জি কে গউছের সংগ্রামী জীবনের ৫২তম জন্ম দিন ২০ এপ্রিল

0
654
জি কে গউছের সংগ্রামী জীবনের ৫২তম জন্ম দিন ২০ এপ্রিল

মঈনুল হাসান রতন হবিগঞ্জঃ

বৈচিত্রপূর্ণ, বর্ণাঢ্য ও সংগ্রামী জীবনের অধিকারী টানা ৩ বারের নির্বাচিত হবিগঞ্জ পৌরসভার পদত্যাগকারী মেয়র আলহাজ্ব জি কে গউছের ৫২ তম জন্ম দিন কাল ২০ এপ্রিল। ১৯৬৮ সালের এই দিনে তিনি হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। তার পিতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব গোলাম মর্তুজা লাল মিয়া ও মাতা আলহাজ্ব মঞ্জিলা বেগম।
আলহাজ্ব জি কে গউছ একটি আন্দোলনের নাম, একটি সংগ্রামী চেতনার নাম। ৫২ বছরের জীবনে তিনি বিভিন্ন সময়ে ১৩শ ৪৭ দিন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে কারাভোগ করেছেন। হবিগঞ্জের বহু চড়াই-উৎড়াইয়ের সাথে এই নামটি সম্পৃক্ত। জনসেবা আর উন্নয়ন দিয়ে যে মানুষটি হবিগঞ্জবাসীর হৃদয়ের মনিকোটায় স্থান করে নিয়েছেন তার নাম জি কে গউছ। যার প্রমাণ ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ পৌরবাসী দিয়েছেন। কারাগারে থেকেও নিজের যোগ্যতা আর নেতৃত্বের জানান দিতে সক্ষম হয়েছেন জি কে গউছ। পৌরবাসীর ভোটে টানা ৩ বার হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নির্বাটিত হয়েছেন। সরকারী দল পরিচালনায় এবং বিরোধী দলে থেকে সরকার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথ সরব রেখে দলীয় ফোরামেও নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন।

দলের প্রতি আনুগত্য আর দলীয় হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান দেখাতে পৌর মেয়রের পদ ছাড়তেও তিনি দিধাবোধ করেননি। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৩ আসন থেকে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন। এই নির্বাচনে অংশ নিতে পদত্যাগ করেন হবিগঞ্জ পৌরসভার এই জনপ্রিয় মেয়রকে। এই নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কাছে তিনি পরাজিত হলেও হবিগঞ্জ সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জের মানুষের হৃদয়ে তিনি ঠাই করে নিয়েছেন। মানুষের ভালবাসায় তিনি সিক্ত হয়েছেন। তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলে মানুষ জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেলেন, আর দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বুঝিয়ে দেন “তুমিই আমাদের প্রতিনিধি”।
১৯৮৪ সালে তিনি এসএসসি পাশ করে ভর্তি হন হবিগঞ্জ বৃন্দাবন সরকারী কলেজে। একই কলেজ থেকে তিনি বিএ পাশ করেন। কলেজে ভর্তি হওয়ার পরপরই তার উপর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কলেজ শাখার সারারণ সম্পাদকের দায়িত্ব অর্পিত হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি তখন জি কে গউছের মধ্যে ফুটে উঠে বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রতিভা।

১৯৮৭ সালে তিনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল হবিগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন। একটানা ৫ বছর তিনি ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ সালে জি কে গউছ হবিগঞ্জ পৌর যুবদলের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৫ সালে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক এবং ৯৬ সালে যুবদলের কেন্দ্রীয় সদস্য নির্বাচিত হন। ভলিষ্ট নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি হবিগঞ্জ জেলায় যুবদলকে সু-সংগঠিত করেন। এরই ফলশ্র“তিতে তিনি জেলা যুবদলের সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে যুবদলের কেন্ত্রীয় সহ-সমবায় বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন জি কে গউছ।

