অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক তালিকা ধরে বন্ধের নির্দেশ

0
333

খবর৭১ঃ হাসপাতাল বা ক্লিনিকের লাইসেন্স পেতে আবেদন করেননি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে; কিন্তু দিব্যি চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে দেশের প্রায় তিন হাজার বেসরকারি চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র। আবার কেউ কেউ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছে বছরের পর বছর।অনেকের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে বহু আগে, কিন্তু তা নবায়নের নাম নেই।

এভাবেই চলছে দেশের অনেক নামিদামি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। তথ্য বলছে, সব মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার হাসপাতাল-ক্লিনিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া ‘চিকিৎসাসেবা’ দিয়ে যাচ্ছে দিব্যি। চিকিৎসাকেন্দ্র নামের আড়ালে এসব প্রতিষ্ঠানে কারা চিকিৎসা দিচ্ছে, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বাড়ছে অপচিকিৎসার অভিযোগ।
সম্প্রতি মোহাম্মদপুরে ‘মাইন্ড এইড’ নামের অনুমোদনহীন একটি হাসপাতালে পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধর করে মেরে ফেলার পর আবার দেশজুড়ে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে মাঠে নামছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ইতোমধ্যে এগুলোর তালিকা তৈরি কাজ অনেকটা এগিয়েছে সারা দেশে। তালিকা ধরে বন্ধের উদ্যোগ নিতে নির্দেশ গেছে সিভিল সার্জনদের কাছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেছেন, ‘তালিকা ধরে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে সেগুলো বন্ধ করা হবে।’ অবশ্য জনবল সংকটের কারণে একসঙ্গে সব জায়গায় অভিযান চালানো সম্ভব হবে না বলে মনে করেন মহাপরিচালক।

১৯৮২ সালের মেডিকেল অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনেস্টিক সেন্টার চালানোর সুযোগ নেই।
জানা গেছে, গত ১০ নভেম্বর সারা দেশে অনুমোদিত ও অনুমোদনহীন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠাতে বিভাগীয় পরিচালকদের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পরে বিভাগীয় কার্যালয় থেকে পাঠানো তথ্য নিয়ে লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা তৈরি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

এর আগে গত ৮ নভেম্বর বিভাগীয় পরিচালকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনদের নিজ নিজ জেলার অনিবন্ধিত, অবৈধ, নিয়মবর্হিভূতভাবে পরিচালিত, সেবার মান খারাপ এমন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে বিধি মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রয়োজনে সিলগালা করে অধিদপ্তরে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশালের সিভিল সার্জন ডা. মো. মনোয়ার হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা তালিকা সংগ্রহ করছি। রবিবারের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব আশা করি।’

অবৈধ হাসপাতালের বিরুদ্ধে এমন উদ্যোগ এই প্রথম নয়। এর আগে করোনা চিকিৎসায় গুরুতর অনিয়মের অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযানের পর দেশের অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক নিয়ে বিস্তর অভিযোগ আসার পর এ খাতে শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। লাইসেন্স নবায়ন বা আবেদন করতে গত ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। কথা ছিল যারা আবেদন করবে না, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে। কিন্তু তা খুব একটা দৃশ্যমান হয়নি।

জানা গেছে, দেশে অনুমোদনহীন ১১ হাজার ৯৪০টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে ২ হাজার ৯১৬টি হাসপাতাল ও ক্লিনিক লাইসেন্সের জন্য কোনো আবেদনই করেনি। ৯ হাজার ২৪টি হাসপাতাল-ক্লিনিকের মধ্যে বেশির ভাগ লাইসেন্সের জন্য আবেদনের পর অনুমোদন ছাড়াই চিকিৎসা শুরু করেছে।

অন্যদিকে অনেকগুলোর লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো অবৈধ বলছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘আমাদের এত জনবল নেই যে একসঙ্গে সবগুলো বন্ধ করে দিতে পারব। আমি সিভিল সার্জনদের বলেছি, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসব হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ার জন্য।’

অধিদপ্তরে তালিকা পাঠানোর কথা জানিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন ডা. মো. মাহফুজার রহমান সরকার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার পাশাপাশি লাইসেন্স নেই এমন হাসপাতালের-ক্লিনিকও পাওয়া গেছে। আমরা সব তালিকা পাঠিয়েছি। পরবর্র্তী নির্দেশনা অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কোন বিভাগে কত অবৈধ চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র
অনুমোদনহীন যেসব চিকিৎসা সেবাকেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মধ্যে ৩ হাজার ৫৩৫টি ঢাকা বিভাগে, ২ হাজার ২৩২টি চট্টগ্রাম বিভাগে, ১ হাজার ৫২৩টি খুলনা বিভাগে, ১ হাজার ৪৩৮টি রাজশাহী বিভাগে, ১ হাজার ৯৯টি রংপুর বিভাগে, ৯৬৩টি ময়মনসিংহ বিভাগে, ৬০৩টি বরিশাল বিভাগে এবং ৫৪৬টি সিলেট বিভাগে।
জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এসব অনুমোদনহীন চিকিৎসা সেবাকেন্দ্রের সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত। ফলে অভিযান চালিয়ে বন্ধ করতে গেলে অনেক সময় বাধার মুখে পড়তে হয় কর্তৃপক্ষকে।

অবৈধ ক্লিনিক ও হাসপাতালের সঙ্গে রাজনৈতিক ব্যক্তি, চিকিৎসকসহ প্রভাবশালীরা জড়িত থাকে এমনটা জানিয়ে এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে গেলে নানা বাধা-বিপত্তি আসে।’ গণমাধ্যমে এদের নিয়ে ফলাও করে প্রচার হলে কাজ করা সহজ হবে বলে মনে করেন তিনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here