মাইন্ড এইড হাসপাতালে পুলিশের তালা

0
374
মাইন্ড এইড হাসপাতালে পুলিশের তালা

খবর৭১ঃ পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় রাজধানীর আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এছাড়া হাসপাতালটির নানা অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মঙ্গলবার বিকালে আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় অবস্থিত হাসপাতালটি পরিদর্শনে আসেন তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার(ডিসি) হারুন অর রশিদ। এ সময় তার নির্দেশে পুলিশ হাসপাতালটির প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।

সোমবার দুপুরে মানসিক সমস্যার কারণে পরিবারের সদস্যরা সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিমকে ওই হাসপাতালে নিয়ে যান। অসুস্থতা নিয়ে হাসপাতালটিতে ভর্তির কিছুক্ষণ পরই মারা যান তিনি। হাসপাতালের অ্যাগ্রেসিভ ম্যানেজমেন্ট রুমে তাকে মারধরের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘক্ষণ অচেতন থাকা অবস্থায়ও তাকে ভর্তি কার্যক্রম করা হয়নি। কিছুক্ষণ পর তাকে হাসপাতালের লোকজন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যায়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান হাসপাতালে নেয়ার আগেই মৃত্যু (ব্রট ডেথ) হয় পুলিশ কর্মকর্তার।

এ ঘটনায় আদাবর থানায় হত্যা একটি মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার আনিসুল করিম শিপনের বাবা বাদী হয়ে ১৫ জনকে আসামি করে এ মামলা করেন। মামলা নম্বর ৯।

হাসপাতালটি পরিদর্শন শেষে পুলিশ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, ‘হাসপাতালটি ঘুরলাম। ঘুরে যেটি মনে হলো এটি হাসপাতাল নয় এটি জেলখানা। বারান্দাকেও তারা এমনভাবে রুম বানিয়েছে যেখানে বাতাস ঢোকার কোনো সিস্টেম নাই। সেখানে সাধারণ মানুষ গেলেও অসুস্থ হয়ে যাওয়ার কথা আর সেখানে অসুস্থ রোগী গেলে তার কী অবস্থা! অথচ এখানে একজন রোগীর উপর ১০ থেকে ১২ জন উঠলে তিনি তো এমনিতেই মারা যাবে।’

হারুন অর রশিদ বলেন, ‘হাসপাতালে ডাক্তার নেই, মানসিক হাসপাতালের অনুমোদন নেই, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন নেই। এমন একটি বাড়ির মধ্যে যেটি জেলখানার মতো তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগী এনে এই কাজগুলো করে। আমি আবারো বলি আমাদের একজন সিনিয়র এএসপিকে নির্মমভাবে অত্যাচার নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমরা ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের ১০ দিন করে রিমান্ডে আনা হয়েছে। এছাড়া আরও একজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যিনি এখন রাজধানীর নিউরোসাইন্স হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার নাম ডাক্তার নিয়াজ। তার সঙ্গে আরও যারা যারা জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যাকে হারিয়েছি তিনি শুধু একজন সিনিয়র এএসপি না তিনি একজন মেধাবী কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি ৩১তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। হয়তো তাকে আমরা ফেরত আনতে পারবো না, তার পরিবারকে আমরা ফেরত দিতে পারবো না, কিন্তু আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে, বাংলাদেশ পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে তার হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত করা। না হলে আমরা বিবেকের কাছে দায়ী থাকবো।’

হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আমি সাংবাদিকদেরকে বলবো, আপনাদের কাছে কোনো তথ্য থাকলে আমাদের দিয়ে সহযোগিতা করবেন। যাতে আমরা যাবতীয় তথ্য নিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।’

তিনি জানান, হাসপাতালে সাতজন পরিচালকের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে আনা হয়েছে। এছাড়া আরেকজন পরিচালক হাসপাতালে ভর্তি, তাকেও আমরা গ্রেপ্তার করবো। এছাড়াও আমরা সব কাগজপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করছি।

তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার(ডিসি) বলেন, ‘এই যে ঢাকা শহরে অরাজকতা চলছে, বিশেষ করে মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরেবাংলা নগরে অনেকগুলো অবৈধ ক্লিনিক গড়ে উঠেছে, তাদের কোনো বৈধ কাগজ নেই। তারা শুধু সরকারি হাসপাতাল ও অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে জোরে রোগী ভাগিয়ে আনে। অনেক সময় অনেকে আমাদের কাছে অভিযোগ করে না। অভিযোগ করে না বলেই এগুলো গড়ে উঠেছে। আমরা এই হাসপাতালটিকে তালা মেরে দিয়েছি। এছাড়া যে অবৈধ ক্লিনিকে রোগী নিয়ে আসে ওই ক্লিনিক বন্ধ করবো এবং ওই দালালদেরও ধরবো। পাশাপাশি যে অ্যাম্বুলেন্সগুলো আছে, তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে রোগী এনে সরকারি হাসপাতালে না নিয়ে এখানে এনে ভর্তি করে তাদেরকেও ধরবো।’

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here