২০০৪ সালে বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমানের উপস্থিতিতে ঢাকাস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হবিগঞ্জ জেলার সকল থানা ও পৌর কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের গোপন ভোটে জি কে গউছ হবিগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
২০১১ সালে তিনি ২য় বারের মত হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন জি কে গউছ। পরে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সমবায় বিষয়ক সম্পাদক মনোনীত হন। এর পর থেকে তিনি বিভিন্ন ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত সফলতার সাথে এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহŸায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।
বিএনপি’র বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ, ৫ বারের অর্থমন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমানের সাথে ছিল জি কে গউছের অত্যান্ত ঘনিষ্ট সম্পর্ক। ফলে রাজনীতির পাশাপাশি হবিগঞ্জ জেলার উন্নয়নে আলহাজ্ব জি কে গউছ মনোনিবেশ করেন। তিনি হবিগঞ্জ পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পূর্বেই হবিগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেন।
২০০৪ সালে জি কে গউছ হবিগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জীবনের প্রথম এই নির্বাচনে অংশ নিয়েই তিনি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে হবিগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। নির্বাচিত হওয়ার পর মাত্র ২ বছর ক্ষমতায় ছিল তার রাজনৈতিক দল বিএনপি। দুই বছরে হবিগঞ্জ পৌর এলাকায় যে উন্নয়ন হয়েছিল তা যে বিগত ২৫ বছরেও হয়নি সে কথা স্বীকার করেন তার শত্র“পক্ষের লোকেরাও।
পৌরসভার প্রধান সড়কে রোড ডিভাইডার করা ছিল কঠিনতর একটি কাজ। বগলা বাজার ও চৌধুরী বাজার এলাকায় রাস্তা প্রশস্তকরণ ছিল আরও বেশি কঠিন। যে এলাকার প্রতি ইঞ্চি জায়গার মূল্য লাখ টাকারও বেশি, আলহাজ্ব জি কে গউছের অনুরোধে সেখানকার ব্যবসায়ীরা নিজেদের দোকান ভিটা ভেঙ্গে দিয়েছেন রাস্তা প্রশস্তকরনের জন্য। যারা আলহাজ্ব জি কে গউছকে নির্বাচিত করতে প্রকাশ্যে বলিষ্ট ভূমিকা রেখেছেন তাদের দোকান ভাঙ্গা হয়েছে সবার আগে। তাতে আলহাজ্ব জি কে গউছের নিরপেক্ষতা, স্বচ্ছতা এবং ভালো কোনো কিছু করার জন্য সদিচ্ছাই যতেষ্ট, তারই প্রতিফলন ঘটে।

চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর দলমত ও ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল স¤প্রদায়ের উন্নয়ন ছিল তার চোখে পড়ার মতো। ৫ বছর পর আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে মেয়র নির্বাচনে ভোটাররাও এর প্রতিদান দিয়েছেন। যেখানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা কোনো ভোট আশাও করেন না, ঠিক সেখানে জি কে গউছ ভোট পেয়েছেন আওয়ামীলীগ প্রার্থীর চেয়ে দ্বিগুন।
২০১১ সালের ১৮ জানুয়ারী ২য় বারের মত মেয়র নির্বাচিত হন জি কে গউছ। শত প্রতিকুলতার মধ্যেও বিপুল ভোটে তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়ে জনগনের সেবায় নিজেকে উৎসর্গিত করেন। দীর্ঘ দিনের অবহেলিত এবং পায়জামা শহর হিসেবে খ্যাত হবিগঞ্জ পৌরসভাকে একটি মডেল পৌরসভায় রুপান্তর করতে তিনি দিন রাত কাজ করেছেন। ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে তিনি হবিগঞ্জ শহরের চেহারা পাল্টিয়ে দেন।

মেয়র জি কে গউছের প্রচেষ্টায় শহরের রোড ডিভাইডার স্থাপন, খোয়াই নদীর মাছুলিয়ায় এম সাইফুর রহমান ব্রীজ, শহরের কামড়া

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here