খবর৭১ঃ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে জলবায়ু ও আবহাওয়ার নিয়ত পরিবর্তন বিশ্বব্যাপী উত্কণ্ঠার কারণ হিসেবে প্রতিভাত হচ্ছে। অপরিণামদর্শী হয়ে মানবজাতি যখন প্রকৃতির বিপরীতে গিয়ে প্রতিযোগিতায় মত্ত, তখন প্রকৃতিও তার পালটা জবাব দিচ্ছে নানা উপায়ে। তার মধ্যে ধরিত্রীতে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব ও হুমকি আছে পুরোভাগে। আগামী প্রজন্মের জন্য নিরাপদ ও পরিবেশ সুরক্ষায় বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের গতি ধীর করতে প্রচেষ্টা চলছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন রুখে পরিবেশ সুস্থ রাখার অঙ্গীকারে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্যারিস জলবায়ু চুক্তি, যা বড় দাগে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বের প্রায় সব রাষ্ট্রই ধরিত্রীর উষ্ণতার পরিমাণ কমাতে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। ২০১৫ সালে তত্কালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। ১৮৭টি দেশ মিলে একত্রে অঙ্গীকারবদ্ধ হয় গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসারণ কমিয়ে সবুজ পৃথিবীর আবহাওয়া সুন্দর রাখার। বিশ্বের দ্বিতীয় গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসারণকারী দেশ হিসেবে আমেরিকার এই চুক্তি গ্রহণ করা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ।
চুক্তি অনুযায়ী, এই শতকে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা কিছুতেই ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের বেশি বাড়ানো যাবে না। ১.৫ থেকে ২ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে বেঁধে ফেলতে হবে। তার জন্য শিল্পক্ষেত্রে বা আর্থিক ক্ষেত্রে যা যা বদল আনার, তা আনতে হবে। তৈরি করতে হবে নয়া নীতি। গ্রিনহাউজ গ্যাসের নিঃসারণ কমাতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং চুক্তি স্বাক্ষরকারী প্রত্যেক রাষ্ট্রকে একইভাবে তা কার্যকর করতে হবে। সে সময় প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলনে আমেরিকার এই চুক্তিতে অংশ নেওয়া তখনকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট (সে সময়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট) জো বাইডেনের অন্যতম সাফল্য হিসেবে দেখা হয়। তার এক বছর পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
২০১৭ সালে তিনি বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ‘আজগুবি’ উল্লেখ করে এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেন। অতঃপর গত ৪ নভেম্বর দেশটিতে যেদিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গণনার কাজ চলছিল, সেদিনই প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে মার্কিন সরকারের বেরিয়ে যাওয়ার খবর আসে। এই পদক্ষেপে বিশ্ববাসী হতাশ হয়।
গত ৫ নভেম্বর জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা প্যাট্রিসিয়া এসপিনোসা এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চলে যাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করে বলছিলেন, একধরনের শূন্যতা তৈরি হবে এবং এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। তবে পরিবেশবাদীরা জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এখন আশাবাদী। কারণ সেদিনই জো বাইডেন টুইটে বলেন, ‘আজ ট্রাম্প প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। ঠিক ৭৭ দিন পর বাইডেন প্রশাসন তাতে যুক্ত হবে।’
তার আগে বাইডেন তার অধিকাংশ নির্বাচনি প্রচারে বারংবার বলেছেন, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার ৭৭ দিনের মধ্যেই ফের আমেরিকা প্যারিস জলবায়ু চুক্তির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে। প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে বাইডেন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কিছু কাজ করবেন, যার মধ্যে প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে পুনরায় যোগ দেওয়া অন্যতম। বাইডেন আবার চুক্তিতে ফেরার পাশাপাশি বাতাসের মান বাড়ানো এবং গ্রিনহাউজ গ্যাস কমানোর জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টার মধ্য দিয়ে বিশ্ব উষ্ণায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পথে এগোবেন।
এছাড়াও বাইডেন বলেছেন, তিনি চান ২০৫০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের কার্বন নিঃসারণ শূন্যতে নামিয়ে আনুক। তিনি সরকারি জমিতে তেল ও গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য নতুন করে ইজারা দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে চান। একই সঙ্গে পরিবেশের জন্য ভালো ‘গ্রিন এনার্জি’ প্রকল্পে দুই ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করার কথাও বলেছেন।
বাইডেনের প্রচার টিম মনে করে, তরুণ প্রজন্ম জলবায়ু ইস্যুতে নির্বাচনে তাকে সমর্থন করেছে। সবাই আশা করছেন, বাইডেনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র আবার জলবায়ু চুক্তিতে ফিরে যাবে। বিশ্বে ফিরে আসবে স্বস্তি।