ক্ষুধার চেয়ে করোনা ভালো

0
604
ক্ষুধার চেয়ে করোনা ভালো’

করোনা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিকভাবে বেসামাল হয়ে পড়েছে ভারত। করোনার কারণে দেশটিতে বেশ কয়েক দফা জারি করা হয়েছে লকডাউন। তবুও যেন কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না করোনা সংক্রমণ। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশ্ব তালিকায় আক্রান্তের দিক দিয়ে ভারত চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। তারপরও কর্মহীনরা পেটের টানে ফিরছেন কর্মস্থলে।

উত্তর প্রদেশের ৩০ লাখের বেশি অভিবাসী শ্রমিকরা লকডাউনের মধ্যেই কাজে ফিরছেন। তাদের কাছে ক্ষুধায় মরার চেয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ভালো। দেওরিয়া থেকে গোরক্ষপুর রেলওয়ে জংশনের বাস ধরার পথে সরকারি বাসস্ট্যান্ডে এমন কথাই বললেন শ্রমিকরা।

গোরক্ষপুর থেকে মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের বিশেষ ট্রেন চালু আছে। সেই ট্রেনে চড়তেই বাসের অপেক্ষায় দিবাকর প্রসাদ ও খুরশীদ আনসারি। মুম্বাইয়ে কাপড়ের বড় এক ফ্যাক্টরিতে কাজ করেন খুরশীদ। তার কারখানা এখনও বন্ধ। এক মাস আগে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। বাসে ওঠার আগে খুরশীদ এনডিটিভিকে বললেন, ‘উত্তর প্রদেশে যদি কাজ থাকতো, আমি ফিরে যেতাম না। আমার কোম্পানি এখনও চালু হয়নি। কিন্তু আমি ফিরে যাচ্ছি, কোনও একটা কাজ খুঁজে নেব। ক্ষুধার চেয়ে করোনা ভালো। করোনাভাইরাসে আমার সন্তানদের মৃত্যুর চেয়ে আমার মরা ভালো।’

কলকাতার একটি কোম্পানির টেকনিশিয়ান দিবাকর। হলি উদযাপনের জন্য বাড়ি ফিরেছিলেন কিন্তু লকডাউনে আটকে পড়েন উত্তর প্রদেশে। তার কোম্পানি খুলেছে। পাঁচ সন্তান ও এক স্ত্রীসহ ৭ জনের পরিবারের খাওয়া-পড়ার ব্যবস্থা করতে ফিরে যাচ্ছেন। দিবাকর বলেছেন, ‘আমি ভীত কিন্তু এখানে থাকতেও আতঙ্ক ঘিরে ধরছে। আমি খাব কী, আর আমার পরিবারকে খাওয়াব কী?’

দিবাকর-খুরশীদরা কাজে ফিরে যাচ্ছেন। যদিও মনরেগা প্রকল্পের অধীনে উত্তর প্রদেশে ফেরা শ্রমিকদের কাজের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি ক্ষুদ্র শিল্পে প্রায় ৬০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে বলে শনিবার রাজ্য সরকার দাবি করেছে। তারপরও দিল্লি, মুম্বাইয়ে ফিরছে লাখ লাখ শ্রমিক।

সরকারের এই প্রতিশ্রুতি দূরবর্তী অঞ্চলে পৌঁছায়নি বললেন এসি টেকনিশিয়ান মোহাম্মদ আবিদ, ‘মুম্বাইয়ে অনেক টাকা। এখানে এত টাকা পাব না। যদি কোনো প্রকল্প নেওয়াও হয়, সেগুলো আমাদের কাছে পৌঁছায়নি। মনে হচ্ছে বেকার হয়ে আছি। এখানে কোনো কাজ নেই। যার কাছেই যান, শুনতে হবে কাজ নেই।’

ভারতে গত ২৪ করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫ লাখ ২৮ হাজার ৮৫৯ জনে দাঁড়িয়েছে। আর একদিনে মারা গেছেন ৪১০ জন কোভিড রোগী। এ নিয়ে দেশটিতে মোট মৃত্যু হয়েছে ১৬ হাজার ৯৫ জনের।

গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহান শহরে করোনা শনাক্ত হয়। বর্তমানে এটি বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বে মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কোটি ছাড়িয়েছে। আর মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে পাঁচ লাখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here