সিলগালার কাজ চলছে রিজেন্টের মূল কার্যালয়ের

0
389
সিলগালার কাজ চলছে রিজেন্টের মূল কার্যালয়ের

খবর৭১ঃ ঢাকার উত্তরায় রিজেন্টের মূল কার্যালয় সিলগালা করার কাজ চলছে। রোগীদের স্থানান্তরের পর সিলগালা হবে হাসপাতাল দুটিও। র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যেহেতু রিজেন্টের প্রধান কার্যালয় থেকেই অপকর্মগুলো হতো, সে কারণে এটি সিলগালা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

গতকাল সোমবার রাতেই মো. সাহেদের মালিকানাধীন হাসপাতাল থেকে অননুমোদিত র‌্যাপিড টেস্টিং কিট ও একটি গাড়ি জব্দ করা হয়।

র‌্যাব জানিয়েছে, ওই গাড়িতে ফ্ল্যাগ স্ট্যান্ড ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্টিকার লাগানো ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনের চোখে ধুলো দিতেই তিনি এ কাজ করতেন বলে জানিয়েছে তারা।

তবে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। আজ মঙ্গলবার মামলা হওয়ার কথা।

গতকাল রাত ১১টার দিকে রিজেন্টে অভিযান শেষে র‌্যাব কর্মকর্তারা বলেন, করোনায় সংক্রমিত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে মামলার প্রস্তুতি চলছে। এর আগে বেলা দুইটা থেকে র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলমের নেতৃত্বে একটি দল প্রথমে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর সড়কে অবস্থিত রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। সেখান থেকে আটজনকে আটকের পর র‍্যাবের দলটি মিরপুরে রিজেন্টের অন্য শাখায় অভিযান পরিচালনা করে।

গতকাল রাত ১১টার দিকে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‌‘আমরা নিয়মিত মামলা করতে যাচ্ছি। এই মামলার এক নম্বর আসামি হবেন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ। এখন পর্যন্ত র‍্যাব চারজন আসামির সম্পৃক্ততা পেয়েছে।’

অভিযান চলার সময় র‍্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তিন ধরনের অভিযোগ ও অপরাধের প্রমাণ তাঁরা পেয়েছেন। প্রথমত, তারা করোনার নমুনা পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করত। এ ধরনের ১৪টি অভিযোগ র‌্যাবের কাছে জমা পড়ে, যার পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযান। দ্বিতীয়ত, হাসপাতালটির সঙ্গে সরকারের চুক্তি ছিল ভর্তি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার। সরকার এই ব্যয় বহন করবে। কিন্তু তারা রোগীপ্রতি লক্ষাধিক টাকা বিল আদায় করেছে (এ সময় সারোয়ার আলম গণমাধ্যমকর্মীদের বিলের নথি দেখান)। পাশাপাশি রোগীদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দিয়েছে—এই মর্মে সরকারের কাছে ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকার বেশি বিল জমা দেয়। সারোয়ার আলম বলেন, রিজেন্ট হাসপাতাল এ পর্যন্ত শ দুয়েক কোভিড রোগীর চিকিৎসা দিয়েছে।

সারোয়ার আলমের ব্রিফিং থেকে জানা যায়, রিজেন্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তৃতীয় অপরাধ হলো সরকারের সঙ্গে চুক্তি ছিল ভর্তি রোগীদের তারা কোভিড পরীক্ষা করবে বিনা মূল্যে। কিন্তু তারা আইইডিসিআর, আইটিএইচ ও নিপসম থেকে ৪ হাজার ২০০ রোগীর বিনা মূল্যে নমুনা পরীক্ষা করিয়ে এনেছে।

সারোয়ার আলম আরও জানান, অভিযানে দেখা গেছে, রিজেন্ট হাসপাতালের লাইসেন্স ২০১৪ সালে শেষ হয়ে যায়। এরপর আর লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। কীভাবে সরকার এমন একটি হাসপাতালের সঙ্গে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা চুক্তিতে গেল, তা খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

মো. সাহেদ তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গতকাল তিনি বলেন, তাঁর কখনো বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার কথা ছিল না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে তিনি বলেছিলেন, ১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা দিলে তিনি বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেবেন। ভুয়া পরীক্ষার ব্যাপারেও তিনি কিছু জানেন না। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার। এ নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।

অন্যদিকে, সারোয়ার আলম বলেন, র‌্যাব এমন একটি অভিযান চালাবে, তা টের পেয়েছেন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদ। অন্য কেউ তাঁর নামে এমন অপকর্ম করছেন, এমন মর্মে সাহেদ দিন দুয়েক আগে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সারোয়ার আলমের ভাষ্য, মূলত নিজের অপরাধ ঢাকতে জিডির আশ্রয় নিয়েছেন সাহেদ।

তবে রিজেন্ট হাসপাতালের নামে প্রতারণার অভিযোগ এবং সনদ না থাকলেও চুক্তি কেন করা হলো জানতে চেয়ে খুদে বার্তা দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের। উত্তর পাওয়া যায়নি অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক আমিনুল হাসানেরও।

সপ্তাহ কয়েক আগে জেকেজি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও পরীক্ষা না করে প্রতিবেদন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির অন্যতম কর্নধার আরিফুল চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তাঁর স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জেকেজির কার্যক্রম দেখতে গেছেন, সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল মুখে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

জেকেজি কী করে নমুনা পরীক্ষার অনুমোদন পেল, সে সম্পর্কেও অধিদপ্তর মুখ খোলেনি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here