প্রথম দিনেই ভয়কে জয় করলেন ৩১ হাজার মানুষ

0
239

খবর৭১ঃ মহামারি থেকে মুক্তির প্রত্যাশা নিয়ে সারা দেশে শুরু হয়েছে করোনা ভাইরাসের গণটিকাদান। রবিবার প্রথম দিন টিকা নিয়ে ভয়কে জয় করে সবাইকে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার কয়েক জন সদস্য, ৫৪ জন বিচারপতি, কয়েক জন প্রতিমন্ত্রী, এমপি, মেয়র, সচিব ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গণটিকাদান কার্যক্রমের প্রথম দিন রবিবার টিকা নিয়েছেন ৩১ হাজার ১৬০ জন।

ভ্যাকসিন নিয়ে নানা মহল থেকে এসেছিল প্রতিক্রিয়া। কেউ কেউ ভ্যাকসিন নেওয়া কিংবা না নেওয়ার বিষয়ে সংশয়ে ছিলেন, ছিলেন ভয়ে। ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শঙ্কাও ছিল আলোচনায়। এই শঙ্কা-ভয় কাটাতে এগিয়ে আসেন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা। সব আলোচনা-সমালোচনা, দ্বিধা-ভয় কাটিয়ে একযোগে সারা দেশে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম চলে। ভ্যাকসিন গ্রহণের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে দেশের ১ হাজার ৫ কেন্দ্রে। এই আনন্দমুহূর্ত আয়োজনের অগ্রসারিতে ছিলেন ২ হাজার ৪০০ স্বাস্থ্যকর্মী। ভ্যাকসিন কেন্দ্রে নিয়োজিত ছিলেন ৭ হাজার ৩৪৪ জন কর্মীও। ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য রাজধানীর ৫০টি হাসপাতাল এবং রাজধানীর বাইরে ৯৫৫টি হাসপাতালকে প্রস্তুত করা হয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক রবিবার সকাল ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলনকক্ষে ভিডিও কানফারেন্সের মাধ্যমে সারা দেশে টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। এ সময় বিভিন্ন জেলায় টিকাদান কার্যক্রমে জড়িত কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। এর পরপরই বিভিন্ন জেলায় টিকাদান কার্যক্রম শুরু হয়। পরে বেলা সোয়া ১১টার দিকে মহাখালী শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে যান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। মন্ত্রিপরিষদের পাঁচ জন সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে নিজ শরীরে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এরপর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাকসিন ফর ভিক্টরি, ভ্যাকসিন নিলে জয়, ভ্যাকসিনে নেই ভয়।’ এই হাসপাতালে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, মত্স ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাইল করিম, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, বন ও পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ একসঙ্গে আনন্দঘন পরিবেশে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। টিকা নিয়ে যেন কোনো রিউমার না হয়। টিকা দেওয়ার পর প্রায় ৩০ মিনিট আমরা সবাই একসঙ্গে বসে কথা বললাম। সবাই সুস্থ আছি। কাজেই আজ থেকে দেশব্যাপী যে ভ্যাকসিন কার্যক্রম শুরু করা হলো, তাতে দেশের সব শ্রেণির মানুষই ভ্যাকসিন গ্রহণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসবে বলে আমরা আশাবাদী। এরপর ভ্যাকসিন নিয়ে কোনো রকম মিথ্যা গুজব সৃষ্টি করা হলে সেক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’ ভ্যাকসিন গ্রহণকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম, বিএমএর সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীন, স্বাচিপের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, মহাসচিব ডা. এম এ আজিজ এবং বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মুবিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। টিকা নেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে কবিতা আবৃত্তি করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশের সব জনগণকে নিবন্ধনের মাধ্যমে ভ্যাকসিন গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। রবিবার বিকালে শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে টিকা গ্রহণের পর এ আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি। সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আজ আমার স্ত্রীসহ ভ্যাকসিন নিয়েছি। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো অসুবিধা হয়নি। ভ্যাকসিন নিলে কোনো সমস্যা নেই।’ তিনি বলেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ আদালত হলো আপিল বিভাগ। আজ দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের আমিসহ সাত বিচারপতি ভ্যাকসিন নিয়েছেন। এদিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন।

