বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় ওসি প্রদীপ, পরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত বখতিয়ার মেম্বার

0
361
বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় ওসি প্রদীপ, পরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত বখতিয়ার মেম্বার

খবর৭১ঃ অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ নিহতের মাত্র সাত দিন আগে, আরেকটি ভয়াবহ কাণ্ড ঘটান ওসি প্রদীপ। পাশের উখিয়া থানার ইউপি মেম্বার বখতিয়ারকে ধরে নিয়ে যান মধ্যরাতে। তার বিরুদ্ধে টেকনাফ বা উখিয়া থানায় কোনো মামলা না থাকলেও ‘বন্দুকযুদ্ধে’র দিন দায়ের করান মাদকের মামলা। ‘বন্দুকযুদ্ধে’র রাতেও বখতিয়ারের বাসায় যান প্রদীপ।

তুলে নিয়ে যান, নগদ ১৮ লাখ টাকাসহ মালামাল। পরিবারের অভিযোগ, নগদ টাকাসহ অনেক কিছুই দেখানো হয়নি সিজার লিস্টে। ২৩ জুলাই। ভোর আনুমানিক সাড়ে তিনটা।

কক্সবাজারের উখিয়ার রাজাপালং এর মেম্বার বখতিয়ার আহমদের বাসায় আসে পুলিশ। টেকনাফ থানার সে সময়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ ও উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মর্জিনা আক্তারের নেতৃত্বে বাসায় প্রবেশ করে অন্তত ৪০/৫০ জন পুলিশ। এরপর একজন আসামিকে চিনিয়ে দিতে হবে, এমন কথা বলে বখতিয়ার মেম্বারকে নিয়ে যান তারা।

বখতিয়ার মেম্বারের স্ত্রী ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শাহীন আক্তার বলেন, বাসায় এসে পুলিশ বলে টেনসন করবেন না একজন আসামিকে চিহ্নিত করতে তাকে নিয়ে যাচ্ছি। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মাদকের কোনো মামলা ছিল না।

বাসায় প্রবেশ থেকে শুরু করে বেরিয়ে যাওয়া পর্যন্ত সময়টি ছিল ৫ থেকে সাত মিনিট। এরপর সারাদিন খোঁজ খবর করে বখতিয়ার মেম্বারের হদিস পাননি স্বজনরা।

বখতিয়ার মেম্বারের শ্যালক মাহমুদুল করিম বলেন, পরের দিন আমরা খোঁজাখুঁজি করি। উখিয়া থানায় গেলাম বললো এখানে আনা হয়নি। টেকনাফ থানায় যাই কিন্তু আমাদের ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। আসরের সময় ওসি বলেন, কিছু হবে না, দেখি আমরা কি করতে পারি।

২৩ জুলাই, অর্থাৎ সেদিন সন্ধ্যার পর উখিয়ার বখতিয়ার মেম্বারের বাড়িতে আবারও আসেন টেকনাফের ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা আক্তার। এ দফায় ভেঙে ফেলা হয় ক্লস সার্কিট ক্যামেরা। তারপর চালানো হয় তল্লাশি।

বখতিয়ার মেম্বারের ছেলের বৌ বলেন, আমি বলি মহিলা পুলিশ কই? পুরুষরা কেন আমার শাশুড়ির হাত ধরতেছে। তিনি হজ করে এসেছেন। এই কথার বলার পরই ওসি প্রদীপ আমাকে এমন একটা চড় মারেন জীবনে আমি এরকম মার খাইনি কারো কাছ থেকে।

এদিকে রাত ১২টার দিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে টেকনাফের হ্নিলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। রাত আড়াইটার দিকে টেকনাফ ভয়েস নামের একটি ফেসবুক পেজ-এ এমন খবরও আসে। সেখানে যোগাযোগ করে পরিবার জানতে পারে বখতিয়ার মেম্বার ও মোহাম্মদ তাহের নামের দু’জনের মৃত্যু হয়েছে ‘বন্দুকযুদ্ধে’। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে আসে তাদের লাশ।

এর আগে ২৩ তারিখ রাতেই একটি মাদক মামলা দায়ের করা হয় টেকনাফ থানায়। আসামি করা হয় ১৫ জনকে। তারপর অস্ত্র মামলাসহ আরও একটি মামলা হয়। যাতে আসামি করা হয় বখতিয়ার মেম্বারের তিন ছেলেকে।

এবিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নিতে চায় বখতিয়ার মেম্বারের পরিবার। তারা বলছেন, ২৩ জুলাই ভোর রাতে নিয়ে যাওয়ার পর বখতিয়ার মেম্বারকে পুলিশেরই হেফাজত করার কথা ছিল। অভিযোগ, সেদিন সন্ধ্যায় পরের দফায় বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া জিনিষগুলোর অনেক কিছুই সিজার লিস্ট-এ নাই।

বখতিয়ার মেম্বারের ছেলের বউ বলেন, ওসি প্রদীপ দাশ নেয় ১৮ লাখ টাকা। ২ লাখ টাকা নেয় উখিয়া থানার ওসি মর্জিনা।

এবিষয়ে টেকনাফ থানায় যোগাযোগ করে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে এবিষয়ে টেলিফোনে কথা হয় উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মর্জিনা আক্তারের সঙ্গে।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মর্জিনা আক্তার বলেন, আমার এলাকা বলে থাকতে হয়েছে। ওটা টেকনাফ থানার ব্যাপার। ওরা ভালো বলতে পারবে। টাকা নিতে দেখছি। তবে আমি নেইনি। টাকার ব্যাগ দেখেছি ওখানে কতো ছিল আমি জানি না।

মানব পাচার ও রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে তালিকায় নাম ছিল ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত উখিয়ার বখতিয়ার মেম্বারের। তবে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায় ছিল না তার নাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here