ঈদ উপলক্ষে কেরানীগঞ্জে চলছে লক্কড়-ঝক্কড় লঞ্চ মেরামতের ধুম

0
610

খবর৭১:রাজধানীর সঙ্গে ভালো সড়ক যোগাযোগ না থাকায় ঈদে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বাড়ি ফেরার একমাত্র উপায় হয়ে ওঠে নৌপথ। এ জন্য লঞ্চই হয়ে ওঠে তাদের একমাত্র ভরসা। ঈদের সময় ভিড়ের কারণে লঞ্চের চাহিদাও বেড়ে যায় অনেক। এ সুযোগে ঝুঁকিপূর্ণ লক্কড়-ঝক্কড় লঞ্চে রঙ লাগিয়ে নদীতে নামায় এক শ্রেণির লঞ্চ মালিক। এবারও কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন ডকইয়ার্ডে চলছে পুরনো, ফিটনেসবিহীন লঞ্চের মেরামত ও রঙের কাজ।

বুড়িগঙ্গা নদীতীরে কেরানীগঞ্জের তেলঘাট থেকে মীরেরবাগ পর্যন্ত ২৭টি ডকইয়ার্ড রয়েছে। এসব ডকইয়ার্ড ঘুরে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে অনেক মালিক লঞ্চ ডকইয়ার্ডে ওঠানোর জন্য দুই মাস আগেই টাকা দিয়ে রেখেছে। প্রায় সব ডকইয়ার্ডেই বিভিন্ন নৌযান সংস্কার ও রঙের কাজ চলছে।

সরেজমিন রহমান মিয়ার ডকইয়ার্ড, অগ্রগতি ডকইয়ার্ড অ্যান্ড শিপ বিল্ডার্স, শরিফুল্লাহ ডকইয়ার্ড, ছাত্তার খান ডকইয়ার্ড, লার্ট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ডকইয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, এসব ডকইয়ার্ডে এমভি জামাল-৭, নিউ সাব্বির-২, মর্নিংসান-৭, ফারহান-৩, পারাবাত-১০, পারাবাত-১২, এমভি প্রিন্স আওলাদ-৭, এমভি সাবের খান-২, রাসেল-২, রাসেল-৩, জামাল-১, এমভি ঝান্ডা-২, এমভি জাহিদ-৮সহ কয়েকটি লঞ্চের মেরামত চলছে।

অগ্রগতি ডকইয়ার্ডে মেরামতের জন্য রাখা ঢাকা-ভাণ্ডারিয়া রুটের মর্নিংসান-৯ লঞ্চের শুকানি মোজাম্মেল হক জানান, লঞ্চটির নিচের প্লেট ও ইঞ্জিন চেক করা হচ্ছে। কোথাও সমস্যা থাকলে মেরামত করা হবে। আর লঞ্চটির সৌন্দর্য বাড়াতে রঙ করা হচ্ছে।

ফারহান-৩ লঞ্চের কেরানী রহিম মিয়া জানান, সবাই ঈদের সময় লঞ্চ নতুন করতে চায়। এ জন্য প্রায় এক মাস আগে লঞ্চটি ডকইয়ার্ডে আনা হয়েছে। লঞ্চের বিভিন্ন সংস্কারের পর রঙ করা হবে।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ৪৩টি রুটে শতাধিক লঞ্চ চলাচল করে। এসব লঞ্চে হাজার দশেক ভিআইপি, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কেবিন রয়েছে। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার যাত্রী এসব রুটে চলাচল করে। ঈদ মৌসুমে ওই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজারে। এ সময় অতিরিক্ত মুনাফার লোভে কিছু অসাধু মালিক লক্কড়-ঝক্কড়, চলাচলে অনুপযোগী লঞ্চ কোনো রকমে মেরামত ও রঙ করে পানিতে নামায়।

তবে অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল সংস্থার (জাব) সিনিয়র সহসভাপতি বদিউজ্জামান বাদল বলেন, সদরঘাট থেকে চলাচলকারী লঞ্চগুলোর কাগজপত্রে কোনো ত্রুটি নেই। ঈদের আগে লঞ্চগুলো চেক হয়। কোনো ত্রুটি থাকলে তা ডকইয়ার্ডে নিয়ে ঠিক করা হয়। পরে লঞ্চগুলো রঙ করা হয়। আর রঙ করা থাকলে লঞ্চের লোহার বডিও ভালো থাকে। লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, যথেষ্ট তদারকির ব্যবস্থা থাকায় ঈদে লঞ্চ দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই।

বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, লক্কড়-ঝক্কড় লঞ্চ নদীতে নামতে দেওয়া হবে না। ঈদের ১০ দিন আগে থেকে কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে থাকবে। র‌্যাব, পুলিশ, আনসারসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য থাকবে। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে কোনো লঞ্চ চলতে না দিতে কঠোর নজরদারি থাকবে।

তিনি আরও বলেন, পুরনো লঞ্চগুলোতে রঙ বা মেরামত করে নতুনভাবে নামানোর কোনো সুযোগ নেই। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর লঞ্চের বিশেষ সার্ভিস বাড়ানো হয়েছে। তাই ঘাটতি থাকবে না। যেসব লঞ্চ যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে রঙ করা হচ্ছে, সেগুলোর দিকে আরও বেশি নজর রাখা হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here