ইউরোপের মতো বাংলাদেশেও করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে

0
282
ইউরোপের মতো বাংলাদেশেও করোনার সংক্রমণ বাড়তে পারে।

খবর৭১ঃ
করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে আগামী শীতে। অত্যন্ত বিপজ্জনক এ ভাইরাস শুরু হয়েছিল প্রচন্ড ঠান্ডার শহর চীনের উহানে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ঠান্ডায় এই ভাইরাস শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ফলে আগামী ডিসেম্বরে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে যখন বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রির মধ্যে নেমে আসবে, তখন হয়তো করোনার আরেকটি ঢেউ আসতে পারে। ইতিমধ্যে ইউরোপের কয়েকটি দেশে (ফ্রান্স, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, স্পেন) করোনা দ্বিতীয়বারের মতো হানা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই পরিস্থিতিতে সবারই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। মাস্কবিহীন ঢিলেঢালা চলাচলে ঝুঁকিতে রয়েছে অনেকে।

বাংলাদেশ সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ের মধ্যেই রয়েছে এখন পর্যন্ত। প্রথম পর্যায়ের করোনা সংক্রমণ কখন শেষ হবে, তা বলতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সম্প্রতি বলেছেন, তার দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসছে। সব কিছু নিয়ন্ত্রণে রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি নাগরিকদের সতর্ক থাকার তাগিদ দিয়ে বলেছেন, দ্বিতীয়বার লকডাউন দিতে আমরা চাই না। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ১০ হাজার পাউন্ড জরিমানা করা হবে বলেও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, আগামী অক্টোবর এবং নভেম্বরে ইউরোপের অনেক দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসতে পারে। এসব দেশের মধ্যে আলবেনিয়া, বুলগেরিয়া, চেক রিপাবলিক, বেলজিয়াম, ইতালি, ব্রিটেন, ফ্রান্স, পোলান্ড, নেদারল্যান্ড, স্পেন উল্লেখযোগ্য।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন শীতে করোনার ভাইরাস দ্বিতীয় ঢেউ আসার আশংকা করেছেন। এর যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। চীনে যখন করোনা ভাইরাস মহামারী রূপ নেয় তখন সেদেশে প্রচন্ড শীত ছিল। তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে শীত রয়েছে, সেখানে করোনা সংক্রমণ বাড়ে, আবার কমেও। গরমে আমাদের দেশে করোনা সংক্রমন কমার কথা ছিল। কিন্তু কমেনি। তবে কোন সময় এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ে কিংবা কমে সেটা এখনো গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। তবে শীত মৌসুমে যেহেতু এদেশে বেশি ভাইরাসজনিত রোগ দেখা দেয়, তাই এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পড়তে হবে। এক্ষেত্রে উদাসিনভাব দেখালে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন।

করোনা মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, করোনা ভ্যাকসিন আসলেও মাস্ক পড়তে হবে। প্রতিটি নাগরিকের ভ্যাকসিন পাওয়া নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত ঝুঁকি আছে। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস শীতকালে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। কারণ এটি শীতকালে বেশি সক্রিয় হয়। অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করে না। মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এক্ষেত্রে নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করা জরুরি।

নিপসনের সাবেক পরিচালক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুর রহমান বলেন, শীতকালে করোনা সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা শতকরা ৯৫ ভাগ। শীত প্রধান দেশগুলোতে বর্তমানে একাধিকবার সংক্রমণ বাড়ছে। তিনি বলেন, দেশের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ মানুষ মাস্ক পড়ে না। হাসপাতালগুলোতেও মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায় না অনেককে। মাস্ক ব্যবহারের আইন আছে। এই আইনের বাস্তবায়ন করতে হবে। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি আসার আগেই সতর্ক থাকা উত্তমপন্থা। তিনি বলেন, যার যে কাজ সেই কাজ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করতে হবে। কোন কিছু ধরার পর হাত ধুতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) পরিচালক ড. রবার্ট রেডফিল্ড বলেছেন, মাস্ক ভ্যাকসিনের চেয়ে বেশি কার্যকর।’ আমাদের দেশে ৯৫ শতাংশ মানুষ মাস্ক পড়ে না। তাই পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন বলেন, করোনা শীতপ্রধান দেশে দ্বিতীয়বার দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশেও আগামী শীতে বাড়তে পারে। কারণ শীতকালে ভাইরাসজনিত রোগ বেশি হয়। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here