ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু

0
467
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু

শেখ কাজিম উদ্দিন, বেনাপোল : বেনাপোল স্থলবন্দরে নতুন দিগন্তের দ্বার উম্মোচন করে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। রবিবার বেলা ১২ টার সময় ট্রেনটি বেনাপোলে পৌছালে কাস্টমস, বন্দর ও স্থানীয় বন্দর ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্মকর্তাবৃন্দ পতাকা উড়িয়ে দু’দেশের সহজিকরণ ব্যবসায়ীক বান্ধব ট্রেনকে স্বাগত জানান। পরে এক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে গাঁথা ফুলের মালার ফিতা কেটে নতুন দিগন্তের উদ্বোধন করেন বেনাপোল কাস্টমস হাউসের নবাগত কমিশনার আজিজুর রহমান।

দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে স্থলপথের পাশাপাশি এই প্রথম রেল পথে ভারত থেকে ২৫টি ফ্লাট ওয়াগনের মাধ্যমে ৫০টি কন্টেইনারে ৮ জন আমদানি কারকের ৬৪০ মে:টন গার্মেন্ট, কসমেটিক্সসহ বিভিন্ন প্রকারের পণ্য আমদানি হয়েছে। কন্টেইনার কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়ার এজেন্সি হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছে টিসিআই বাংলাদেশ লিঃ এবং এর ভেন্ডর পার্টনার এম এম ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ও ভারত কাস্টমস এর যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ও ভারতীয় রেলওয়ে এই সেবাটি বাস্তবায়ন করছে। এই কন্টেইনার মুভমেন্ট’র ফলে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যক সম্পর্ক যেমন উন্নয়ন হবে ঠিক তেমনি দুই দেশের ব্যবসায়িগণও উপকৃত হবে বলে আশাবাদ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের কমিশনার আজিজুর রহমান বলেন, বেনাপোলের উন্নয়নের জন্য প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম বেনাপোল হয়ে ভারত-বাংলাদেশ যাত্রী ট্রেন চলাচল শুরু করেছিলেন। আজ তারই ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তার বলয়ে দ্রæত ও কম খরচে বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য বেনাপোলে নতুন দিগন্তের দ্বার উম্মোচন হলো।

এসময় তিনি আরো বলেন, কোভিড-১৯ করোনার শুরুতে উভয় দেশের আমদানি রফতানি বানিজ্য ব্যহত হচ্ছিল। আজ কন্টেইনারের মাধ্যমে আমদানি বানিজ্য শুরু হওয়ায় আমাদের ষ্টক হোল্ডারসহ সকল ব্যবসায়িদের বানিজ্য সম্প্রসারণে নতুন দিগন্তের সুচনা হলো। এতে ব্যবসায়ীদের সময় ও খরচ যেমন বাঁচবে তেমনি যথেষ্ট নিরাপত্তাও রয়েছে। এসাথে ভারত থেকে রেলযোগে মালামাল আসলে আমাদের রেলখাতে উন্নয়ন হবে। বন্দর একটি চার্জ পাবে। ব্যবসায়িদের খরছ কম হবে। আগে সাধারন রেলে পণ্য এসেছে ভারত থেকে। এখন থেকে কন্টেইনারের মাধ্যেমে পণ্য আসা শুরু হলো।

বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় গত ২২ মার্চ থেকে বেনাপোল বন্দরের রেল ও স্থল পথে দু’দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে প্রায় ৫ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়ে থাকে। তদ্রæপ, বেনাপোল বন্দরেও ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় আটকা পড়ে রফতানিমুখী পণ্যবাহী ট্রাক। টানা আড়াই মাস ধরে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা মারাত্বকভাবে লোকশানের কবলে পড়ে। ভারতে লকডাউন শিথিল হলে দেশের অন্যন্য বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য শুরু হলেও ভারতীয়দের বাঁধার মুখে কোনভাবে এপথে বাণিজ্য শুরু হচ্ছিলনা। অবশেষে দুই দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আন্তরিকতায় বিকল্প মাধ্যম হিসেবে সাইড ডোর কন্টিনিয়ারে পণ্য আমদানির আলোচনা হয়। যার ধারাবাহিকতায় ভারত থেকে আমদানি পণ্য নিয়ে কন্টেইনার ট্রেন চলে আসায় বেনাপোলে নতুন দিগন্তের উম্মোচন হলো।

এসময় বেনাপোল সিএন্ডএফ স্টাফ এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, স্থলপথে ট্রাকে আমদানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা ভারতীয় কিছু সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মী ছিল। তাদের চাঁদাবাজিতে যেমন আটকে থাকা ট্রাকে লোকশানের শিকার হতে হতো তেমনি দ্রæত পণ্য খালাসে বিলম্ব হতো। রেল পথে পণ্য আমদানিতে এ হয়রানি থেকে ব্যবসায়ীরা মুক্তি পাবে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, করোনা প্রাদূর্ভাবের কারনে ট্রাকে করে ভারত থেকে চাহিদামত পন্য আমদানি করা সম্ভব হচ্ছিলনা। এখন কন্টেইনার ট্রেনে পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীরা যেমন উপকৃত হবে তেমনি সরকারেরও বিপুল পরিমানে রাজস্ব বাড়বে।

বেনাপোল রেলওয়ের ষ্টেশন মাস্টার সাইদুর রহমান জানান, এই প্রথম সাইড ডোর রেল কন্টেইনারের মাধ্যমে পণ্য আমদানি হলো। এতে এপথে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বাড়বে। এছাড়া এই পণ্য আমদানির মাধ্যমে পণ্যবাহি কন্টেইনার প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ে ৬৪৪০ টাকা পাবে। এবং খালি কন্টেইনার ফিরে যাওয়ার সময় রেল কর্তৃপক্ষ পাবে কন্টেইনার প্রতি ৪৫৭৫ টাকা। সবমিলিয়ে এই পণ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ের ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা রাজস্ব আহরন হয়েছে। এভাবে যদি ব্যবসায়ীরা রেলপথে আমদানি বাণিজ্য অব্যাহত রাখে তাহলে দিনে দিনে রেলের রাজস্ব আরো বাড়বে।

বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক(ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, ব্যবসায়ীরা এখন থেকে ইচ্ছে করলে সব ধরনের পণ্য কন্টেইনার রেলের মাধ্যমে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি করতে পারবেন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন বেনাপোল কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার শহিদুল ইসলাম, স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক আব্দুল জলিল, সিএন্ডএফ এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান স্বজন, কাস্টম বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ¦ নাসির উদ্দিন, ব্যবসায়ীক নেতা মেহেরুল্লাহ মেম্বর প্রমুখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here