প্রথম দফায় অগ্রাধিকারভিত্তিক ১৮ শ্রেণির করোনা সম্মুখযোদ্ধা এবং ৫৫ বছরোর্ধ্ব নাগরিকেরা বিনা মূল্যে এই ভ্যাকসিন নেন। রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন দুপুরে সচিবালয়ের ক্লিনিকে গিয়ে টিকা নেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘টিকা নেওয়ার পর আমি তো একই রকম অনুভব করছি, ব্যতিক্রম কোনো অনুভূতি আমার হয়নি।’ শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গিয়ে টিকা নেওয়ার পর আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেন, ‘এই টিকার অপেক্ষায় ছিলাম। টিকা দিতে পেরে স্বস্তিবোধ করছি।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাকসিন নেন বিচারপতি জিনাত আরা হক, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম। একই হাসপাতাল থেকে টিকা নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য মুহাম্মদ সামাদ। টিকা নেওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘কয়েক দিন আগেই রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম। আজকে প্রথম দিনে টিকা নিলাম, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সবাই টিকা নিতে উত্সাহ পায়।’ রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভ্যাকসিন নেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমার তিন বন্ধু বিদেশ রয়েছে। তারা ভ্যাকসিন এক্সপার্ট, তাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সুতরাং টিকা নেওয়ার বিষয়ে আমার কোনো ভয় নেই। সবারই টিকা নেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখনও ষড়যন্ত্র চলছে: আইনমন্ত্রী

রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহুল ইসলাম। এছাড়া এই হাসপাতালে টিকা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ২১ জন শীর্ষ কর্মকর্তা। গতকাল জাতীয় হূদেরাগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভ্যাকসিন নেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক ও তার স্ত্রী তারাবো পৌরসভার মেয়র হাছিনা গাজী। নেত্রকোনায় ভ্যাকসিন নেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু। চট্টগ্রামে ভ্যাকসিন নেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। টঙ্গীতে ভ্যাকসিন নেন নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। ঠাকুরগাঁওয়ে ভ্যাকসিন নেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন। দিনাজপুরে ভ্যাকসিন নেন হুইপ ইকবালুর রহিম, কুষ্টিয়ায় ভ্যাকসিন নেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।

সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠ কেন্দ্র থেকে করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণ শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মুহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, করোনাযুদ্ধে ডিএমপির ২৭ জন পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতো আমাদেরও, বিশেষ করে নিচের স্তরের পুলিশ সদস্যদের মধ্যে সংশয় ছিল টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় না পেয়ে দেশের মানুষকে টিকা নেওয়ার আহ্বান জানান শফিকুল ইসলাম। ডিএমপি কমিশনারের ভ্যাকসিন গ্রহণের পর ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মো. মনিরুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) মীর রেজাউল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) কৃষ্ণপদ রায়, অতিরিক্ত পুলিশ কশিনার (লজিস্টিকস, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) ড. এ এফ এম মাসুম রব্বানী, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার করোনা ভ্যাকসিন নেন।

টিকা নিয়ে জাফরুল্লাহ বললেন, ‘ভয় নেই’

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী করোনার টিকা নিয়েছেন। গতকাল দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে তিনি টিকা নেন। টিকা নেওয়ার পর তিনি বলেন, ‘ভালো আছি, কোনো ভয় নেই।’ জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘দেশবাসীকে আহ্বান করছি, যখনই আপনার তারিখ আসবে, টিকা নেবেন। এটা আপনাদের কর্তব্য। প্রধানমন্ত্রী যদি এখানে এসে টিকাটা নিয়ে যান, তাহলে দেশবাসী আরো বেশি সাহস পাবে।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here