মদনে জোবাইদা রহমান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

0
979
মদনে জোবাইদা রহমান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ

খবর৭১ঃ

আব্দুল আওয়ালঃ নেত্রকোণার মদন উপজেলার জোবাইদা রহমান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ করেছেন গভর্নিং বডির ৪ সদস্য। কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি স্থানীয় এমপি থাকায় তার দোহাই দিয়েই কোন ধরনের সভা, রেজুলেশন ছাড়াই সমস্ত কাজ করে যাচ্ছেন।

অভিযোগে জানা যায়, কলেজের গভর্নিং বডি গঠনের প্রথম সভায় অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন কলেজের নামে ৬৫ হাজার টাকা ঋণ গ্রস্থ দেখান। কিন্তু ২০১৭ সালে ৯ অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২ বছর ৪ মাসে ব্যাংক থেকে নিয়ম বর্হিভূতভাবে ৩৮ লাখ ৬২ হাজার ৯শ’ ৯ টাকা অধ্যক্ষ উত্তোলন করেন। এ পর্যন্ত তিনি গর্ভনিং বডির কোন সভা করেননি। অধ্যক্ষ সাহেবকে বারবার কলেজের হিসাব প্রদানের জন্য তাগিদ দেয়ার পরও কলেজের যাবতীয় আয়-ব্যয় সম্পর্কে গভর্নিং বডির প্রতিনিধিদের পাস কাটিয়ে এককভাবে হিসাব পরিচালনা করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগে জানানো হয়, ৪ মাস অন্তর অন্তর গভর্নিং বডির সভা করার নিয়ম থাকলেও তিনি তা মানছেন না। গভর্নিং বডি গঠনের পর হতে অদ্যবধি প্রায় আড়াই বছর যাবত অধ্যক্ষ সাহেব কোন হিসাব নিকাশ গভর্নিং বডির নিকট পেশ করেন নি।

এমনকি অভ্যন্তরীণ অডিট কমিটি গঠনের প্রায় ২ বছর অতিক্রম হলেও অডিট কার্যক্রম করতে দেন নি। রেজুলেশন ছাড়া কলেজের ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন। বিষয়টি লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে গভর্নিং বডির সভাপতি এমপি রেবেকা মমিনকে অবগত করা হয়েছে। এমপি মহোদয় গভর্নিং বডির সভাপতি থাকায় সব কিছুতেই তিনি এমপির দোহাই দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এ গভর্নিং বডি (সংশোধিত) সংবিধি-২০১৫ এর ধারা ৪ অনুযায়ী গভর্নিং বডির ১৫ সদস্য বিশিষ্ট হওয়ার কথা থাকলেও হিতৈষী প্রতিনিধি ও চিকিৎসক (কো-অপ্টেড) না নেওয়াতে তা ১৩ সদস্য বিশিষ্ট হয়েছিল। ২ জন দাতাদের মধ্যে নির্বাচিত সদস্যের মৃত্যু হওয়াতে ২য় দাতা সদস্যকে অর্ন্তভূক্তি না করা ও শিক্ষক প্রতিনিধি নিয়োগ না দেয়ায় বর্তমানে গভর্নিং বডির সদস্য মাত্র ৮ জন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী, নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ও অধ্যক্ষের মধ্যে কার্য বন্টনের অফিস আদেশ নিয়ে অভিযোগ নিষ্পত্তি না করা। নিম্নমান সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর নিপা আক্তারকে এমপিও ভূক্তির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রদান না করায় পদটি শূন্য হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক মনোনীত বিদ্যোৎসাহী প্রতিনিধি জেলা পরিষদ সদস্য আয়শা আক্তার জানান, অধ্যক্ষ সাহেব নিয়োগ, সভা, টাকা উত্তোলন কোন কিছুর ক্ষেত্রেই আমাদেরকে অবগত করেন না।

উনার নিজের মত করেই সবকিছু করে থাকেন। অভিভাবক প্রতিনিধি আবু তাহের আজাদ জানান, গভর্নিং বডি গঠনের পর থেকে একটি মাত্র সভা করে ৬৫ হাজার টাকা কলেজের নামে ঋণ দেখান। কিন্তু পূবালী ব্যাংক মদন শাখার ব্যাংক হিসাব বিবরণীতে দেখা গেছে তিনি ২০১৭ সালে ৯ অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২ বছর ৪ মাসে ব্যাংক থেকে কোন রেজুলেশন ছাড়াই ৩৮ লাখ ৬২ হাজার ৯শ’ ৯ টাকা নিয়ম বর্হিভূতভাবে উত্তোলন করেছেন। সঠিক তদন্ত করে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানাই। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ওয়ালীউল হাসান জানান, এ ব্যাপারে কলেজের গভর্নিং বডির সদস্যদের নিকট থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অচিরেই তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য প্রেরণ করা হবে। অধ্যক্ষ মো. আনোয়ার হোসেন জানান, ব্যাংকে এত টাকা নাই।

যে টাকা উত্তোলন করেছি গভর্নিং বডির সভাপতি ও আমার যৌথ স্বাক্ষরেই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। রেজুলেশন করা হয়েছে গভর্নিং বডির সদস্যদের স্বাক্ষর নেয়া হবে। তবে বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। এ ব্যাপারে গভর্নিং বডির সভাপতি সদস্য স্থানীয় এমপি রেবেকা মমিনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলার একমাত্র মহিলা কলেজটিকে আমি অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন করেছি। এর মধ্যে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ থাকলে বিষয়টি দুঃখজনক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here