছেন।

সময়মত সেচ প্রদান, ফ্রুট ফ্লাই এর জন্য ফাঁদ ব্যবহার ও মোজাইক ভাইরাসের জন্য ছত্রাকনাশক স্প্রে ব্যবহার করায় কোনো ধরনের রোগ বালাই আক্রমণ করতে পারেনি তার জমিতে। যার ফলে তার ক্ষেতের এই স্কোয়াশ এখন স্থানীয় ভাবে বাজারজাত করণ শুরু হয়েছে। ভালো দাম পাওয়ায় আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন তিনি। জানা যায়, স্থানীয় কৃষিভাগের পরামর্শ গ্রহণ করে শীতকালে এ সবজি চাষ শুরু করেন সানু মিয়া। এতে তার ব্যয় হয়েছে মাত্র আট হাজার টাকা। যা বিক্রি হবে অন্তত ৬০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকায়। বীজ বপন করার ৩০ দিনের মধ্যে ফুল আসতে শুরু করে এবং ৪৫ দিন থেকে ফসল সংগ্রহ শুরু হয়। প্রায় ৮০দিন পর্যন্ত ফসল সংগ্রহ করা যায় এটিতে। প্রতিটি গাছেই ১০ থেকে ১৫টি পর্যন্ত ফল আসতে দেখা দেখা গেছে। জাতভেদে প্রতিটি সবজি ১ থেকে ৩ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। যার খুচরা বাজার মূল্য প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও পাইকারি ৩০-৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। মাত্র দুই মাস বয়সেই সানু মিয়ার স্কোয়াশ গাছে এমন সবজি দেখে অন্যান্য কৃষকদের মাঝেও ব্যাপক সাড়া পড়েছে। সানু মিয়া জানান, তিনি আগে বিভিন্ন প্রকার দেশীয় সবজি চাষ করলেও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায়া তেমন লাভের মুখ দেখেননি। তবে এবার বিদেশি এই সবজি চাষ করে তিনি ও তার পরিবারের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। অত্যাধিক লাভবান হওয়ায় আগামী তিনি আরো ব্যাপক আঁকড়ে এ সবজি চাষ করবেন বলেও জানান। এছাড়াও এ সবজি চাষে স্থানীয় কৃষি অফিস তাকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করেছে বলেও জানান সানু মিয়া।উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. শামীমুল হক শামীম জানান, কম সময়ে বেশি ফলন পাওয়ায় এখন অনেক কৃষকই স্কোয়াশ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। এছাড়াও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা সহজেই অতিরিক্ত মুনাফা অর্জন করছেন। তাই সানু মিয়ার মতো কৃষকদের স্কোয়াশ চাষে আগ্রহী করতে কাজ করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি। এছাড়াও বিষমুক্ত সবজি হিসেবে দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বিদেশি এই সবজিটি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here